পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাজর্ষি Գ8@ బ్ధాల్లో “কোথায় যাইতে হইবে ?” রঘুপতি । সে কথা পরে হইবে। আপাতত আমার সঙ্গে বাহির হইয়া পডো । གྱུ་ལ་ ཡོ་ বেশ আছি।” রঘুপাত । বেশ ! তুমি রাজবংশে জন্মিয়াছ, তোমার পূর্বপুরুষেরা সকলে রাজত্ব করিয়া ਜ রঘুপতি তীব্ৰ বাক্যে ও তীক্ষ কটাক্ষে প্রমাণ করিয়া দিলেন যে, নক্ষত্ররায় ভালো নাই। নক্ষত্ররায়ও রঘুপতির মুখের তেজে কতকটা সেইরকমই বুঝিলেন । তিনি বলিলেন, “বেশ আর কী এমনি আছি ! কিন্তু আর কী করিব ? উপায় কী আছে ?” রঘুপতি। উপায় ঢের আছে— উপায়ের অভাব নাই। আমি তােমাকে উপায় দেখাইয়া দিব, তুমি আমার সঙ্গে চলো । নক্ষত্ররায় । একবার দেওয়ানজিকে জিজ্ঞাসা করি । রঘুপতি । না । নক্ষত্ররায় । আমার এই-সব জিনিসপত্ররঘুপতি । কিছু আবশ্যক নাই। নক্ষত্ররায় | লোকজনরঘুপতি । দরকার নাই। নক্ষত্ররায় । আমার হাতে এখন যথেষ্ট নগদ টাকা নাই । রঘুপতি । আমার আছে। আর অধিক ওজর আপত্তি করিয়ো না । আজ শয়ন করিতে যাও, কাল প্ৰাতঃকালেই যাত্ৰা করিতে হইবে । বলিয়া রঘুপতি কোনো উত্তরের অপেক্ষা না করিয়া চলিয়া গেলেন । তাহার পরদিন ভোরে নক্ষত্ররায় উঠিয়াছেন। তখন বন্দীরা ললিত রাগিণীতে মধুর গান গাহিতেছে। নক্ষত্ররায় বহির্ভবনে আসিয়া জানলা হইতে বাহিরে চাহিয়া দেখিলেন । পূর্বতীরে সূর্যোদয় হইতেছে, অরুণরেখা দেখা দিয়াছে । উভয় তীরের ঘন তরুস্রোতের মধ্য দিয়া, ছোটো ছোটো নিদ্রিত গ্রামগুলির দ্বারের কাছ দিয়া ব্ৰহ্মপুত্র তাহার বিপুল জলরাশি লইয়া অবাধে বহিয়া যাইতেছে। প্রাসাদের জানলা হইতে নদীতীরের একটি ছোটাে কুটির দেখা যাইতেছে। একটি মেয়ে প্রাঙ্গণ ঝাট দিতেছে- একজন পুরুষ তাহার সঙ্গে দুই-একটা কথা কহিয়া মাথায় চাদর বাধিয়া, একটা বড়ো বীশের লাঠির অগ্রভাগে পুঁটুলি বাধিয়া, নিশ্চিন্তমনে কোথায় বাহির হইল। শ্যামা ও দোয়েল শিস দিতেছে, বেনে-বউ বড়ো কঁঠাল গাছের ঘন পল্লবের মধ্যে বসিয়া গান গাহিতেছে। বাতায়নে দাড়াইয়া বাহিরের দিকে চাহিয়া নক্ষত্ররায়ের হৃদয় হইতে এক গভীর দীর্ঘনিশ্বাস উঠিল, এমন সময়ে পশ্চাৎ হইতে রঘুপতি আসিয়া নক্ষত্ররায়কে স্পর্শ করিলেন। নক্ষত্ররায় চমকিয়া উঠিলেন। রঘুপতি মৃদুগভীর স্বরে কহিলেন, “যাত্রার সমস্ত প্ৰস্তুত ।” নক্ষত্ররায় জোড়হাতে অত্যন্ত কাতর স্বরে কহিলেন, “ঠাকুর, আমাকে মাপ করো। ঠাকুর— আমি কোথাও যাইতে চাহি না । আমি এখানে বেশ আছি।” রঘুপতি একটি কথা না বলিয়া নক্ষত্ররায়ের মুখের দিকে তাহার অগ্নিদৃষ্টি স্থির রাখিলেন । নক্ষত্ররায় চোখ নামাইয়া কহিলেন, “কোথায় যাইতে হইবে ?” রঘুপতি । সে কথা এখন হইতে পারে না । নক্ষত্র । দাদার বিরুদ্ধে আমি কোনো চক্রান্ত করিতে পারিব না । রঘুপতি জ্বলিয়া উঠিয়া কহিলেন, “দাদা তোমার কী মহৎ উপকারটা করিয়াছেন শুনি ।” নক্ষত্র মুখ ফিরাইয়া জানালার উপর আঁচড় কাটিয়া বলিলেন, “আমি জানি, তিনি আমাকে ভালোবাসেন ।” রঘুপতি তীব্র শুষ্ক হাস্যের সহিত কহিলেন, “হরি হরি, কী প্ৰেম ! তাই বুঝি নির্বিয়ে ধ্রুবকে