পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৯৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গ্রন্থপরিচয় NGł রাজা ও রানী ‘রাজা ও রানী’ ১২৯৬ সালের শ্রাবণে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় । প্রথম সংস্করণ ও অধুনাপ্ৰচলিত (বিশ্বভারতী পুনরমুদ্রণ, ১৩৩৪) সংস্করণের মধ্যে কতকগুলি প্ৰভেদ সাধারণ ভাবে নির্দেশ করা গেল । স্থানে স্থানে সামান্য পরিবর্তন ব্যতীত, প্রচলিত সংস্করণই রচনাবলীতে অনুসৃত হইয়াছে। প্রথম সংস্করণের প্রথম অঙ্কে পঞ্চম দৃশ্যে “নারায়ণী। মিছে না । ঢেঁকির স্বর্গেও সুখ নেই ।”- এই ছত্রের পর অতিথির প্রবেশ ও অতিথি (রামচরণ), নারায়ণী ও দেবদত্তের কথোপকথন ছিল । ইহা বর্তমানে নাই । বর্তমানে দ্বিতীয় অঙ্কের তৃতীয় দৃশ্যের শেষে যে ত্ৰিবেদীর প্রবেশ ও উক্তি আছে, প্রথম সংস্করণে তাহা সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র দৃশ্য (দ্বিতীয় অঙ্কের চতুর্থ দৃশ্য) ছিল । প্রথম সংস্করণের চতুর্থ অঙ্কের দ্বিতীয় দৃশ্য ছিল, জলন্ধর রণক্ষেত্রে বিক্রমদেবের শিবিরদ্বারে সুমিত্রা ও সেনাপতির কথোপকথন । শিবিরপ্রবেশাথিনী সুমিত্রাকে সেনাপতি বাধা দিতেছেন, ইহাই এই দৃশ্যে বর্ণিত ছিল । এই দৃশ্য বর্তমান সংস্করণে নাই । প্রথম সংস্করণের পঞ্চম অঙ্কের সপ্তম দৃশ্য ছিল কাশ্মীর প্রাসাদে রেবতী, যুদ্ধাজিৎ, প্রহরী ও চন্দ্রসেনের কথোপকথন । কুমারকে বন্দী করিবার উদ্যমে রেবতী যুধাজিৎকে উত্তেজিত করিতেছেন, ইহাই এই দৃশ্যের প্রধান বিষয় ছিল । এই দৃশ্য বর্তমান সংস্করণে নাই । প্রথম সংস্করণের পঞ্চম অঙ্কের দশম দৃশ্য ছিল কাশ্মীরে বৃদ্ধ করমচাঁদ, হনুমন্ত ও অন্যান্যের কথোপকথন । কুমার কাশ্মীরে ফিরিয়া আসিবেন, বিক্রমজিৎ স্বয়ং তাহাকে রাজটিকা পরাইবেন, এইরূপ সংবাদ শুনিয়া স্ত্রীপুরুষ-সাধারণের আনন্দপ্ৰকাশ ও উৎসবের আয়োজন এই দৃশ্যে বর্ণিত আছে । এই দৃশ্য বর্তমান সংস্করণে নাই । ইহা ছাড়া অন্যান্য দৃশ্যেও মাঝে মাঝে অংশবিশেষ পরিবর্জিত ও পরিবর্তিত । রাজা ও রানীর কাহিনী লইয়া কবি উত্তরকালে গদ্যনাট্য তপতী (১৩৩৬) রচনা করেন । তপতীর ভূমিকায় তিনি রাজা ও রানী সম্বন্ধে লিখিয়াছেন— “রাজা ও রানী আমার অল্প বয়সের রচনা, সেই আমার প্রথম নাটক লেখার চেষ্টা । “সুমিত্রা ও বিক্রমের সম্বন্ধের মধ্যে একটি বিরোধ আছে— সুমিত্রার মৃত্যুতে সেই বিরোধের সমাধা হয় । বিক্রমের যে প্রচণ্ড আসক্তি পূর্ণভাবে সুমিত্রাকে গ্রহণ করবার অন্তরায় ছিল, সুমিত্রার মৃত্যুতে সেই আসক্তির অবসান হওয়াতে সেই শান্তির মধ্যেই সুমিত্রার সত্য-উপলব্ধি বিক্রমের পক্ষে সম্ভব হল, এইটেই রাজা ও রানীর মূলকথা । “রচনার দোষে এই ভাবটি পরিস্ফুট হয় নি। কুমার ও ইলার প্রেমের বৃত্তান্ত অপ্রাসঙ্গিকতার দ্বারা নাটককে বাধা দিয়েছে এবং নাটকের শেষ অংশে কুমার যে অসংগত প্রাধান্য লাভ করেছে। তাতে নাট্যের বিষয়টি হয়েছে ভারগ্রস্ত ও দ্বিধাবিভক্ত । এই নাটকের অস্তিমে কুমারের মৃত্যু-দ্বারা চমৎকার-উৎপাদনের চেষ্টা প্ৰকাশ পেয়েছে- এই মৃত্যু আখ্যানধারার অনিবাৰ্য পরিণাম নয় । “অনেক দিন ধরে রাজা ও রানীর ক্রটি আমাকে পীড়া দিয়েছে। কিছুদিন পূর্বে শ্ৰীমান গগনেন্দ্রনাথ যখন এই নাটকটি অভিনয়ের উদযোগ করেন তখন এটাকে যথাসম্ভব সংক্ষিপ্ত ও পরিবর্তিত করে একে অভিনয়যোগ্য করবার চেষ্টা করেছিলুম। দেখলুম। এমনতরো অসম্পূর্ণ সংস্কারের দ্বারা সংশোধন সম্ভব নয় । তখনই স্থির করেছিলুম এ নাটক আগাগোড়া নুতন করে না লিখলে এর সদগতি হতে পারে না। লিখে বইটার সম্বন্ধে আমার সাধ্যমত দায়িত্ব শোধ করেছি।” m i তপতী-রচনার কিছুদিন পূর্বে রাজা ও রানী অভিনয়ের জন্য সংক্ষিপ্ত ও পরিবর্তিত করিবার