পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\9 CObr রবীন্দ্র-রচনাবলী বিশ্বম্ভর । কী জানি, কারা সব বলা-কওয়া করছিল। কেমন করে চারি দিকেই রটে গিয়েছে যে, চাতুর্মস্যের সময় গুরু আসবেন । পঞ্চক । ওহে বিশ্বম্ভর, বল কি ? আমাদের গুরু আসবেন নাকি ? সঞ্জীব । আবার পঞ্চক ! তোমার কাজ তুমি করো-না। পঞ্চক । ঘুণ। ঘুণ। ঘুণাপয় ঘুণাপয়জয়োত্তম । কিন্তু অধ্যাপকদের কারও কাছে শুনেছ কি ? মহাপঞ্চক কী বলেন ? বিশ্বম্ভর । তাকে জিজ্ঞাসা করাই বৃথা । মহাপঞ্চক কারও প্রশ্নের উত্তর দিয়ে সময় নষ্ট করেন না। আজকাল তিনি আর্যঅক্টোত্তরশত নিয়ে পড়েছেন- তার কাছে ঘেঁষে কে ! পঞ্চক । চলো-না ভাই, আচাৰ্যদেবের কাছে। যাই । তাকে জিজ্ঞাসা করলেইজয়োত্তম । আবার ! ফের ! পঞ্চক । ঘুণ। ঘুণ। ঘুণাপয় ঘুণাপয়জয়োত্তম । আমার তো উনিশ বছর বয়স হল- এর মধ্যে একবারও আমাদের গুরু এ আয়তনে আসেন নি। আজ তিনি হঠাৎ আসতে যাবেন এটা বিশ্বাস করতে পারি। নে । । সঞ্জীব । তোমার তর্কটা কেমনতরো হল হে জয়োত্তম ? উনিশ বছর আসেন নি বলে বিশ বছরে আসাটা অসম্ভব হল কোন যুক্তিতে ? বিশ্বম্ভর । তা হলে অঙ্কশাস্ত্রটাই অপ্ৰমাণ হয়ে যায় । তবে তো উনিশ পর্যন্ত বিশ নেই বলে উনিশের পরেও বিশ থাকতে পারে না । ক্ষু, অঙ্ক কেন, বিশ্বব্ৰহ্মাণ্ডটাও টিকে না। কারণ, যা এ মুহূর্তে ঘটে নিতা ও মুঠেই বা ঘটে কী করে । জয়োত্তম । আরে, ঐটেই তো আমার তর্ক। কে বললে ঘটে ? যা পূর্বে ঘটে নি তা কিছুতেই পরে ঘটতে পারে না । আচ্ছা, এসো, কিছু যে ঘটে। সেইটে প্রমাণ করে দাও । পঞ্চক । (জয়োত্তমের কাধে চড়িয়া) প্রমাণ ? এই দেখো প্ৰমাণ। ঘুণ ঘুণ ঘুণাপয় ঘুণাপয়— জয়োত্তম । আঃ পঞ্চক ! করা কী ! নোবো বলছি- আঃ নাবো । পঞ্চক । আমি যে তোমার কাধে চড়েছি সেটা প্রমাণ না করে দিলে আমি কিছুতেই নাবছি নে। ঘুণ ঘুণ ঘুণাপয় ঘুণাপয়— মহাপঞ্চকের প্রবেশ মহাপঞ্চক। পঞ্চক, তুমি বড়ো উৎপাত করছি। পঞ্চক । দাদা, এরাই গোল করছিল । আমি আরো থামিয়ে দেবার জন্যেই এসেছি। তাঁট তট তোতায় তোতায় স্ফটি স্বফট মহাপঞ্চক । তোমার নিজের কাজ অবহেলা করবার একটা উপলক্ষ জুটলেই তোমাকে সংবরণ করা অসম্ভব । - বিশ্বম্ভর । দেখুন, একটা জনশ্রুতি শুনতে পাচ্ছি, বর্ষার আরম্ভে আমাদের গুরু নাকি এখানে আসবেন । মহাপঞ্চক । আসবেন কি না তা নিয়ে আন্দোলন না করে যদিই আসেন তার জন্যে প্ৰস্তুত হও । পঞ্চক । তিনি যদি আসেন। তিনিই প্ৰস্তুত হবেন । এ দিক থেকে আবার আমরাও প্ৰস্তুত হতে গেলে হয়তো মিথ্যে একটা গোলমাল হবে । 岐 ፵ኒ মহাপঞ্চক । ভারি বুদ্ধিমানের মতোই কথা বললে ! পঞ্চক । অন্নের গ্রাস যখন মুখের কাছে এগোয় তখন মুখ স্থির হয়ে সেটা গ্ৰহণ করে- এ তো সোজা কথা । আমার ভয় হয়, গুরু এসে হয়তো দেখবেন, আমরা যে দিক দিয়ে প্রস্তুত হতে গিয়েছি সে দিকটা উলটাে। সেইজন্যে আমি কিছু করি নে।