পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অচলায়তন VOOS মহাপঞ্চক । পঞ্চক, আবার তর্ক ? পঞ্চক । তর্ক করতে পারি। নে বলে রাগ কর, আবার দেখি পারলেও রাগ ! মহাপঞ্চক । যাও তুমি । পঞ্চক । যাচ্ছি, কিন্তু বলো-না, গুরু কি সত্যই আসবেন ? মহাপঞ্চক । তার সময় হলেই তিনি আসবেন । [প্ৰস্থান সঞ্জীব । মহাপঞ্চক কোনো কথার শেষ উত্তর দিয়েছেন এমন কখনোই শুনি নি । জয়োত্তম । কোনো কথার শেষ উত্তর নেই বলেই দেন না । মুর্থ যারা তারাই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে, যারা অল্প জানে তারাই জবাব দেয় ; আর যারা বেশি জানে তারা জানে যে জবাব দেওয়া যায় না । পঞ্চক । সেইজন্যেই উপাধ্যায়মশায় যখন শাস্ত্র থেকে প্রশ্ন করেন তোমরা জবাব দাও, কিন্তু আমি একেবারে মুক হয়ে থাকি । জয়োত্তম । কিন্তু প্রশ্ন না করতেই যে কথাগুলো বল তাতেইপঞ্চক । হা, তাতেই আমার খ্যাতি রটে গেছে, নইলে কেউ আমাকে চিনতেই পারত না । বিশ্বম্ভর । দেখো পঞ্চক, যদি গুরু আসেন তা হলে তোমার জন্যে আমাদের সকলকেই লজ্জা পেতে হবে । সঞ্জীব । আটান্ন প্রকার আচমনবিধির মধ্যে পঞ্চক বড়োজের পাঁচটা প্রকরণ এতদিনে শিখেছে। পঞ্চক । সঞ্জীব, আমার মনে আঘাত দিয়ে না। অত্যুক্তি করছি। সঞ্জীব । অত্যুক্তি ! পঞ্চক। অত্যুক্তি নয় তো কী ! তুমি বলছি পাচটা শিখেছি। আমি দুটাের বেশি একটাও শিখি নি। তৃতীয় প্রকরণে মধ্যমাঙ্গুলির কোন পর্বটা কতবার কতখানি জলে ডুবোতে হবে সেটা ঠিক করতে গিয়ে অন্য আঙুলের অস্তিত্বই ভুলে যাই। কেবল একমাত্র বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠটা আমার খুব অভ্যাস হয়ে গেছে। হাসছ কেন ? বিশ্বাস করছ না বুঝি ? জয়োত্তম । বিশ্বাস করা শক্ত । পঞ্চক । সেদিন উপাধ্যায়মশায় যখন পরীক্ষা করতে এলেন তখন তাকে ঐ বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ পর্যন্ত দেখিয়ে বিস্মিত করবার চেষ্টায় ছিলুম, কিন্তু তিনি চোখ পাকিয়ে তর্জনী তুললেন, আমার আর এগোল না। বিশ্বম্ভর । না পঞ্চক, এবার গুরু আসার জন্যে তোমাকে প্ৰস্তুত হতে হবে । পঞ্চক । পঞ্চক পৃথিবীতে যেমন অপ্ৰস্তুত হয়ে জন্মেছে তেমনি অপ্ৰস্তুত হয়েই মরবে ; ওর ঐ একটি মহাদগুণ আছে, ওর কখনো বদল হয় না। সঞ্জীব । তোমার সেই গুণে উপাধ্যায়মশায়কে যে মুগ্ধ করতে পেরেছ তা তো বোধ হয় না। পঞ্চক । আমি তাকে কত বোঝাবার চেষ্টা করি যে, বিদ্যা সম্বন্ধে আমার একটুও নড়াচড় নেই— ঐ যাকে বল ধ্রুবনক্ষত্ৰ— তাতে সুবিধা এই যে, এখানকার ছাত্ররা কে কতদূর এগােল তা আমার সঙ্গে তুলনা করলেই বোঝা যাবে। জয়োত্তম । তোমার আশ্চর্য এই সুযুক্তিতে উপাধ্যায়মশায়ের বোধ হয়পঞ্চক । না, কিছু না- তার মনে কিছুমাত্র বিকার ঘটল না। আমার সম্বন্ধে পূর্বে র্তার যে ধারণা ছিল সেইটেই দেখলুম আরো পাকা হল। সঞ্জীব । আমরা যদি উপাধ্যায়মশায়কে তোমার মতন অমন যা-তা বলতুম তা হলে রক্ষা থাকত নী | কিন্তু পঞ্চকের বেলায় পঞ্চক । তার মানে আছে। কুতর্কটা আমার পক্ষে এমনি সুন্দর স্বাভাবিক যে, সেটা আমার মুখে ভারি মিষ্ট শোনায়। সকলেই খুশি হয়ে বলে, ঠিক হয়েছে, পঞ্চকের মতোই কথা হয়েছে। কিন্তু ঘোরতর বুদ্ধির পরিচয় না দিতে পারলে তোমাদের আদর নেই, এমনি তোমরা হতভাগ্য । জয়োত্তম । যাও ভাই পঞ্চক, আর বোকো না । আমরা চললুম। তুমি একটু মন দিয়ে পড়ো । [তিনজনের প্রস্থান