পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

లిe রবীন্দ্র-রচনাবলী পঞ্চক। প্ৰভু, কেন, তা আমি বলতে পারি নে। আমার পারবার উপায় নেই। আচার্য। সীেম্য, তুমি তো জানো, এখানকার যে নিয়ম সেই নিয়মকে আশ্রয় করে হাজার বছর হাজার হাজার লোক নিশ্চিন্ত আছে। আমরা যে-খুশি তাকে কি ভাঙতে পারি ? পঞ্চক । আচাৰ্যদেব, যে নিয়ম সত্য তাকে ভাঙতে না দিলে তার যে পরীক্ষা হয় না । আচার্য। নিয়মের জন্য ভয় নয়, কিন্তু যে লোক ভাঙতে যাবে তারই বা দুৰ্গতি ঘটতে দেব কেন ? পঞ্চক । আমি কোনো তর্ক করব না। আপনি নিজমুখে যদি আদেশ করেন যে, আমাকে সমস্ত নিয়ম পালন করতেই হবে তা হলে পালন করব । আমি আচার-অনুষ্ঠান কিছুই জানি নে, আমি আপনাকেই জানি । আচাৰ্য । আদেশ করব- তোমাকে ! সে আর আমার দ্বারা হয়ে উঠবে না । পঞ্চক। কেন আদেশ করবেন না প্ৰভু । আচার্য। কেন ? বলব বৎস ? তোমাকে যখন দেখি আমি মুক্তিকে যেন চোখে দেখতে পাই। এত চাপেও যখন দেখলুম তোমার মধ্যে প্রাণ কিছুতেই মরতে চায় না। তখনই আমি প্রথম বুঝতে পারলুম। মানুষের মন মন্ত্রের চেয়ে সত্য, হাজার বছরের অতিপ্রাচীন আচারের চেয়ে সত্য । যাও বৎস, তোমার পথে তুমি যাও । আমাকে কোনো কথা জিজ্ঞাসা কোরো না । পঞ্চক । আচাৰ্যদেব, আপনি জানেন না। কিন্তু আপনিই আমাকে নিয়মের চাকার নীচে থেকে টেনে নিয়েছেন । আচার্য। কেমন করে বৎস ? পঞ্চক । তা জানি নে, কিন্তু আপনি আমাকে এমন একটা-কিছু দিয়েছেন যা আচারের চেয়ে নিয়মের চেয়ে অনেক বেশি । আচার্য। তুমি কী কর না-কর আমি কোনোদিন জিজ্ঞাসা করি নে, কিন্তু আজ একটি কথা জিজ্ঞাসা করব । তুমি কি অচলায়তনের বাইরে গিয়ে শোিণপাংশু-জাতির সঙ্গে মেশ ? পঞ্চক । আপনি কি এর উত্তর শুনতে চান ? আচার্য। না না, থাক, বোলো না । কিন্তু শোণপাংশুরা যে অত্যন্ত স্লেচ্ছ। তাদের সহবাস কি— পঞ্চক । তাদের সম্বন্ধে আপনার কি কোনো বিশেষ আদেশ আছে । আচার্য। না না, আদেশ আমার কিছুই নেই। যদি ভুল করতে হয় তবে ভুল করো গে- তুমি ভুল করো গে- আমাদের কথা শুনো না । আমাদের গুরু আসছেন পঞ্চক- তার কাছে তোমার মতো বালক হয়ে যদি বসতে পারি— তিনি যদি আমার জরার বন্ধন খুলে দেন, আমাকে ছেড়ে দেন, তিনি যদি অভয় দিয়ে বলেন আজ থেকে ভুল করে করে সত্য জানিবার অধিকার তোমাকে দিলুম, আমার মনের উপর থেকে হাজার দু-হাজার বছরের পুরাতন ভার যদি তিনি নামিয়ে দেন । পঞ্চক। ঐ উপাচার্য আসছেন-বােধ করি কাজের কথা আছে—বিদায় হই। [প্ৰস্থান উপাধ্যায় ও উপাচার্যের প্রবেশ উপাচার্য। (উপাধ্যায়ের প্রতি) আচার্যদেবকে তো বলতেই হবে। উনি নিতান্ত উদবিগ্ন হবেনকিন্তু দায়িত্ব যে ওঁরই । আচার্য। উপাধ্যায়, কোনো সংবাদ আছে নাকি ? উপাধ্যায় । অত্যন্ত মন্দ সংবাদ । আচার্য। অতএব সেটা সত্বর বলা উচিত । উপাচার্য। উপাধ্যায়, কথাটা বলে ফেলো । এ দিকে প্ৰতিকারের সময় উত্তীর্ণ হয়ে যাচ্ছে । আমাদের গ্ৰহাচাৰ্য বলছেন। আজ তিন প্রহর সাড়ে তিন দণ্ডের মধ্যে দ্ব্যাত্মকচরাংশলগ্নে যা-কিছু করবার সময়- সেটা অতিক্রম করলেই গোপরিক্রমণ আরম্ভ হবে, তখন প্ৰায়শ্চিত্তের কেবল এক পাদ হবে