পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

VSO রবীন্দ্র-রচনাবলী পঞ্চক । কেন কী রে ! ওটা যে নিষেধ । প্ৰথম শোণিপাংশু । কেন নিষেধ ? পঞ্চক । শোনো একবার ! নিষেধ, তার আবার কেন ! সাধে তোদের মুখদর্শন পাপ ! এই সহজ কথাটা বুঝিস নে যে কঁকুড় আর খেসারিডালের চাষটা ভয়ানক খারাপ । দ্বিতীয় শোণিপাংশু । কেন ? ওটা কি তোমরা খাও না ? পঞ্চক। খাই বৈকি, খুব আদর করে খাই- কিন্তু ওটা যারা চাষ করে তাদের ছায়া মাড়াই নে । দ্বিতীয় শোিণপাংশু । কেন ? পঞ্চক। ফের কেন ! তােরা যে এতবড়ো নিরেট মুর্থ তা জানতুম না। আমাদের পিতামহ বিষ্কন্তী কঁকুড়ের মধ্যে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, সে-খবর রাখিস নে বুঝি ? দ্বিতীয় শোিণপাংশু । কঁকুড়ের মধ্যে কেন ? পঞ্চক। আবার কেন ! তোরা যে ঐ এক কেনার জ্বালায় আমাকে অতিষ্ঠা করে তুললি। তৃতীয় শোিণপাংশু । আর, খেসারির ডাল ? পঞ্চক। একবার কোন যুগে একটা খেসারিডালের গুড়ো উপবাসের দিন কোন এক মস্ত বুড়োর ঠিক গোফের উপর উড়ে পড়েছিল ; তাতে র্তার উপবাসের পুণ্যফল থেকে ষষ্টিসহস্ৰ ভাগের এক ভাগ কম পড়ে গিয়েছিল ; তাই তখনই সেইখানে দাড়িয়ে উঠে তিনি জগতের সমস্ত খেসারিডালের খেতের উপর অভিশাপ দিয়ে গেছেন। এতবড়ো তেজ । তোরা হলে কী করতিস বল দেখি । প্ৰথম শোণপাংশু । আমাদের কথা বল কেন ? উপবাসের দিনে খেসারিডাল যদি গোফের উপর পর্যন্ত এগিয়ে আসে তা হলে তাকে আরো একটু এগিয়ে নিই। পঞ্চক । আচ্ছা, একটা কথা জিজ্ঞাসা করি, সত্যি করে বলিস- তোরা কি লোহার কাজ করে থাকিস ? প্রথম শোণপাংশু । লোহার কাজ করি বৈকি, খুর করি । পঞ্চক। রাম ! রাম ! আমরা সনাতন কাল থেকে কেবল তামা-পিতলের কাজ করে আসছি। লোহা গলাতে পারি। কিন্তু সব দিন নয়। ষষ্ঠীর দিনে যদি মঙ্গলবার পড়ে তবেই স্নান করে আমরা হাপর ছুতে পারি, কিন্তু তাই বলে লোহা পিটােনো-সে তো হতেই পারে না ! তৃতীয় শোণপাংশু । আমরা লোহার কাজ করি তাই লোহাও আমাদের কাজ করে । 5R কঠিন লোহা কঠিন ঘুমে ছিল অচেতন, - ও তার ঘুম ভাঙাইনু রে ! লক্ষ্যযুগের অন্ধকারে ছিল সংগোপন, ওগো, তায় জাগাইনু রে । পোষ মেনেছে হাতের তলে, যা বলাই সে তেমনি বলে, দীর্ঘদিনের মীেন তাহার আজ ভাগাইনু রে । আচল ছিল, সচল হয়ে ছুটেছে ওই জগৎ জয়ে, নিৰ্ভয়ে আজ দুই হাতে তার রাশ বাগাইনুরে। পঞ্চক। সেদিন উপাধ্যায়মশায় একঘর ছাত্রের সামনে বললেন শোিণপাংশু জাতটা এমনই বিশ্ৰী যে, তারা নিজের হাতে লোহার কাজ করে। আমি তাকে বললুম, ও বেচারারা পড়াশুনো কিছুই করে নি সে আমি জানি- এমনকি, এই পৃথিবীটা যে ত্রিশিরা রাক্ষসীর মাথামুড়োনাে চুলের জটা দিয়ে