পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

७२२ রবীন্দ্র-রচনাবলী । দেখি, খুঁজি বুঝি, কেবল ভাঙি, গড়ি, যুঝি, মোরা সব দেশেতেই বেড়াই ঘুরে সব সাজেই। নাহয় জিতি কিংবা হারি, যদি অমনিতে হাল ছাড়ি, মারি সেই লাজেই । আপন হাতের জোরে w আমরা তুলি সৃজন করে, আমরা প্ৰাণ দিয়ে ঘর বঁধি, থাকি তার মাঝেই । পঞ্চক । সর্বনাশ করলে রে— আমার সর্বনাশ করলে ! আমার আর ভদ্রতা রাখলে না। এদের তালে তালে আমারও পা-দুটাে নেচে উঠছে। আমাকে সুদ্ধ এরা টানবে দেখছি। কোন দিন আমিও লোহা পিটিব রে, লোহা পিটব- কিন্তু খেসারির ডাল- না না, পালা ভাই, পালা তোরা । দেখছিস নে, পড়ব বলে পুঁথি সংগ্রহ করে এনেছি। দ্বিতীয় শোণপাংশু । ও কী পুঁথি দাদা ? ওতে কী আছে ? পঞ্চক । এ আমাদের দিকচক্ৰচন্দ্রিকা-এতে বিস্তর কাজের কথা আছে রে । প্ৰথম শোণিপাংশু । কিরকম ? পঞ্চক । দশটা দিকের দশরকম রঙ গন্ধ আর স্বাদ আছে কি না। এতে তার সমস্ত খোলসা করে লিখেছে। দক্ষিণ দিকের রঙটা হচ্ছে রুইমাছের পেটের মতো, ওর গন্ধটা দধির গন্ধ, স্বাদটা ঈষৎ মিষ্টি ; পূব দিকের রঙটা হচ্ছে সবুজ, গন্ধটা মদমত্ত হাতির মতো, স্বাদটা বকুলের ফলের মতো কষা- নৈর্বাত কোণের দ্বিতীয় শোণপাংশু । আর বলতে হবে না। দাদা । কিন্তু দশ দিকে তো আমরা এ-সব রঙ গন্ধ দেখতে পাই নে । পঞ্চক । দেখতে পেলে তো দেখাই যেত। যে ঘোর মুর্থ সেও দেখত । এ-সব কেবল পুঁথিতে পড়তে পাওয়া যায়, জগতে কোথাও দেখবার জো নেই। প্রথম শোণপাংশু । তা হলে দাদা তুমি পুঁথিই পড়ো, আমরা চললুম। দ্বিতীয় শোণপাংশু । এদের মতো চোখকান বুজে যদি আমাদের বসে বসে ভাবতে হত তা হলে তো আমরা পাগল হয়ে যেতুম | তৃতীয় শোণপাংশু । চল ভাই, ঘুরে আসি, শিকারের সন্ধান পেয়েছি। নদীর ধারে গণ্ডারের পায়ের চিহ্ন দেখা গেছে । [ @ኝጣ পঞ্চক । এই শোণপাংশুগুলো বাইরে থাকে বটে, কিন্তু দিনরাত্রি এমনি পাক খেয়ে বেড়ায় যে, বাহিরটাকে দেখতেই পায় না । এরা যেখানে থাকে। সেখানে একেবারে অস্থিরতার চোটে চতুর্দি ঘুলিয়ে যায়। এরা একটু থেমেছে অমনি সমস্ত আকাশটা যেন গান গেয়ে উঠেছে। এ শোণিপাংশুদের দেখছি ওরা চুপ করলেই আর কিছু শুনতে পায় না- ওরা নিজের গোলমালটা শোনে সেইজন্যে এত গোল করতে ভালোবাসে। কিন্তু এই আলোতে ভরা নীল আকাশটা আমার রক্তের ভিতরে গিয়ে কথা কচ্ছে, আমার সমস্ত শরীরটা গুন গুন করে বেড়াচ্ছে। গান ঘরেতে ভ্রমর এলো গুনগুনিয়ে । আমারে কার কথা সে যায় শুনিয়ে । মাধবী জাগল বনে,