পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\Ο\OS রবীন্দ্র রচনাবলী তৃণাঞ্জন । তবে আর ভাবনা কী ? উপাধ্যায়। মহাপঞ্চক, তোমার কিছুই বাধে না, আমার কিন্তু ভয় হচ্ছে। আচার্যের প্রবেশ আচাৰ্য । বৎস, এতদিন তোমরা আমাকে আচাৰ্য বলে মেনেছ, আজ তোমাদের সামনে আমার বিচারের দিন এসেছে। আমি স্বীকার করছি। অপরাধের অন্ত নেই, অন্ত নেই, তার প্রায়শ্চিত্ত আমাকেই করতে হবে । তৃণাঞ্জন । তবে আর দেরি করেন কেন । এ দিকে যে আমাদের সর্বনাশ হয়। জয়ােত্তম। দেখো তৃণাঞ্জন, আঁস্তাকুড়ের ছাই দিয়ে তোমার এই মুখের গর্তটা ভরিয়ে দিতে হবে। একটু থামো না । "፦ আচার্য। গুরু চলে গেলেন, আমরা তার জায়গায় পুঁথি নিয়ে বসলুম ; তার শুকনো পাতায় ক্ষুধা যতই মেটে না ততই পুঁথি কেবল বাড়াতে থাকি । খাদ্যের মধ্যে প্ৰাণ যতই কমে তার পরিমাণ ততই বেশি হয় । সেই জীর্ণ পুঁথির ভাণ্ডারে প্রতিদিন তোমরা দলে দলে আমার কাছে তোমাদের তরুণ হৃদয়টি মেলে ধরে কী চাইতে এসেছিলো ! অমৃতবাণী ? কিন্তু আমার তালু যে শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে ! রসনায় যে রসের লেশমাত্র নেই ! এবার নিয়ে এসো সেই বাণী, গুরু, নিয়ে এসো হৃদয়ের বাণী ! প্ৰাণকে প্ৰাণ দিয়ে জাগিয়ে দিয়ে যাও ! পঞ্চক । (ছুটিয়া প্ৰবেশ করিয়া) তোমার নববর্ষার সজল হাওয়ায় উড়ে যাক সব শুকনো পাতা— আয় রে নবীন কিশলয়— তোরা ছুটে আয়, তোরা ফুটে বেরো । ভাই জয়োত্তম, শুনিছ না, আকাশের ঘন নীল মেঘের মধ্যে মুক্তির ডাক উঠেছে— ‘আজ নৃত্য করা রে নৃত্য কর । 5iR ওরে ওরে ওরে, আমার মন মেতেছে, তারে আজ থামায় কে রে ! সে যে আকাশ-পানে হাত পেতেছে, - VofC& Vatief Natix (K's (& প্রথম জয়োত্তমের, পরে বিশ্বম্ভরের, পরে সঞ্জীবের নৃত্যগীতে যোগ মহাপঞ্চক। পঞ্চক, নির্লজ্জ বানর কোথাকার, থাম বলছি, থামা ! ፃiiማ পঞ্চক । ওরে, আমার মন মেতেছে আমারে থামায় কে রে । মহাপঞ্চক। উপাধ্যায়, আমি তোমাকে বলি নি একজটা দেবীর শাপ আরম্ভ হয়েছে ? দেখছ, কী করে তিনি আমাদের সকলের বুদ্ধিকে বিচলিত করে তুলছেন- ক্ৰমে দেখবে অচলায়তনের একটি পাথরও আর থাকবে না । পঞ্চক । না থাকবে না, থাকবে না, পাথরগুলো সব পাগল হয়ে যাবে ; তারা কে কোথায় ছুটে বেরিয়ে পড়বে, তারা গান ধরবে- “ ওরে ভাই, নীচু রে ও ভাই, নীচু রেআজ ছাড়া পেয়ে বঁাচু রে লাজ ভয় ঘুচিয়ে দে রে । তোরে আজ থামায় কে রে ! মহাপঞ্চক । উপাধ্যায়, হা করে দাড়িয়ে দেখছি কী ! সর্বনাশ শুরু হয়েছে, বুঝতে পারছি না ! ওরে ছন্নমতি মুৰ্থ, অভিশপ্ত বর্বর, আজ তোদের নাচবার দিন ?