পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૭8 রবীন্দ্র-রচনাবলী প্রথম দৰ্ভক । ই রে হী, আমাদের গোসাঁই। এমন সাজ তার আর কখনো দেখি নি ! একেবাৱে চোখ ঝলসে যায় । তৃতীয় দৰ্ভক। — ঘরে কী আছে রে ভাই সব বের করা। দ্বিতীয় দৰ্ভক । বনের জাম আছে রে । চতুর্থ দৰ্ভক । আমার ঘরে খেজুর আছে। প্রথম দৰ্ভক । কালো গোরুর দুধ শিগগির দুয়ে আনো দাদা । দাদাঠাকুরের প্রবেশ আচার্য। (প্ৰণাম করিয়া) জয় গুরুজির জয় ! পঞ্চক । এ কী ! এ যে দাদাঠাকুর ! গুরু কোথায় ? ঢুকাল। সোসাইঠাকুর। প্ৰণাম হই। খবর দিয়ে এলে না কেন ? তােমার ভােগ যে তৈরি श ान् । দাদাঠাকুর । কেন ভাই, তোদের ঘরে আজ রান্না চড়ে নি নাকি ? তোরাও মন্ত্র নিয়ে উপোস করতে আরম্ভ করেছিস নাকি রে ? প্রথম দৰ্ভক। আমরা আজ শুধু মাষকলাই আর ভাত চড়িয়েছি। ঘরে আর কিছু ছিল না। দাদাঠাকুর । আমারও তাতেই হয়ে যাবে । ) পঞ্চক । দাদাঠাকুর, আমার ভারি গর্ব ছিল এ রাজ্যে একলা আমিই কেবল চিনি তোমাকে । কারও যে চিনতে আর বাকি নেই । প্রথম দৰ্ভক। ঐ তো আমাদের গোসাঁই, পূর্ণিমার দিনে এসে আমাদের পিঠে খেয়ে গেছে, তার পর এই কতদিন পরে দেখা। চল ভাই, আমাদের যা আছে সব সংগ্রহ করে আনি। [প্ৰস্থান দাদাঠাকুর । আচার্য, তুমি এ কী করেছ ? সুর্য। কী যে করেছি তা বোঝবারও শক্তি আমার নেই। তবে এইটুকু বুঝি— আমি সব নষ্ট 颈T互1 দাদাঠাকুর । যিনি তোমাকে মুক্তি দেবেন তাকেই তুমি কেবল বঁধবার চেষ্টা করেছ। আচার্য। কিন্তু বাধতে তো পারি নি। ঠাকুর ! তাকে বাধাছি মনে করে যতগুলো পাক দিয়েছি। সব পাক কেবল নিজের চারি দিকেই জড়িয়েছি। যে হাত দিয়ে সেই বঁাধন খোলা যেতে পারত সেই হাতটা সুদ্ধ বেঁধে ফেলেছি। দাদাঠাকুর । যিনি সব জায়গায় আপনি ধরা দিয়ে বসে আছেন তাকে একটা জায়গায় ধরতে গেলেই তাকে হারাতে হয় । আচার্য । তিনি যে আছেন এই খবরটা মনের মধ্যে পৌঁছায় নি বলেই মনে করে বসেছিলুম তীকে বুঝি কৌশল করে গড়ে তুলতে হয়। তাই দিনরাত বসে বসে এত ব্যর্থ চেষ্টার জাল পাকিয়েছি । দাদাঠাকুর । তোমার যে কারাগারটাতে তোমার নিজেকেই আঁটে না সেইখানে তাকে শিকল পরাবার আয়োজন না করে তারই এই খোলা মন্দিরের মধ্যে তোমার আসন পাতবার জন্যে প্ৰস্তুত २९3 | আচার্য। আদেশ করো প্ৰভু। ভুল করেছিলুম জেনেও সে ভুল ভাঙতে পারি নি। পথ হারিয়েছি তা জানতুম, যতই চলছি ততই পথ হতে কেবল বেশি দূরে গিয়ে পড়ছি তাও বুঝতে পেরেছিলুম, কিন্তু ভয়ে থামতে পারছিলুম না। এই চক্ৰে হাজার বার ঘুরে বেড়ানোকেই পথ খুঁজে পাবার উপায় বলে মনে করেছিলুম। দাদাঠাকুর । যে চক্ৰ কেবল অভ্যাসের চক্র, যা কোনো জায়গাতেই নিয়ে যায় না, কেবল নিজের