পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\Syréგ. রবীন্দ্র-রচনাবলী দাদাঠাকুর । ছোটাে ছেলেকে পাকা বেল দিলে সে ভারি খুশি হয়ে মনে করে এটা খেলার গোলা । কেবল সেটাকে গড়িয়ে নিয়ে বেড়ায় । ওরাও সেইরকম স্বাধীনতাকে বাইরে থেকে ভারি একটা মজার জিনিস বলে জানে- কিন্তু জানে না স্থির হয়ে বসে তার ভিতর থেকে সার পদার্থটা বের করে নিতে হয় । কিছুদিনের জন্যে তোমার মহাপঞ্চকদাদার হাতে ওদের ভর দিলেই খানিকটা ঠাণ্ডা হয়ে ওৱা নিজের ভিতরের দিকটাতে পাক ধরাবার সময় পাবে। পঞ্চক । তা হলে আমার মহাপঞ্চকদাদাকে কি ঐখানেইদাদাঠাকুর । হা ঐখানেই বৈকি। তার ওখানে অনেক কাজ। এতদিন ঘর বন্ধ করে অন্ধকারে ও মনে করছিল চাকাটা খুব চলছে, কিন্তু চাকাটা কেবল এক জায়গায় দাঁড়িয়ে ঘুরছিল তা সে দেখতেও পায় নি। এখন আলোতে তার দৃষ্টি খুলে গেছে, সে আর সে-মানুষ নেই। কী করে আপনাকে আপনি ছাড়িয়ে উঠতে হয় সেইটো শেখাবার ভার ওর উপর । ক্ষুধাতৃষ্ণা-লোভভয়-জীবনমৃত্যুর আবরণ বিদীর্ণ করে আপনাকে প্ৰকাশ করার রহস্য ওর হাতে আছে । আচার্য। আর এই চির-অপরাধীর কী বিধান করলে প্ৰভু ? দাদাঠাকুর । তোমাকে আর কাজ করতে হবে না। আচার্য। তুমি আমার সঙ্গে এসো। আচার্য। বাচালে প্ৰভু, আমাকে রক্ষা করলে। আমার সমস্ত চিত্ত শুকিয়ে পাথর হয়ে গেছে— আমাকে আমারই এই পাথরের বেড়া থেকে বের করে আনো । আমি কোনো সম্পদ চাই নে— আমাকে একটু রস দাও । দাদাঠাকুর । ভাবনা নেই। আচার্য, ভাবনা নেই— আনন্দের বর্ষা নেমে এসেছে- তার ঝর ঝর শব্দে মন নৃত্য করছে আমার । বাইরে বেরিয়ে এলেই দেখতে পাবে চারি দিক ভেসে যাচ্ছে। ঘরে বসে ভয়ে কঁপিছে কারা। এ ঘনঘোর বর্ষার কালো মেঘে আনন্দ, তীক্ষ বিদ্যুতে আনন্দ, বজের গর্জনে আনন্দ । আজ মাথার উষ্ণীষ যদি উড়ে যায় তো উড়ে যাক, গায়ের উত্তরীয় যদি ভিজে যায় তো ভিজে যাক- আজি দুর্যোেগ একে বলে কে ! আজি ঘরের ভিত যদি ভেঙে গিয়ে থাকে যাক-না- আজ একেবারে বড়ো রাস্তার মাঝখানে হবে মিলন । সুভদ্রের প্রবেশ সুভদ্র । গুরু ! দাদাঠাকুর। কী বাবা ? সুভদ্র । আমি যে-পাপ করেছি। তার তো প্ৰায়শ্চিত্ত শেষ হল না ! দাদাঠাকুর। তার আর কিছু বাকি নেই। সুভদ্র । বাকি নেই ? দাদাঠাকুর । না । আমি সমস্ত চুরমার করে ধুলোয় লুটিয়ে দিয়েছি। সুভদ্র । একজটা দেবীদাদাঠাকুর । একজটা দেবী ! উত্তরের দিকের দেয়ালটা ভাঙবামাত্রই একজটা দেবীর সঙ্গে আমাদের এমনি মিল হয়ে গেল যে, সে আর কোনোদিন জটা দুলিয়ে কাউকে ভয় দেখাবে না। এখন তাকে দেখলে মনে হবে সে আকাশের আলো- তার সমস্ত জটা আষাঢ়ের নবীন মেঘের মধ্যে জড়িয়ে গিয়েছে। সুভদ্র। এখন আমি কী করব । ) পঞ্চক । এখন তুমি আছ ভাই আর আমি আছি। দুজনে মিলে কেবলই উত্তর দক্ষিণ পূব পশ্চিমের সমস্ত দরজা-জানলাগুলো খুলে খুলে বেড়াব। ط উপাচার্য। (প্রবেশ করিয়া) তৃণ পাওয়া গেল না- কোথাও তৃণ পাওয়া গেল না। আচার্য। সুতসোম, তুমি বুঝি তৃণ খুঁজেই বেড়াচ্ছিলে ? ! উপাচার্য। হা, ইন্দ্ৰতৃণ, সে তো কোথাও পাওয়া গেল না। হায় হায় ! এখন আমি করি কী ! এমন