পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ডাকঘর wova কাছে ঝরনার পথ যেখানে ফুরিয়েছে সেখানে বঁাকা নদীর পথ ধরে সে কেবলই চলে আসছে- নদীর ধাৱে জোয়ারির খেত, তারই সরু গলির ভিতর দিয়ে দিয়ে সে কেবল আসছে— তার পরে আখের খেত— সেই আখের খেতের পাশ দিয়ে উচু আল চলে গিয়েছে, সেই আলের উপর দিয়ে সে কেবলই চলে আসছে— রাতদিন একলাটি চলে আসছে ; খেতের মধ্যে ঝিঝি পোকা ডাকছে- নদীর ধারে একটিও মানুষ নেই, কেবল কাদাখোচা লেজ দুলিয়ে দুলিয়ে বেড়াচ্ছে— আমি সমস্ত দেখতে পাচ্ছি। যতই সে আসছে দেখছি, আমার বুকের ভিতরে ভারি খুশি হয়ে হয়ে উঠছে। । ঠাকুরদা। অমন নবীন চােখ তো আমার নেই। তবু তোমার দেখার সঙ্গে সঙ্গে আমিও দেখতে १iछि | অমল । আচ্ছা ফকির, যার ডাকঘর তুমি সেই রাজাকে জান ? ঠাকুরদা। জানি বৈকি। আমি যে র্তার কাছে রোজ ভিক্ষা নিতে যাই । অমল । সে তো বেশ ! আমি ভালো হয়ে উঠলে আমিও তার কাছে ভিক্ষা নিতে যাব । পারব না যেতে ? ঠাকুরদা । বাবা, তোমার আর ভিক্ষার দরকার হবে না, তিনি তোমাকে যা দেবেন। আমনিই দিয়ে দেবেন । অমল । না, না, আমি তার দরজার সামনে পথের ধারে দাড়িয়ে জয় হােক বলে ভিক্ষা চাইবআমি খঞ্জনি বাজিয়ে নাচব- সে বেশ হবে, না ? ঠাকুরদা । সে খুব ভালো হবে । তোমাকে সঙ্গে করে নিয়ে গেলে আমারও পেট ভরে ভিক্ষা মিলবে । তুমি কী ভিক্ষা চাইবে ? অমল। আমি বলব, আমাকে তোমার ডাক-হরকরা করে দাও, আমি অমনি লণ্ঠন হাতে ঘরে ঘরে তোমার চিঠি বিলি করে বেড়াবা | জান ফকির, আমাকে একজন বলেছে আমি ভালো হয়ে উঠলে সে আমাকে ভিক্ষা করতে শেখাবে। আমি তার সঙ্গে যেখানে খুশি ভিক্ষা করে বেড়ােব। ঠাকুরদা । কে বলো দেখি ? অমল ৷ ছিদাম । ঠাকুরদা। কোন ছিদাম ? অমল । সেই যে অন্ধ খোড়া । সে রোজ আমার জানলার কাছে আসে । ঠিক আমার মতো একজন ছেলে তাকে চাকার গাড়িতে করে ঠেলে ঠেলে নিয়ে বেড়ায় । আমি তাকে বলেছি, আমি ভালো হয়ে উঠলে তাকে ঠেলে ঠেলে নিয়ে বেড়ােব। ঠাকুরদা । সে “তো বেশ মজা হবে দেখছি । অমল । সেই আমাকে বলেছে কেমন করে ভিক্ষা করতে হয় আমাকে শিখিয়ে দেবে । পিসেমশায়কে আমি বলি ওকে ভিক্ষা দিতে, তিনি বলেন ও মিথ্যা কানা, মিথ্যা খোড়া। আচ্ছা, ও যেন মিথ্যা কানা-ই হল, কিন্তু চোখে দেখতে পায় না-সেটা তো সত্যি । ঠাকুরদা। ঠিক বলেছ বাবা, ওর মধ্যে সত্যি হচ্ছে ঐটুকু ষে, ও চােখে দেখতে পায় না- তা ওকে কানা বল আর না-ই বল। তা ও ভিক্ষা পায় না, তবে তোমার কাছে বসে থাকে কী করতে । অমল । ওকে যে আমি শোনাই কোথায় কী আছে। বেচারা দেখতে পায় না । তুমি যে-সব দেশের *থা আমাকে বল সে-সব আমি ওকে শুনিয়ে দিই। তুমি সেদিন আমাকে সেই যে হালকা দেশের **ী বলেছিলে, যেখানে কোনো জিনিসের কোনো ভার নেই- যেখানে একটু লাফ দিলেই অমনি "হািড় ডিঙিয়ে চলে যাওয়া যায়, সেই হালকা দেশের কথা শুনে ও ভারি খুশি হয়ে উঠেছিল। আচ্ছা! ফকির, সে দেশে কোন দিক দিয়ে যাওয়া যায় ? ? ঠাকুরদা। ভিতরের দিক দিয়ে সে একটা রাস্তা আছে, সে হয়তো খুঁজে পাওয়া শক্ত । শিমল ৷৷ ও বেচারা যে অন্ধ, ও হয়তো দেখতেই পাবে না- ওকে কেবল ভিক্ষাই করে বেড়াতে