পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪০২

রবীন্দ্র-রচনাবলী طاسob কী প্ৰতিহারী । ) বৈরাগ্যবারিধি নিয়ে শ্রুতিভূষণ এসেছেন। সর্বনাশ করলে ! ফেরাও তাকে ফেরাও । মন্ত্রী, দেখো হঠাৎ যেন শ্রুতিভূষণ না এসে পড়ে। আমার দুর্বল মন, হয়তো সামলাতে পারব না, হয়তো অন্যমনস্ক হয়ে বৈরাগ্যবারিধির ডুব-জলে গিয়ে পড়ব । ওহে কবিশেখর, আমাকে কিছুমাত্র সময় দিয়ে না— প্ৰাণটাকে জাগিয়ে রাখে- একটা যা-হয়-কিছু করে- যেমন এই ফায়ুনের হাওয়াটা যা-খুশি তাই করছে তেমনিতরো। হাতে কিছু তৈরি আছে হে ? একটা নাটক, কিংবা প্রকরণ, কিংবা রূপক, কিংবা ভান, কিংবা তৈরি আছে- কিন্তু সেটা নাটক, কি প্রকরণ, কি রূপক, কি ভান তা ঠিক বলতে পারব না । যা রচনা করেছ, তার অর্থ কি কিছু গ্ৰহণ করতে পারব। না মহারাজ । রচনা তো অর্থগ্রহণ করবার জন্যে নয় । তবে ? সেই রচনাকেই গ্ৰহণ করবার জন্যে । আমি তো বলেছি আমার এ-সব জিনিস বঁাশির মতো, বোঝবার জন্যে নয়, বাজবার জন্যে । বল কী হে কবি, এর মধ্যে তত্ত্বকথা কিছুই নেই ? কিছু না । তবে তোমার ও-রচনাটা বলছে কী । ও বলছে, আমি আছি। শিশু জন্মাবামাত্ৰ চেচিয়ে ওঠে, সেই কান্নার মানে জানেন মহারাজ ? শিশু হঠাৎ শুনতে পায় জল-স্থল-আকাশ তাকে চার দিক থেকে বলে উঠেছে- “আমি আছি।”- তারই উত্তরে ঐ প্রাণটুকু সাড়া পেয়ে বলে ওঠে- “আমি আছি।” আমার রচনা সেই সদ্যোজাত শিশুর কান্না, বিশ্বব্ৰহ্মাণ্ডের ডাকের উত্তরে প্রাণের সাড়া । তার বেশি আর কিছু না ? কিছু না । আমার রচনার মধ্যে প্রাণ বলে উঠেছে, সুখে দুঃখে, কাজে বিশ্রামে, জন্মে মৃত্যুতে, জয়ে পরাজয়ে, লোকে লোকান্তরে জয়- এই আমি-আছির জয়, জয়- এই আনন্দময় আমি-আছির We ওহে কবি, তত্ত্ব না থাকলে আজকের দিনে তোমার এ জিনিস চলবে না । সে কথা সত্য মহারাজ। আজকের দিনের আধুনিকেরা উপার্জন করতে চায়, উপলব্ধি করতে চায় না। ওরা বুদ্ধিমান ! তা হলে শ্রোতা। কাদের ডাকা যায় । আমার রাজবিদ্যালয়ের নবীন ছাত্রদের ডাকব কি । না মহারাজ, তারা কাব্য শুনেও তর্ক করে । নতুন-শিং-ওঠা হরিণশিশুর মতো ফুলের গাছকেও ওঁতে মেরে মেরে বেড়ায় । VGK ? ডাক দেবেন যাদের চুলে পাক ধরেছে। সে কী কথা কবি। " হাঁ মহারাজ, সেই প্রৌঢ়দেরই যৌবনটি নিরাসক্ত যৌবন। তারা ভোগবতী পার হয়ে আনন্দলোকের ডাঙা দেখতে পেয়েছে । তারা আর ফল চায় না, ফলতে চায় । ওহে কবি, তবে তো এতদিন পরে ঠিক আমার কাব্য শোনবার বয়েস হয়েছে। বিজয়বর্মকেও ডাকা যাক । J 7ांबून । চীন-সম্রাটের দূতকে ? ডাকুন। * আমার শ্বশুর এসেছেন শুনছি।-