পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ফাল্গুনী 8SS আর কিছু নয়, ঐ অন্ধের অন্ধতার মধ্যে সেঁধিয়ে গিয়ে তবে ও ছাড়বে। তাই আমাদের সর্দার ওকে ডুবুরি বলে। চন্দ্ৰহাস একটু সরে গেলেই আর আমাদের খেলার রস থাকে না । ও কাছে থাকলে মনে হয় কিছু হােক বা না হােক তবু মজা আছে। এমন-কি, বিপদের আশঙ্কা থাকলে মনে হয় সে আরো বেশি মজা | আজ এই রাত্রে ওর জন্যে মনটা কেমন করছে। দেখছিস এখানকার হাওয়াটা কেমনতরো ? এখানে আকাশটা যেন যাবার বেলাকার বন্ধুর মতো মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। যারা সেখানে বলছিল চল চল, তারা এখানে বলছে। যাই যাই । কথাটা একই, সুরটা আলাদা । , মনটার ভিতরে কেমন ব্যথা দিচ্ছে, তবু লাগছে ভালো । ঝাউগাছের বীথিকার ভিতর দিয়ে কোথা থেকে এই একটা নদীর স্রোত চলে আসছে, এ যেন কোন দুপুররাতের চােখের জল । পৃথিবীর দিকে এমন করে কখনো আমরা দেখি নি । উর্ধর্বশ্বাসে যখন সামনে ছুটি তখন সামনের দিকেই চােখ থাকে, চার পাশের দিকে নয়। বিদায়ের বাঁশিতে যখন কোমল ধৈবত লাগে তখনই সকলের দিকে চোখ মেলি । আর দেখি বড়ো মধুর। যদি সবাই চলে চলে না যেত তা হলে কি কোনো মাধুরী চোখে পড়ত। চলার মধ্যে যদি কেবলই তেজ থাকত তা হলে যৌবন শুকিয়ে যেত । তার মধ্যে কান্না আছে তাই যৌবনকে সবুজ দেখি । এই জায়গাটাতে এসে শুনতে পাচ্ছি, জগৎটা কেবল পাব পাব বলছে না— সঙ্গে সঙ্গেই বলছে, शgद, शgद । সৃষ্টির গোধূলিলগ্নে ‘পাবার সঙ্গে ছাড়বার বিয়ে হয়ে গেছে রে- তাদের মিল ভাঙলেই সব ভেঙে যাবে | অন্ধ বাউল আমাদের এ কোন দেশে আনলে ভাই। ঐ তারাগুলোর দিকে তাকাচ্ছি। আর মনে হচ্ছে, যুগে যুগে যাদের ফেলে এসেছি তাদের অনিমেষ দৃষ্টিতে সমস্ত রাত একেবারে ছেয়ে রয়েছে। ফুলগুলোর মধ্যে করা বলছে মনে রেখো, মনে রেখো। তাদের নাম তো মনে নেই, কিন্তু মন যে উদাস হয়ে ওঠে । একটা গান না গাইলে বুক ফেটে যাবে। 5R তুই ফেলে এসেছিস করে। (মন, মন রে আমার) তাই জনম গেল, শান্তি পেলি না রে । (মন, মন রে আমার) যে পথ দিয়ে চলে এলি । সে পথ এখন ভুলে গেলি, কেমন করে ফিরবি তাহার দ্বারে। (মন, মন রে আমার) নদীর জলে থাকি রে কান পেতে, কঁপে যে প্রাণ পাতার মর্মরেতে। মনে হয় রে পাব খুঁজি যে-পথ গেছে সন্ধ্যাতরার পারে ৷ (মন, মন রে আমার)