পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দুই বোন 8○述。 উমিমালা নীরদ রিসার্চের যে কাজ নিয়েছিল সেটা সমাপ্ত হল। য়ুরোপের কোনো বৈজ্ঞানিক-সমাজে লেখাটা পাঠিয়ে দিলে। তারা প্রশংসা করলে, তার সঙ্গে সঙ্গে একটা স্কলারশিপ জুটল- স্থির করলে বিদায় নেবার সময় কোনো করুণ আলাপ হল না । কেবল এই কথাটাই বার বার করে বললে যে, “আমি চলে যাচ্ছি, এখন তোমার কর্তব্যসাধনে শৈথিল্য করবে। এই আমার আশঙ্কা ।” উর্মি বললে, “কোনো ভয় করবেন না ।” নীরদ বললে, “কিরকম ভাবে চলতে হবে, পড়াশুনা করতে হবে, তার একটা বিস্তৃত নােট দিয়ে যাচ্ছি।” উর্মি বললে, “আমি ঠিক সেই অনুসারেই চলব।” “তোমার ঐ আলমারির বইগুলি কিন্তু আমি আমার বাসায় নিয়ে গিয়ে বন্ধ করে রাখতে চাই ।” “নিয়ে যান” বলে উমি চাবি দিল তার হাতে । সেতারটার দিকে একবার নীরদের চোখ পড়েছিল । দ্বিধা করে থেমে গেল । অবশেষে নিতান্তই কর্তব্যের অনুরোধে নীরদকে বলতে হল, “আমার কেবল একটা ভয় আছে, শশাঙ্কবাবুদের ওখানে আবার যদি তোমার যাতাযাত ঘন ঘন হতে থাকে তা হলে তোমার নিষ্ঠ যাবে দুর্বল হয়ে, কোনো সন্দেহ নেই। মনে কোরো না। আমি শশাঙ্কবাবুকে নিন্দা করি। উনি খুবই ভালো লোক । ব্যবসায়ে ওরকম উৎসাহ ওরকম বুদ্ধি কম বাঙালির মধ্যেই দেখেছি। ওর একমাত্র দোষ এই যে, উনি কোনো আইডিয়ালকেই মানেন না । সত্যি বলছি, ওর জন্যে অনেক সময়ই আমার ভয় হয়।” এর থেকে শশাঙ্কের অনেক দোষের কথাই উঠল এবং যে-সব দোষ আজ ঢাকা পড়ে আছে সেগুলো বয়সের সঙ্গে একে একে প্রবল আকারে প্রকাশ হয়ে পড়বে, এই অত্যন্ত শোচনীয় দুর্ভাবনার কথা নীরদ চেপে রাখতে পারল না। কিন্তু তা হােক, তবু উনি যে খুব ভালো লোক সে কথা ও মুক্তকণ্ঠে স্বীকার করতে চায় । সেইসঙ্গে এ কথাও বলতে চায় ওর সঙ্গদোষ থেকে, ওদের বাড়ির আবহাওয়া থেকে নিজেকে বাচানাে উর্মির পক্ষে বিশেষ দরকার। উর্মির মন ওদের সমভূমিতে যদি নেবে যায় সেটা হবে অধঃপতন । উর্মি বললে, “আপনি কেন এত বেশি উদবিগ্ন হচ্ছেন ?” “কেন হচ্ছি। শুনবে ? রাগ করবে না ?” 歌 মৃত্যু কথা শোনবার শক্তি আপনার কাছ থেকেই পেয়েছি। জানি সহজ নয়, তবু সহ্য করতে 率 "ן 3 “তবে বলি শোনো ! তোমার স্বভাবের সঙ্গে শশাঙ্কবাবুর স্বভাবের একটা মিল আছে, এ আমি লক্ষ্য করে দেখেছি। তার মনটা একেবারে হালকা। সেইটেই তােমাকে ভালো লাগে, ঠিক কিনা বলে ।” উর্মি ভাবে, লোকটা সর্বজ্ঞ নাকি । ভগ্নপতিকে ওর খুব ভালো লাগে সন্দেহ নেই। তার প্রধান কারণ, শশাঙ্ক হাে হাে করে হাসতে পারে, উৎপাত করতে জানে, ঠাট্টা করে। আর ঠিকটি জানে উর্মি কোন ফুল ভালোবাসে আর কোন রঙের শাড়ি । উর্মি বললে, “হা, আমার ভালো লাগে সে কথা সত্যি ।” নীরদ বললে, “শমিলাদিদির ভালোবাসা স্নিগ্ধগম্ভীর, তার সেবা যেন একটা পুণ্যকর্ম, কখনো কর্তব্য থেকে ছুটি নেন না। তারই প্রভাবে শশাঙ্কবাবু একমনে কাজ করতে শিখেছেন। কিন্তু যেদিন তুমি ভবানীপুরে যাও সেই দিনই ওঁর যেন মুখোশ খসে পড়ে, তোমার সঙ্গে ঝুটােপুটি বেধে যায়, চুলের কীটা তুলে নিয়ে খোপা এলিয়ে দেন, হাতে তোমার পড়বার বই দেখলে আলমারির মাথার উপর রাখেন তুলে। টেনিস খেলবার শখ হঠাৎ প্রবল হয়ে ওঠে, হাতে কাজ থাকলেও ।” উর্মিকে মনে মনে মানতেই হল যে, শশাঙ্কদা এইরকম দৌরাত্ম্য করেন বলেই তাকে ওর এত