পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8心8 ब्रदीक्ष-ब्रा5नावी কুঞ্জপরিক্ৰম-ফুলের বাগান, ফলের বাগান, সবজির বাগানে। বিদায়কালে নীরজা বুড়িতে ভরে দিত গোলাপ, ম্যাগনেলিয়া, কারনেশন— তার সঙ্গে পেঁপে, কাগজিলেবু, কয়েৎবেল— ওদের বাগানের ডাকসাইটে কয়েৎবেল। যথাঋতুতে সব-শেষে আসত ডাবের জল । তুষিতেরা বলত, “কী মিষ্টি জল ।” উত্তরে শুনত, “আমার বাগানের গাছের ডাব ।” সবাই বলত, “ও, তাই তো বলি।” সেই ভোরবেলাকার গাছতলায় দাৰ্জিলিঙ চায়ের বাস্পে-মেশা নানা ঋতুর গন্ধস্মৃতি দীর্ঘনিশ্বাসের সঙ্গে মিলে হায় হায় করে ওর মনে । সেই সোনার রঙে রঙিন দিনগুলোকে ছিড়ে ফিরিয়ে আনতে চায় কোন দস্যুর কাছ থেকে । বিদ্রোহী মন কাউকে সামনে পায় না কেন । ভালোমানুষের মতো মাথা ঠোঁট করে ভাগ্যকে মেনে নেবার মেয়ে নয় ও তো । এর জন্যে কে দায়ী। কোন বিশ্বব্যাপী ছেলেমানুষ। কোন বিরাট পাগল। এমন সম্পূর্ণ সৃষ্টিটাকে এতবড়ো নিরর্থকভাবে উলটাপালট করে দিতে পারলে (5 | বিবাহের পর দশটা বছর একটানা চলে গেল অবিমিশ্র সুখে । মনে মনে ঈর্ষা করেছে। সখীরা ; মনে শুরু কের যা বাজারগর তার চেয়ে ও অনেক বেশি পেয়েছে। পুরুষ বন্ধুরা আদিত্যকে বলেছে। ডগ ।।’’ নীরজার সংসার-সুখের পালের নীেকো প্ৰথম যে ব্যাপার নিয়ে ধস করে একদিন তলায় ঠেকাল সে ওদের ‘ডালি’ কুকুর-ঘটিত । গৃহিণী। এ সংসারে আসবার পূর্বে ডলিই ছিল স্বামীর একলা ঘরের সঙ্গিনী । অবশেষে তার নিষ্ঠা বিভক্ত হল দম্পতির মধ্যে । ভাগে বেশি পড়েছিল। নীরজার দিকেই। দরজার কাছে গাড়ি আসতে দেখলেই কুকুরটার মন যেত। বিগড়িয়ে । ঘন ঘন লেজ আন্দোলনে আসন্ন রথযাত্রার বিরুদ্ধে আপত্তি উত্থাপন করত । অনিমন্ত্রণে গাড়ির মধ্যে লাফিয়ে ওঠবার দুঃসাহস নিরস্ত হত স্বামিনীর তর্জনী সংকেতে । দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে লেজের কুণ্ডলীর মধ্যে নৈরাশ্যকে বেষ্টিত করে দ্বারের কাছে পড়ে থাকত । ওদের ফেরবার দেরি হলে মুখ তুলে বাতাস ঘ্ৰাণ করে করে ঘুরে বেড়াত, কুকুরের অব্যক্ত ভাষায় আকাশে উচ্ছসিত করত করুণ প্রশ্ন। অবশেষে এই কুকুরকে হঠাৎ কী রোগে ধরলে, শেষ পর্যন্ত ওদের মুখের দিকে কাতর দৃষ্টি স্তব্ধ রেখে নীরজার কোলে মাথা দিয়ে মারা গেল । নীরজার ভালোবাসার ছিল প্ৰচণ্ড জেদ । সেই ভালোবাসার বিরুদ্ধে বিধাতারও হস্তক্ষেপ তার কল্পনার অতীত। এতদিন অনুকুল সংসারকে সে নিঃসংশয়ে বিশ্বাস করেছে। আজ পর্যন্ত বিশ্বাস নড়বার কারণ ঘটে নি । কিন্তু আজ ডলির পক্ষেও যখন মরা অভাবনীয়রূপে সম্ভবপর হল তখন ওর দুর্গের প্রাচীরে প্রথম ছিদ্র দেখা দিল । মনে হল এটা অলক্ষণের প্রথম প্রবেশদ্বার। মনে হল বিশ্বসংসারের কর্মকর্তা অব্যবস্থিত চিত্ত- তার আপাতপ্ৰত্যক্ষ প্ৰসাদের উপরেও আর আস্থা রাখা চলে on | নীরজার সম্ভান হবার আশা সবাই ছেড়ে দিয়েছিল । ওদের আশ্রিত গণেশের ছেলেটাকে নিয়ে যখন নীরজার প্রতিহত মেহবৃত্তির প্রবল আলোড়ন চলেছে, আর ছেলেটা যখন তার অশান্ত অভিঘাত আর সইতে পারছে না, এমন সময় ঘটল সন্তানসম্ভাবনা । ভিতরে ভিতরে মাতৃহৃদয় উঠল ভরে, ভাবীকালের দিগন্ত উঠল। নবজীবনের প্রভাত-আভায় রক্তিম হয়ে, গাছের তলায় বসে বসে আগন্তুকের জন্যে নানা অলংকরণে নীরজা লাগল সেলাইয়ের কাজে । অবশেষে এল প্রসবের সময়। ধাত্রী বুঝতে পারলে আসন্ন সংকট। আদিত্য এত বেশি অস্থির হয়ে পড়ল যে ডাক্তার ভৎসনা করে তাকে দূরে ঠেকিয়ে রাখলে। অস্ত্ৰাঘাত করতে হল, শিশুকে মেরে জননীকে বাচালে। তার পর থেকে নীরজা আর উঠতে পারলে না। বালুশয্যাশায়িনী বৈশাখের নদীর মতো তার স্বল্পরক্ত দেহ ক্লান্ত হয়ে রইল পড়ে । প্ৰাণশক্তির অজস্রতা একেবারেই হল নিঃস্ব । বিছানার সামনে জানলা খোলা, তপ্ত হাওয়ায় আসছে মুচকুন্দ ফুলের গন্ধ, কখনো বাতাবি ফুলের নিশ্বাস, যেন তার সেই পূর্বকালের দূরবতী বসন্তের দিন মৃদুকণ্ঠে তাকে জিজ্ঞাসা করছে, “কেমন আছ ।" সকলের চেয়ে তাকে বাজল যখন দেখলে বাগানের কাজে সহযোগিতার জন্যে আদিত্যের দূরসম্পৰ্কীয় বোন সরলাকে আনাতে হয়েছে। খোলা জানলা থেকে যখনই সে দেখে অত্র ও রেশমের