পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 \ტ\სტ রবীন্দ্র-রচনাবলী নীরজা আয়াকে বললে, “আর যাই হােক, আমি যতদিন ছিলুম মালীরা ফাকি দিতে পারে নি।” আয় উঠল গুমরিয়ে, বললে, “সেদিন নেই, এখন লুঠ চলছে দু হাতে ।” “সত্যি নাকি ৷” । “আমি কি মিথ্যা বলছি। কলকাতার নতুনবাজারে কাটা ফুলই বা পৌঁছয় । জামাইবাবু বেরিয়ে গেলেই খিড়কির দরজায় মালীদের ফুলের বাজার বসে যায়।” “এরা কেউ দেখে না ?” । “দেখবার গরজ এত কার্য ।” “জামাইবাবুকে বলিস নে কেন ।” ፬ ̊ “আমি বলবার কে । মান বঁাচিয়ে চলতে হবে তো ? তুমি বল না কেন । তোমারই তো সব ।” “হােক-না, হােক-না, বেশ তো । চলুকােনা এমনই কিছুদিন, তার পরে যখন ছারখার হয়ে আসবে আপনি পড়বে ধরা । একদিন বোঝবার সময় আসবে, মায়ের চেয়ে সৎমায়ের ভালোবাসা বড়ো নয়। চুপ করে থােক-না।” “কিন্তু তাও বলি খোখী, তোমার ঐ হলা মালীটাকে দিয়ে কোনো কাজ পাওয়া যায় না।” হলার কাজে ঔদাসীন্যই যে আয়ার একমাত্র বিরক্তির কারণ তা নয়, ওর উপরে নীরজার স্নেহ অসংগীতরূপে বেড়ে উঠছে, এই কারণটাই সব চেয়ে গুরুতর । নীরজা বললে, “মালীকে দোষ দিই নে। নতুন মনিবকে সইতে পারবে কেন । ওদের হল সাতপুরুষে মালীগিরি, আর তোমার দিদিমণির বইপড়া বিদ্যে, হুকুম করতে এলে সে কি মানায়। হল। ছিষ্টিছাড়া আইন মানতে চায় না, আমার কাছে এসে নালিশ করে । আমি বলি কানে আনিস নে কথা, চুপ করে থাক ।” “সেদিন জামাইবাবু ওকে ছাড়িয়ে দিতে গিয়েছিল।” “কেন, কী জন্যে ।” “ও বসে বসে বিড়ি টানছে, আর ওর সামনে বাইরের গোরু এসে গাছ খাচ্ছে । জামাইবাবু বললে, ‘গোরু তাড়াস নে কেন।” ও মুখের উপর জবাব করলে, “আমি তাড়াব গোরু ! গোরুই তো তাড়া করে আমাকে । আমার প্রাণের ভয় নেই ।” শুনে হাসলে নীরজা, বললে, “ওর ঐরকম কথা । তা যাই হােক, ও আমার আপন হাতে তৈরি ।” “জামাইবাবু তােমার খাতিরেই তো ওকে সয়ে যায়, তা গােরুই ঢুকুক আর গণ্ডারই তাড়া করুক। এতটা আবদার ভালো নয়, তাও বলি ।” “চুপ কর রোশনি । কী দুঃখে ও গোরু তাড়ায় নি সে কি আমি বুঝি নে । ওর আগুন জ্বলছে বুকে । ঐ যে হলা মাথায় গামছা দিয়ে কোথায় চলেছে। ডাক তো ওকে ৷” আয়ার ডাকে। হলধর মালী এল ঘরে । নীরজা জিজ্ঞাসা করলে, “কী রে, আজকাল নতুন ফরমাশ কিছু আছে ?” হলা বললে, “আছে বৈকি । শুনে হাসিও পায়, চোখে জলও আসে ।” “কী রকম, শুনি ।” 影 “ঐ-যে সামনে মল্লিকদের পুরোনো বাড়ি ভাঙা হচ্ছে, ঐখান থেকে ইটপাটকেল নিয়ে এসে গাছের তলায় বিছিয়ে দিতে হবে । এই হল ওঁর হুকুম । আমি বললুম, রোদের বেলায় গরম লাগবে গাছের । কান দেয় না। আমার কথায় ।” - “বাবুকে বলিস নে কেন ।” “বাবুকে বলেছিলেম। বাবু ধমক দিয়ে বলে, চুপ করে থােক। বউদিদি, ছুটি দাও আমাকে, সহ্য হয় कों उभा ।” “তই দেখেছি বটে, কুড়ি করে রাবিশ বয়ে আনছিলি ।” “বউদিদি, তুমি আমার চিরকালের মনিব । তোমারই চোখের সামনে আমার মাথা হেঁট করে