পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8૧8 রবীন্দ্র-রচনাবলী “আমি আয়াকে ডেকে দিচ্ছি" বলে সরলা চলে গেল। নীরজার কথার যে একটা প্রতিবাদ করবে: সেও তার মুখে এল না । আদিত্যও মনে মনে আশ্চর্য হল, ভাবলে সরলাকে কি সত্যিই অন্যায় খাটানো হচ্ছে । ওষুধপথ্য হয়ে গেলে আদিত্য আয়াকে বললে, সরলাদিদিকে ডেকে দাও । “কথায় কথায় কেবলই সরলাদিদি, বেচারাকে তুমি অস্থির করে তুলবে দেখছি।” “কাজের কথা আছে ।” “থাক-না এখন কাজের কথা ।” “বেশিক্ষণ লাগবে না ।” “সরলা মেয়েমানুষ, ওর সঙ্গে এত কাজের কথা কিসের, তার চেয়ে হল মালীকে ডাকো-না।” “তোমাকে বিয়ে করবার পর থেকে একটা কথা আবিষ্কার করেছি যে, মেয়েরাই কাজের, পুরুষেরা হাড়ে অকেজো । আমরা কাজ করি দায়ে পড়ে, তোমরা কাজ কর প্রাণের উৎসাহে । এই সম্বন্ধে একটা খীসিস লিখব মনে করেছি । আমার ডায়রি থেকে বিস্তর উদাহরণ পাওয়া যাবে।” “সেই মেয়েকেই আজ তার প্রাণের কাজ থেকে বঞ্চিত করেছে যে-বিধাতা, তাকে কী বলে নিন্দে করব। ভূমিকম্পে হুড়মুড় করে আমার কাজের চুড়া পড়েছে ভেঙে তাই তো পোড়োবাড়িতে ভূতের বাসা হল ।” সরলা এল । আদিত্য জিজ্ঞাসা করলে, “অর্কিড-ঘরের কাজ হয়ে গেছে ?” “হা, হয়ে গেছে ।” “সবগুলো ?” “সবগুলোই ।” “আর গোলাপের কাটিং ?” “মালী তার জমি তৈরি করছে।” “জমি ! সে তো আমি আগেই তৈরি করে রেখেছি। হলা মালীর উপর ভার দিয়েছ, তা হলেই দাতন-কাঠির চাষ হবে। আর কী ।” কথাটাতে তাড়াতাড়ি বাধা দিয়ে নীরজা বললে, “সরলা, যাও তো কমলালেবুর রস করে নিয়ে এসো গে, তাতে একটু আদার রস দিয়ো, আর মধু।” সরলা মাথা হেঁট করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল । নীরজা জিজ্ঞাসা করলে, “আজ তুমি ভোরে উঠেছিলে, যেমন আমরা রোজ উঠতম ?” “হা, উঠেছিলুম।” “ঘড়িতে তেমনি এলারমের দম দেওয়া ছিল ?” “ছিল বৈকি।” “সেই নিমগাছতলায় সেই কাটা গাছের গুড়ি । তার উপরে চায়ের সরঞ্জাম। সব ঠিক রেখেছিল বাসু ?” “রেখেছিল। নইলে খেসারতের দাবিতে নালিশ রুজু করতুম তোমার আদালতে ।” “দুটাে চৌকিই পাতা ছিল ?” “পাতা ছিল সেই আগেকার মতোই। আর ছিল সেই নীল-পাড়-দেওয়া বাসন্তী রঙের চায়ের সরঞ্জাম ; দুধের জ্যাগ রুপোর, ছোটাে সাদা পাথরের বাটিতে চিনি, আর ড্রাগন-আঁকা জাপানি ট্রে। " “অন্য চৌকিটা খালি রাখলে কেন !” । “ইচ্ছে করে রাখি নি। আকাশে তারাগুলো গােনাগুনতি ঠিকই ছিল, কেবল শুক্লপঞ্চমীর চাঁদ রইল দিগন্তের বাইরে । সুযোগ থাকলে তাকে আনতেম ধরে ।” “সরলাকে কেন ডাক না তোমার চায়ের টেবিলে ।” এর উত্তরে বললেই হত, তোমার আসনে আর কাউকে ডাকতে মন যায় না। সত্যবাদী তা না বলে