পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8Գv ब्रदोक्ष-ब्रा5नावर्दी সরলা কমললেবুর রস নিয়ে এল। নীরজা বললে, “ঐখানে রেখে যাও ।” রেখে সরলা চলে গেল। পাত্রটা পড়ে রইল, ও স্থূলই না । “সরলাকে তুমি বিয়ে করলে না কেন ।” “শোনো একবার কথা ! বিয়ের কথা কোনোদিন মনেও আসে নি ।” “মনেও আসে নি ? এই বুঝি তোমার কবিত্ব !” “জীবনে কবিত্বের বালাই প্রথম দেখা দিল যেদিন তোমাকে দেখলুম। তার আগে আমরা দুই বুনােয় মিলে দিন কাটিয়েছি বনের ছায়ায়। নিজেদের ছিলুম ভুলে । হাল আমলের সভ্যতায় যদি মানুষ হতুম তা হলে কী হত বলা যায় না।” “কেন, সভ্যতার অপরাধটা কী ।” “এখনকার সভ্যতাটা দুঃশাসনের মতো হৃদয়ের বস্ত্ৰহরণ করতে চায়। অনুভব করবার পূর্বেই প্রশ্ন করে তােলে চােখে আঙুল দিয়ে। গন্ধের ইশারা এর পক্ষে বেশ সৃদ্ধ কের নয় পাপড়ি "ן “সরলাকে তো দেখতে মন্দ নয় ।” “সরলাকে জানতুম সরলা বলেই। ও দেখতে ভালো কি মন্দ সে-তত্ত্বটা সম্পূর্ণ বাহুল্য ছিল |” আচ্ছা, সত্যি বলো, ওকে তুমি ভালোবাসতে না ?” নিশ্চয় ভালোবাসতুম । আমি কি জড় পদার্থ যে, ওকে ভালোবাসব না ! মেসোেমশায়ের ছেলে রেঙ্গুনে ব্যারিস্টারি করে, তার জন্যে কোনো ভাবনা নেই। তার বাগানটি নিয়ে সরলা থাকবে এই ছিল তার জীবনের সাধ । এমন-কি, তার বিশ্বাস ছিল এই বাগানই ওর সমস্ত মনপ্ৰাণ অধিকার করবে । ওর বিয়ে করবার গরজ থাকবে না। তার পরে তিনি চলে গেলেন, অনাথা হল সরলা, পাওনাদারের হাতে বাগানটি গেল বিকিয়ে । সেদিন আমার বুক ভেঙে গিয়েছিল, দেখ নি কি তুমি ৷৷ ও যে ভালোবাসবার জিনিস, ভালোবাসব না। ওকে ? মনে তো আছে একদিন সরলার মুখে হাসিখুশি ছিল উচ্ছসিত । মনে হত যেন পাখির ওড়া ছিল ওর পায়ের চলার মধ্যে। আজ ও চলেছে বুকভরা বােঝা বয়ে বয়ে, তবু ভেঙে পড়ে নি। একদিনের জন্যে দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে নি আমারও কাছে, নিজেকে তার অবকাশও দিলে नीं ।” আদিত্যের কথা চাপা দিয়ে নীরজা বললে, “থামো গো থামো, অনেক শুনেছি। ওর কথা তোমার কাছে, আর বলতে হবে না । অসামান্য মেয়ে । সেইজন্যে বলেছি। ওকে সেই বারাসতের মেয়ে-স্কুলের হেড়মিসট্রেস করে দাও । তারা তো কতবার ধরাধরি করেছে।” “বারাসতের মেয়ে ইস্কুল ? কেন, আন্ডামােনও তো আছে।” “না, ঠাট্ট নয়। সরলাকে তোমার বাগানের আর যে-কোনো কাজ দিতে হয় দিয়ে, কিন্তু ঐ অর্কিড-ঘরের কাজ দিতে পারবে না ।” “কেন, হয়েছে কী ” “আমি তোমাকে বলে দিচ্ছি, সরলা অর্কিড। ভালো বোঝে না ।” “আমিও তোমাকে বলছি, আমার চেয়ে সরলা ভালো বোঝে । মেসোেমশায়ের প্রধান শখ ছিল অর্কিডে । তিনি নিজের লোক পাঠিয়ে সেলিবিস থেকে, জাভা থেকে, এমন-কি, চীন থেকে অৰ্কিড আনিয়েছেন, তার দরদ বোঝে এমন লোক তখন ছিল না ।” কথাটা নীরজা জানে, সেইজন্যে কথাটা তার অসহ্য । “আচ্ছা আচ্ছা, বেশ বেশ, ও না হয় আমার চেয়ে ঢের ভালো বোঝে, এমন-কি, তোমার চেয়েও ৷ তা হােক, তবু বলছি। ঐ অর্কিন্ডের ঘর শুধু তোমার আমার, ওখানে সরলার কোনো অধিকার নেই । তোমার সমস্ত বাগানটা ওকেই দিয়ে দাও-না। যদি তোমার নিতান্ত ইচ্ছে হয় ; কেবল খুব অল্প একটু কিছু রেখো যেটুকু কেবল আমাকেই উৎসর্গ করা। এতকাল পরে অন্তত এইটুকু দাবি করতে পারি। কপালদোষে না হয় আজ আছি বিছানায় পড়ে, তাই বলে-” কথা শেষ করতে পারলে না, বালিশে