পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

63 ।। 8SS আয় চলে গেলে ও পেনসিল নিয়ে একটা চিঠি লিখতে বসল। গণেশ এল । তাকে বললে, “চিঠি, পৌঁছিয়ে দিতে পারবে জেলখানায় সরলাদিদিকে ?” গণেশ গাঙ্গুলির কৃতিত্বের অভিমান ছিল। বললে, “পারব। কিছু খরচ লাগবে। কিন্তু কী লিখলে মা শুনি, কেননা পুলিসের হাত হয়ে যাবে চিঠিখানা।” । নীরজা পড়ে শোনালে, “ধন্য তোমার মহত্ত্ব । এবার জেলখানা থেকে বেরিয়ে যখন আসবে, তখন দেখবে তোমার পথের সঙ্গে আমার পথ মিলে গেছে।” গণেশ বললে, “ঐ যে পথটার কথা লিখেছি ভালো শোনাচ্ছে না। আমাদের উকিলবাবুকে দেখিয়ে ঠিক করা যাবে ।” গণেশ চলে গেল। নীরজা মনে মনে রমেনকে প্ৰণাম করে বললে, “ঠাকুরপো, তুমি আমার গুরু।” > ○ আদিত্য একটা পেয়ালায় ওষুধ নিয়ে ঘরে এসে প্রবেশ করলে । নীরজা বললে, “এ আবার কী ।” আদিত্য বললে, “ডাক্তার বলে গেছে ঘণ্টায় ঘণ্টায় ওষুধ খাওয়াতে হবে।” “ওষুধ খাওয়াবার জন্যে বুঝি আর পাড়ায় লোক জুটল না ! নাহয় দিনের বেলাকার জন্যে একজন নার্স রেখে দাও-না, যদি মনে এতই উদবেগ থাকে।” । “সেবার ছলে কাছে আসবার সুযোগ যদি পাই ছাড়ব কেন ।” “তার চেয়ে কোনো সুযোগে তোমার বাগানের কাজে যদি যাও তো ঢের বেশি খুশি হব। আমি পড়ে আছি, আর দিনে দিনে বাগান যে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।” “হােক-না নষ্ট । সেরে ওঠে আগে, তার পরে সেদিনকার মতো দুজনে মিলে কাজ করব।” “সরলা চলে গেছে, তুমি একলা পড়েছি, কাজে মন যাচ্ছে না। কিন্তু উপায় কী ? তাই বলে লোকসান করতে দিয়ে না ।” “লোকসানের কথা আমি ভাবছি নে নীরু । বাগান করাটা যে আমার ব্যাবসা সে কথা এতদিন তুমিই ভুলিয়ে রেখেছিলে, কাজে তাই সুখ ছিল। এখন মন যায় না।” “অমন করে আক্ষেপ করছি কেন । বেশ তো কাজ করছিলে এই সেদিন পর্যন্ত । কিছুদিনের জন্যে যদি বাধা পড়ে। তাই নিয়ে এত ব্যাকুল হােয়ে না।” “পাখাটা কি চালিয়ে দেব ।” "বাড়াবাড়ি কোরো না তুমি, এসব কাজ তোমাদের নয়। এতে আমাকে আরো ব্যস্ত করে তোলে। যদি কোনোরকম করে দিন কাটাতে চাও তোমাদের তো হটকালচরিসট ক্লাব আছে।” "তুমি যে রঙিন লিলি ভালোবাস, বাগানে অনেক খুঁজেছিলুম, একটাও পাই নি। এবারে ভালো বৃষ্টি হয় নি বলে গাছগুলোর তেজ নেই।” "কী তুমি মিছিমিছি বাকছ’। তার চেয়ে হলাকে ডেকে দাও, আমি শুয়ে শুয়েই বাগানের কাজ করব । তুমি কি বলতে চাও আমি শয্যাগত বলেই আমার বাগানও হবে শয্যাগত । শোনো আমার কথা । শুকনো সীজন ফুলের গাছগুলো উপড়িয়ে ফেলে সেখানে জমি তৈরি করিয়ে নাও । আমার সিঁড়ির নীচের ঘরে সরষের খোলের বস্তা আছে। হলার কাছে আছে তার চাবি।” "তাই নাকি, হলা তো এতদিন কিছুই বলে নি ।” "বলতে ওর রুচিবে কেন । ওকে কি তোমরা কম হেনস্তা করেছ। কঁচা সাহেব এসে প্ৰবীণ কের্মানিকে যেরকম গ্রাহ্য করে না সেইরকম আর কি।” • "হলা মালীর সম্বন্ধে সত্য কথা বলতে যদি চাই। তবে সেটা অপ্রিয় হয়ে উঠবে।” । “আচ্ছা, আমি এই বিছানায় পড়ে থেকেই ওকে দিয়ে কাজ করাব, দেখবে দু দিনেই বাগানের চেহারা ফেরে কি না। বাগানের ম্যাপটা আমার কাছে দিয়ে। আর আমার বাগানের ডায়রিটা। আমি