পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

o SR রবীন্দ্র-রচনাবলী এবং মৃৎপুত্তল, ছিন্নমূল শুষ্ক অতীত এবং উদভিন্ন কিশলয় জীবন্ত বর্তমান সমান সমাদর লাভ করেছে। ] শাস্ত্র যেখানে পড়ে আছে সেইখানে পড়েই আছে, এবং শাস্ত্রকে আচ্ছন্ন করে যেখানে সহস্ৰ প্ৰথাকীটের প্রাচীন বালীক উঠেছে সেখানেও কেউ অলস ভক্তিভরে হস্তক্ষেপ করে না। গ্রন্থের অক্ষর এবং গ্ৰন্থকীটের ছিদ্র দুই-ই এখানে সমান সম্মানের শাস্ত্র । এখানকার অশ্বখবিদীর্ণ ভগ্ন মন্দিরের মধ্যে দেবতা এবং উপদেবতা একত্রে আশ্রয় গ্রহণ করে বিরাজ করছে । এখানে কি তোমাদের জগৎযুদ্ধের সৈন্যশিবির স্থাপন করবার স্থান ! এখানকার ভগ্ন ভিত্তি কি তোমাদের কলকারখানা, তোমাদের অগ্নিশ্বসিত সহস্ৰবাহু লীেহদানবের কারাগার নির্মাণের যোগ্য। তোমাদের অস্থির উদ্যমের বেগে এর প্রাচীন ইষ্টকগুলিকে ভূমিসাৎ করে দিতে পার বটে, কিন্তু তার পরে পৃথিবীর এই অতিপ্রাচীন শয্যাশায়ী জাতি কোথায় গিয়ে দাড়াবে। এই নিশ্চেষ্ট নিবিড় মহানগর।ারণ্য ভেঙে গেলে সহস্ৰ মৃত বৎসরের যে একটি বৃদ্ধ ব্ৰহ্মদৈত্য এখানে চিরনিভৃত আবাস গ্ৰহণ করেছিল সেও যে সহসা নিরাশ্রয় হয়ে পড়বে | এরা বহুদিন স্বহস্তে গৃহনির্মাণ করে নি, সে অভ্যাস। এদের নেই, এদের সমধিক চিন্তাশীলগণের সেই এক মহৎ গর্ব। তারা যে কথা নিয়ে লেখনীপুচ্ছ আস্ফালন করে সে কথা অতি সত্য, তার প্রতিবাদ করা কারও সাধ্য নয় । বাস্তবিকই অতিপ্ৰাচীন আদিপুরুষের বাস্তুভিত্তি এদের কখনো ছাড়তে হয় নি। কালক্রমে অনেক অবস্থা-বৈসাদৃশ্য, অনেক নূতন সুবিধা-অসুবিধার সৃষ্টি হয়েছে ; কিন্তু সবগুলিকে টেনে নিয়ে মৃতকে এবং জীবিতকে, সুবিধা এবং অসুবিধাকে প্ৰাণপণে সেই পিতামহ-প্রতিষ্ঠিত এক | ভিত্তির মধ্যে ভুক্ত করা হয়েছে। অসুবিধার খাতিরে এরা কখনো স্পর্ধিতভাবে স্বহস্তে নুতন গৃহ নিৰ্মাণ বা পুরাতন গৃহসংস্কার করেছে এমন গ্লানি এদের শত্রুপক্ষের মুখেও শোনা যায় না । যেখানে গৃহছাদের মধ্যে ছিদ্র প্রকাশ পেয়েছে সেখানে অযত্নসভূত বটের শাখা কদাচিৎ ছায়া দিয়েছে, কালসঞ্চিত মৃত্তিকাস্তরে কথঞ্চিৎ ছিদ্ররোধ করেছে। এই বনলক্ষ্মীহীন ঘন বনে, এই পুরলক্ষ্মীহীন ভগ্ন পুরীর মধ্যে, আমরা ধুতিটি চাদরটি পরে অত্যন্ত মৃদুমন্দভাবে বিচরণ করি, আহারান্তে কিঞ্চিৎ নিদ্ৰা দিই, ছায়ায় বসে তাস-পাশা খেলি, যা-কিছু অসম্ভব এবং সাংসারিক কাজের বাহির তাকেই তাড়াতাড়ি বিশ্বাস করতে ভালোবাসি, যা-কিছু কার্যোপযোগী এবং দৃষ্টিগোচর তার প্রতি মনের অবিশ্বাস কিছুতে সম্যক দূর হয় না, এবং এরই উপর কোনো ছেলে সুমিত্র সকল প্রকাশ করে তা হলে আমরা সকেল বিলে মাথা লক্ষ বলি। সৰ্ব্বতাঙ্ক এমন সময় তোমরা কোথা থেকে হঠাৎ এসে আমাদের জীৰ্ণ পঞ্জরে গোটা দুই-তিন প্রবল খোচা দিয়ে বলছ ; ওঠে ওঠে ; তোমাদের শয়নশালায় আমরা আপিস স্থাপন করতে চাই । তোমরা ঘুমচ্ছিলে বলে যে সমস্ত সংসার ঘুমচ্ছিল তা নয় । ইতিমধ্যে জগতের অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে। ঐ ঘণ্টা বাজছে, - এখন পৃথিবীর মধ্যাহ্নকাল, এখন কর্মের সময় । তাই শুনে আমাদের মধ্যে কেউ কেউ ধড়ফড় করে উঠে “কোথায় কর্ম ‘কোথায় কর্ম করে গৃহের চার কোণে ব্যস্ত হয়ে বেড়াচ্ছে এবং ওরই মধ্যে যারা কিঞ্চিৎ স্থূলকায় স্ফীত স্বভাবের লোক তারা পাশমোড়া দিয়ে বলছে : কে হে ! কর্মের কথা কে বলে । তা, আমরা কি কর্মের লোক নই বলতে চাও । ভারি ভ্ৰম । ভারতবর্ষ ছাড়া কর্মস্থান কোথাও নেই। দেখো-না কেন, মানব-ইতিহাসের প্রথম যুগে এইখানেই আৰ্য বর্বরের যুদ্ধ হয়ে গেছে ; এইখানেই কত রাজ্যপত্তন, কত নীতিধর্মের অভ্যুদয়, কত সভ্যতার সংগ্ৰাম হয়ে গেছে। অতএব কেবলমাত্র আমরাই কর্মের লোক, অতএব আমাদের অর্থ কর্ম করতে বােলো না। যদি অবিশ্বাস হয় তবে তোমরা বরং এক কাজ করো— তোমাদের তী* ঐতিহাসিক কোদালখানা দিয়ে ভারতভূমির যুগসঞ্চিত বিস্মৃতির স্তর উঠিয়ে দেখো মানবসভ্যতার ভিত্তিতে কোথায় আমাদের হস্তচিহ্ন আছে। আমরা ততক্ষণ অমনি আর-একবার ঘুমিয়ে নিই। এইরকম করে আমাদের মধ্যে কেউ কেউ অর্ধ-অচেতন জড় মুঢ় দাম্ভিক -ভাবে ঈষৎ-উন্মলিত ਜੇਸ਼ਨਬੇਲ ਸ਼