পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

अभी७ (లి কাপড় না পরিয়া উলকি পরে সেখানেও উলকির ইতারবিশেষে ভদ্র অভদ্র চিহ্নিত হয়। ইংরেজি ভদ্রকাপড়ের সেই আদর্শ আমরা কোথা হইতে সংগ্ৰহ করিব । তাহা আমাদের ঘরের মধ্যে আমাদের সমাজের মধ্যে নাই। সে-আদর্শ আমরা নিজের ভদ্রতাগীেরবে আমাদের নিজের সুরুচি ও সুবিচারের দ্বারা, আমাদের আপনাদের ভদ্রমণ্ডলীর সাহায্যে স্বাধীনভাবে গঠিত করিতে পারি না। আমাদিগকে ভদ্র সাজিতে হয়। পরের ভদ্রতা-আদর্শ অনুসন্ধান করিয়া লইয়া । যাহাদের নিকট হইতে অনুসন্ধান এবং ধার করিয়া লইতে হইবে, তাহাদের সমাজে আমাদের গতিবিধি নাই। তাহদের দোকান হইতে আমরা ঈভনিং কোর্তা কিনি, কিন্তু তাহদের নিমন্ত্রণে সেটা ব্যবহার করিবার সুযোগ পাই না । এমন অবস্থায় ক্ৰমে দোকানে-কেনা আদর্শ হইতেও ভ্ৰষ্ট হইতে হয়। ক্রমে কলারের শুভ্রতায় টাইয়ের বন্ধনে প্যােন্টলুনের পরিধিতে শৈথিল আসিয়া পড়ে। শুনিতে পাই ইংরেজিবেশী বাঙালির মধ্যে এমন দৃষ্টান্ত আজকাল প্ৰায় দেখা যায় । একে বিলাতি সাজ স্বভাবতই বাঙালিদেহে অসংগত, তাহার উপরে যদি তাহাতে ভদ্ৰোচিত পারিপাট্য না থাকে, তবে তাঁহাতে হামিও আসে অবজ্ঞাও আনে। এ কথা সহজেই মুখে আসে যে, যদি পরিতে না জান এবং শক্তি না থাকে, তবে পরের কাপড়ে সাজিয়া বেড়াইবার দরকার কী ছিল । ইংরেজি কাপড়ে “খেলো” হইলে যত খেলো এবং যত দীন দেখিতে হয়, এমন দেশী কাপড়ে নয় । তাহার একটা কারণ ইংরেজি সাজে সারল্য নাই, তাহার মধ্যে আয়োজন এবং চেষ্টার বাহুল্য আছে। ইংরেজি কাপড় যদি গায়ে ফিট না হইল, যদি তাহাতে টানাটানি প্ৰকাশ পাইল, তবে তাহা ভদ্রতার পক্ষে অত্যন্ত বেআবরু হইয়া পড়ে ; কারণ, ইংরেজি কাপড়ের আগাগোড়ায় গায়ে ফিট করিবার চরম উদ্দেশ্য, দেহটাকে খোসার মতো মুড়িয়া ফেলিবার সযত্ন চেষ্টা সর্বদা বর্তমান । সুতরাং প্যান্টলুন যদি একটু খাটাে হয়, কোিট যদি একটু উঠিয়া পড়ে, তবে নিজেকেই ছােটাে বলিয়া মনে হয়, সেইটুকুতেই আত্মসম্মানের লাঘব হইতে থাকে- যে-ব্যক্তি এ সম্বন্ধে অজ্ঞতাসুখে অচেতন, অন্যলোকে তাহার হইয়া লজা বোধ করে । যাহারা আজকাল ইংরেজি বস্ত্ৰ ধরিয়াছেন লক্ষ্মী তঁহাদের প্রতি সুপ্ৰসন্ন থাকুন, তাহাদিগকে কখনো যেন চাঁদনিতে ঢুকিতে না হয়। কিন্তু তীহাদের পুত্রপৌত্রেরা সকলেই যে র্যানকিনের বাড়ি গতিবিধি রক্ষা করিয়া চলিতে পরিবে, এমন আশা কিছুতেই করা যায় না। অথচ পৈতৃক বেশের সহিত পৈতৃক দুর্বলতাটুকুও যদি তাহারা পায়, সাহেবিয়ানা পরিহার করিবার শক্তি যদি তাঁহাদের না থাকে, তবে তাহাদের সম্মুখে দারুণ চুনাগলি ছাড়া আর কিছুই দেখিতে পাই না। যাহারা বিলাতে গিয়াছেন তাহারা বিলাতি বসনভূষণের অন্ধিসন্ধি কতকটা বুঝিয়া চলিতে পারেন ; যাহারা যান নাই তাহারা অনেক সময় অদ্ভুত কাণ্ড করেন। তাহারা দাৰ্জিলিঙের প্রকাশ্যপথে ড্রেসিংগাউন পরিয়া বেড়ান, এবং ছোটাে কন্যাকে মলিন সাদা ফুলমোজার উপরে বিলাতি ফ্রক এবং টুপি উলটা করিয়া পরাইয়া সভায় লইয়া আসেন । f এ সম্বন্ধে দুটাে কথা আছে। প্রথমে ঠিক দস্তুর-মতো ফ্যাশান-মতো কাপড় পরিতেই হইবে, এমন । কী মাথার দিব্য আছে। এ কথাটা খুব বড়োলোকের, খুব স্বাধীনচেতার মতো কথা বটে। দশের দাসত্ব, প্রথার গোলামি, এ-সমস্ত ক্ষুদ্রতাকে ধিক। কিন্তু এ স্বাধীনতার কথা তাহাকে শোভা পায় না। যে-লোক গোড়াতেই বিলাতি সাজ পরিয়া অনুকরণের দাসখত আপাদমস্তকে লিখিয়া রাখিয়াছে। পাঠা যদি | নিজের হয়, তবে তাঁহাকে কাটা সম্বন্ধেও স্বাধীনতা থাকে ; নিজেদের ফ্যাশানে যদি চলি, তবে তাহাকে । লঙ্ঘন করিয়াও মহত্ত্ব দেখাইতে পারি। পরের পথেও চলিব, আবার সে-পথ কলুষিতও করিব, এমন । বীরত্বের মহত্ব বােঝা যায় না। . . আর-একটা কথা এই যে, যেমন ব্রাহ্মণের পইতা তেমনই বিলাতফেরতের বিলাতি কাপড়, ওটা সাম্প্রদায়িক লক্ষণরূপে স্বতন্ত্র করা কর্তব্য। কিন্তু সে বিধান চলিবে না। গােড়ায় সেইমতেই ছিল । বটে, কিন্তু আজকাল সমুদ্র পার না হইয়াও অনেকে চিহ্নধারণ করতে শুরু করিয়াছেন। আমাদের