পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শিক্ষা (፩ ዓ ዒ যাহতে সেই শিক্ষা সম্পূর্ণ হইতেছিল না এবং প্রস্তাবিত বিদ্যালয়ে সেই ভাবটিকে কোথায় স্থান দেওয়া হইতেছে । জাতীয় শিক্ষাপরিষৎ শুধু যদি কারুবিদ্যালয়-স্থাপনের জন্য প্রতিষ্ঠিত হইত। তাহা হইলে বুঝিতাম যে, একটা বিশেষ সংকীর্ণ প্রয়োজন সাধন করাই ইহার উদ্দেশ্য। কিন্তু যখন দেখা যাইতেছে সাধারণত দেশের সমস্ত শিক্ষার প্রতি পরিষৎ দৃষ্টি রাখিতে চান তখন এই জিজ্ঞাসা মনে উঠে যে কোন ভাবে এই শিক্ষাকার্য চলিবে । কোন নিয়মে চলিবে এবং কী কী বই পড়ানাে হইবে সে-সমস্ত বাহিরের কথা । ইহার উত্তরে যদি কেহ বলেন “জাতীয়” ভাবে শিক্ষা দেওয়া হইবে, তবে প্রশ্ন উঠিবে শিক্ষা সম্বন্ধে জাতীয় ভােব বলিতে কী বুঝায় । “জাতীয়” শব্দটার কোনো সীমা নির্দেশ হয় নাই, হওয়াও শক্ত । কোনটা জাতীয় এবং কোনটা জাতীয় নহে, শিক্ষা সুবিধা ও সংস্কার অনুসারে ভিন্ন লোকে তাহা ভিন্ন অতএব শিক্ষাপরিষদের মূল ভাবটি সম্বন্ধে গোড়াতেই দেশের লোকে সকলে মিলিয়া একটা বোঝাপড়া হওয়া দরকার। ইংরেজ সরকারের প্রতি রাগ করিয়া আমরা এই কাজে প্ৰবৃত্ত হইয়াছি। এ কথা এক মুহুর্তের জন্য মনে স্থান দিতে পারি না। দেশের অন্তঃকরণ একটা-কিছু অভাব বোধ করিয়াছিল, একটা-কিছু চায়, সেইজন্যই আমরা দেশের সেই ক্ষুধা নিবৃত্তি করিতে একত্র হইয়াছি। এই কথাই সত্য । আমরা চাই- কিন্তু কী চাই তাহা বাহির করা যে সহজ। তাহা মনে করি না । এই সম্বন্ধে সত্য আবিষ্কারের পরেই আমাদের উদ্ধার নির্ভর করে। যদি ভুল করি, যেটা হাতের কাছেই আছে, আমরা যেটাতে অভ্যস্ত, জড়ত্বাবশত যদি সেইটোকেই সত্য মনে করি তবে বড়ো বড়ো নাম আমাদিগকে বিফলতা হইতে রক্ষা করিতে পরিবে না । এইজন্য শিক্ষাপরিষদের প্রতিষ্ঠাতাগণ যখন উদযোগে প্রবৃত্ত আছেন তখন দেশের সর্বসাধারণের তরফ হইতে নিজের চিত্ত নিজের অভাব বুঝিবার জন্য একটা আলোচনা হওয়া উচিত । । সেই আলোচনাকে জাগাইয়া তোলাই আমার এই রচনার প্রধান উদ্দেশ্য । এই উপলক্ষে, ; যে-ভাবটি আমার মনের সম্মুখে জাগ্রত হইয়া উঠিয়াছে তাহাকে দেশের দরবারে উপস্থিত করা আমার কর্তব্য। যদি শিক্ষিত সমাজের প্রচলিত সংস্কারের সঙ্গে ইহার বিরোধ বাধে তবে ইহা গ্রাহ্য হইবে না, জানি । যদি গ্রাহ্য না হয় তবে আপনাদের একটা সুবিধা আছে- আপনারা সমস্তটাকে কবিকল্পনার আকাশকুসুম বলিয়া অতি সংক্ষেপেই বর্জন করিতে পরিবেন এবং আমিও ব্যর্থ কবিদের সান্তুনাস্থল “পস্টারিটি” অৰ্থাৎ কোনো একটা অনির্দিষ্ট উত্তরকালের মধ্যে আমার অনাদৃত প্ৰস্তাবটির ভাবী সদগতি কল্পনা করিয়া আশ্বাস-লাভের চেষ্টা করিব। কিন্তু তৎপূর্বে আজ। আপনাদের নিকট বহুল পরিমাণে ধৈর্য । ও ক্ষমা সানুনয়ে প্রার্থনা করি । ইস্কুল বলিতে আমরা যাহা বুঝি সে একটা শিক্ষা দিবার কল। মাস্টার এই কারখানার একটা অংশ | সাড়ে দশটার সময় ঘণ্টা বাজাইয়া কারখানা খোলে। কল চলিতে আরম্ভ হয়, মাস্টারেরও মুখ চলিতে থাকে। চারটের সময় কারখানা বন্ধ হয়, মাস্টার-কলও তখন মুখ বন্ধ করেন, ছাত্ররা দুই-চার পাত কলে-ইটা বিদ্যা লইয়া বাড়ি ফেরে। তার পর পরীক্ষার সময় এই বিদ্যার যাচাই হইয়া তাহার উপরে মার্কা পড়িয়া যায়। কলের একটা সুবিধা, ঠিক মাপে ঠিক ফরমাশ-দেওয়া জিনিসটা পাওয়া যায়- এক কলের সঙ্গে আর-এক কলের উৎপন্ন সামগ্ৰীর বড়ো-একটা তফাত থাকে না, মার্কা দিবার সুবিধা হয় । । কিন্তু এক মানুষের সঙ্গে আর-এক মানুষের অনেক তফাত । এমনকি, একই মানুষের একদিনের সঙ্গে আর-একদিনের ইতার-বিশেষ ঘটে । তবু মানুষের কােছ হইতে মানুষ যাহা পায় কলের কােছ হইতে তাহা পাইতে পারে না। কল সম্মুখে উপস্থিত করে কিন্তু দান করে না - তাহা তেল দিতে পারে কিন্তু আলো জ্বালাইবার সাধ্য তাহার নাই। । যুরোপে মানুষ সমাজের ভিতরে থাকিয়া মানুষ হইতেছে, ইস্কুল তাহার কথঞ্চিৎ সাহায্য M1 vaa