পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শব্দতত্ত্ব ఆరి ঔকারের পরেও এ নিয়ম খাটে । কারণ ঔ- অ এবং উ-মিশ্রিত যুক্তস্বর ; যথা : কোটা- কীেটো সর্বশেষে বক্তব্য এই যে, বাংলার দুই-একটা উচ্চারণবিকার এমনই দৃঢ়মূল হইয়া গেছে যে, যেখানেই হউক তাহার অন্যথা দেখা যায় না ; যেমন ইকার এবং উকারের পূর্ববতী অ-কে আমরা সর্বত্রই 'ও' উচ্চারণ করি। সাধুভাষায় লিখিত কোনাে গ্ৰন্থ পাঠকালেও আমরা কটি এবং কটু শব্দকে কোটি এবং কোটু উচ্চারণ করিয়া থাকি । কিন্তু অদ্যকার প্রবন্ধে যে-সকল দৃষ্টান্ত দেওয়া গোল তৎসম্বন্ধে এ কথা খাটে না। আমরা প্রচলিত ভাষায় যদিও মুঠা-কে মুঠো বলি, তথাপি গ্রন্থে পড়িবার সময় মুঠা পড়িয়া থাকি ; চলিত ভাষায় বলি নিন্দে, সাধু ভাষায় বলি নিন্দা। অতএব এই দুই প্রকারের উচ্চারণের মধ্যে একটা শ্রেণীভেদ আছে। পাঠকদিগকে তাহার কারণ আলোচনা করিতে সবিনয় অনুরোধ করিয়া প্রবন্ধের উপসংহার করি । SNSETS S S SS বীমসের বাংলা ব্যাকরণ ইংরেজিতে একটা প্ৰবাদ আছে ভুল করা মানবধর্ম, বিশেষত বাঙালির পক্ষে ইংরেজি ভাষায় ভুল করা । সেই প্রবাদের বাকি অংশে বলে, মার্জনা করা দেবধর্ম। কিন্তু বাঙালির ইংরেজি-ভুলে ইংরেজরা সাধারণত দেবত্ব প্ৰকাশ করেন না । আমাদের ইস্কুলে-শেখা। ইংরেজিতে ভুল হইবার প্রধান কারণ এই যে, সে-বিদ্যা পুঁথিগত । আমাদের মধ্যে র্যাহারা দীর্ঘকাল বিলাতে বাস করিয়াছেন, তাহারা ইংরেজিভাষার ঠিক মর্মগ্রহ করিতে পারিয়াছেন । এইজন্য অনেক খাটি ইংরেজের ন্যায় তাহারা হয়তো ব্যাকরণে ভুল করিতেও পারেন, কিন্তু ভাষার প্রাণগত মর্মগত ভুল করা তাহাদের পক্ষে বিরল। এ দেশে থাকিয়া র্যাহারা ইংরেজি শেখেন, তাহারা কেহ কেহ ব্যাকরণকে বাচাইয়াও ভাষাকে বধ করিতে ছাড়েন না । ইংরেজগণ তাহাতে অত্যন্ত কৌতুক বোধ করেন । সেইজন্য আমাদেরও বড়ো ইচ্ছা করে, (যে-সকল ইংরেজ এ দেশে সুদীর্ঘকাল বাস করিয়া, দেশী ভাষা শিক্ষার বিশেষ চেষ্টা করিয়া ও সুযোগ পাইয়াও সে-ভাষা সম্বন্ধে ভুল করেন। তঁহাদের হাস্যরস বর্ষণ করিয়া পালটা জবাবে গায়ের ঝাল মিটাই । সন্ধান করিলে এ সম্বন্ধে দুই-একটা বড়ো বড়ো দৃষ্টান্তও পাওয়া যায়। বাবু ইংরেজির আদর্শ প্রায় অশিক্ষিত দরিদ্র উমেদারদিগের দরখাস্ত হইতে সংগ্ৰহ করা হইয়া থাকে । কিন্তু তাহদের সহিত বাংলার ভূতপূর্ব সিবিলিয়ান জন বীমস সাহেবের তুলনা হয় না। বীমস সাহেব চেষ্টা করিয়া বাংলা শিখিয়াছেন ; বাংলাদেশেই তাহার যৌবন ও প্রৌঢ়বয়স যাপন করিয়াছেন ; বহু বৎসর ধরিয়া বাঙালি সাক্ষীর জবানবন্দী ও বাঙালি মোক্তারের আবেদন শুনিয়াছেন এবং বাঙালি সাহিত্যেরও রীতিমত চর্চা করিয়াছেন এরূপ শুনা যায়। 鹼 কেবল তাঁহাই নয়, বীমস সাহেব বাংলাভাষার এক ব্যাকরণও রচনা করিয়াছেন । বিদেশী ভাষার ; ব্যাকরণ রচনা স্পর্ধার বিষয় ; পেটের দায়ে দরখাস্ত রচনার সহিত ইহার তুলনা হইতে পারে না । অতএব সেই ব্যাকরণে যদি পদে পদে এমন-সকল ভুল দেখা যায়, যাহা বাঙালি মাত্রেরই কাছে অত্যন্ত স্বাগত ঠেকে, তবে সেই সাহেবি অজ্ঞাতকে পরিহাস করিবার প্রলোভন সংবরণ করা কঠিন হইয়া কিন্তু যখন দেখি আজ পর্যন্ত কোনাে বাঙালি প্রকৃত বাংলা ব্যাকরণ রচনায় হস্তক্ষেপ করেন নাই। তখন প্রলোভন সংবরণ করিয়া লইতে হয়। আমরা কেন বাংলা ব্যাকরণ লিখিতে গিয়া সংস্কৃত