পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Wり>br রবীন্দ্র-রচনাবলী বীমস লিখিয়াছেন, ও এবং য় পরে পরে আসিলে তাহার উচ্চারণ প্ৰায় ইংরেজি w-র মতো হয় ; • যথা ওয়াশিল তলওয়ার ওয়ার্ড রেলওয়ে ইত্যাদি। একটা জায়গায় ইহার ব্যতিক্রম আছে, তাহা লক্ষ না করিয়া সাহেব একটি অদ্ভুত বানান করিয়াছেন ; তিনি ইংরেজি will শব্দকে উয়িল অথবা উইল না। লিখিয়া ওয়িল লিখিয়াছেন । ওয়া সর্বত্রই ইংরেজি w-র পরিবর্তে ব্যবহৃত হইতে পারে, কেবল এই ‘ও’ ইকারের পূর্বেউ না হইয়া যায় না। ব-এর সহিত যফলা যোগে দুই-তিন রকম উচ্চারণ হয় তাহা বীমস সাহেব ধরিয়াছেন, কিন্তু দৃষ্টান্তে অদ্ভুত ভুল করিয়াছেন। তিনি লিখিয়াছেন ব্যবহার-এর উচ্চারণ বেভার, ব্যক্তি-র উচ্চারণ বিক্তি, এবং ব্যতীত শব্দের উচ্চারণ বিতীত। - v - তাহা ছাড়া, কেবল ব-এর সঙ্গে যফলা যোগেই যে উচ্চারণবৈচিত্ৰ্য ঘটে তাহা নহে সকল বর্ণ সম্বন্ধেই এইরূপ । ব্যবহার শব্দের ব্য। এবং ত্যক্ত শব্দের ত্যা উভয়েই যফলার স্থলে যফলা-আকার উচ্চারণ হয়। ইকারের পূর্বে যফলার উচ্চারণ এ হইয়া যায়, ব্যক্তি এবং ব্যতীত তাহার দৃষ্টান্ত । নব্য ভব্য প্রভৃতি মধ্য বা শেষাক্ষরবর্তী যফলা আশ্রয়বৰ্ণকে দ্বিগুণিত করে মাত্র। ইকারের পূর্বে যফলা যেমন একার হইয়া যায়, তেমনই ক্ষ-ও একার গ্রহণ করে ; যেমন ক্ষতি শব্দকে কথিত ভাষায় খেতি উচ্চারণ করে । ইহার প্রধান কারণ, ক্ষ অক্ষরের উচ্চারণে আমরা সাধারণত যফলা যোগ করিয়া লই ; এইজন্য ক্ষমা শব্দের ইতর উচ্চারণ খ্যামা । আমরা বীমস সাহেবের ব্যাকরণবৃত উচ্চারণ-পর্যায় অনুসরণ করিয়া প্রসঙ্গক্রমে দুই-চারিটা কথা ংক্ষেপে বলিলাম । এ কথা নিশ্চিত যে, বাংলার উচ্চারণতত্ত্ব ও বর্ণবিকারের নিয়ম বাঙালির দ্বারা যথোচিত আলোচিত হয় নাই । পৌষ ১৩০৫ বাংলা বহুবচন সংস্কৃত ভাষায় সাত বিভক্তি প্রাকৃতে অনেকটা সংক্ষিপ্ত হইয়া আসিয়াছে। প্রাকৃতে চতুর্থী বিভক্তি নাই বলিলেই হয় এবং ষষ্ঠীর দ্বারাই প্ৰথম ব্যতীত অন্য সকল বিভক্তির কার্য সারিয়া লওয়া যাইতে পারে। আধুনিক ভারতবষীয় আর্যভাষাগুলিতে প্রাকৃতের এই নিয়মের প্রভাব দেখা যায়।” সংস্কৃত ষষ্ঠীর স্য বিভক্তির স্থানে প্রাকৃতে শ শ হ হাে হে হি বিভক্তি পাওয়া যায়। আধুনিক ভাষাগুলিতে এই বিভক্তির অনুসরণ করা যাক চহুবানহ পাস -চাদ : চহুবানের নিকট । সংসারহি পারা -কবীর : সংসারের পার । মুনিহি দিখাঈ -তুলসীদাস : মুনিকে দেখাইলেন । যুবরাজপদ রামহি দেহু। -তুলসীদাস : যুবরাজপদ রামকে দেও। কহােঁী সম খানাততারহ - চাঁদ ; তিনি খানতাতারকে কহিলেন । তত্তারাহ উপরন্হ -Šso : তাতারের উপরে । আদিহিতে সব কথা সুনাঈ -তুলসীদাস ; আদি হইতে তিনি সকল কথা শুনাইলেন । উক্ত উদাহরণ হইতে দেখা যাইতেছে। ষষ্ঠী বিভক্তির চিহ্ন প্রায় সকল বিভক্তির কােজ সারিতেছে। বাংলায় কী হয় দেখা যাক । বাংলায় যে-সকল বিভক্তিতে ‘এ’ যোগ হয় তাহার ইতিহাস প্রাকৃত হি-র মধ্যে পাওয়া যায়। সংস্কৃত- গৃহস্য, অপভ্রংশ প্রাকৃত- ঘরহে, বাংলা- ঘরে । সংস্কৃত তাম্রকস্য, অপভ্রংশ প্রাকৃত- তম্ব আহে, বাংলায়- তীবার (র্তাবাএ) । ১ প্রাকৃতের পরবতী সমুদয় সংস্কৃতমূলক ভারতবষীয় ভাষার উল্লেখস্থলে হার্নলে ‘গৌড়ীয় ভাষা' নাম ব্যবহার করিয়াছেন ; আমরাও তাহার অনুসরণ করিব ।