পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

V9 SqO রবীন্দ্র-রচনাবলী আকাই হাটের কৃষ্ণদাসাদি বাসায় । হইলা নিযুক্ত শ্ৰীবল্লভীকান্ত তায় । । এইরূপে, রামাদি জীবাদি হইতে ষষ্ঠীর র সংযোগে- রামদের জীবদের হইয়াছে, স্পষ্টই দেখা যায়। আদি শব্দের উত্তরে স্বার্থে ক যুক্ত হইয়া বৃক্ষাদিক জীবাদিক শব্দের সৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক। ফলত উদাহরণেও তাঁহাই পাওয়া যায় ; যথা, নরোত্তম বিলাসে, “রামচন্দ্রাদিক যৈছে গেলা বৃন্দাবনে । কবিরাজ খ্যাতি তার হইল যেমনে ৷” এই ক-এর গ—এ পরিণতিও সহজেই প্রতিপন্ন হইতে পারে । সুতরাং বৃক্ষাদিগ (বৃক্ষদিগ), জীবাদিগ (জীবদিগ) শব্দ পাওয়া যাইতেছে । এখন ষষ্ঠীর সংযোগে দিগের এবং কর্মের ও সম্প্রদানের চিহ্নে পরিণত কে-র সংযোগে দিগকে পদ উৎপন্ন হইয়াছে নিঃসংশয়ে বলা যাইতে পারে । সম্পূর্ণ নিঃসংশয়ের কথা নহে। কারণ, দীনেশবাবু কেবল অকারান্ত পদের দৃষ্টান্ত দিয়াছেন। ইকার-উকারান্ত পদের সহিত আদি শব্দের যোগ তিনি প্ৰাচীন বাংলা গ্ৰন্থ হইতে সংগ্ৰহ করিতে পারেন কি না সন্দেহ । এবং রামাদিগ হইতে রামদিগ হওয়া যত সহজ, কপ্যাদিগ হইতে কপি দিগ এবং ধেম্বাদিগ হইতে ধেনুদিগ হওয়া তত সহজ নহে। হিন্দিভাষার সহিত তুলনা করিয়া দেখা আবশ্যক। সাধু হিন্দি- ঘোড়োকা, কনীেজি— ঘোড়নকো, ব্ৰজভাষা- ঘোড়েীকীে অথবা ঘোড়নিকীে, মাড়োয়ারি- ঘোড়ারো, মেৱারিঘোড়াকে, গঢৱালি- ঘোড়োকো, অৱধি- ঘোড়ৱনকার, রিৱাই— ঘবাড়নকার, ভোজপুরি— ঘোড়নকি, মাগধী— ঘোড়নকের, মৈথিলী— ঘোড়নিক ঘোড়নিকর। উদ্ধৃত দৃষ্টান্তগুলিতে দেখা যাইতেছে, কা কো কের কর প্রভৃতি ষষ্ঠী বিভক্তি চিহ্নের বহুবচন নাই। বহুবচনের চিহ্ন মূল শব্দের সহিত সানুনাসিকরাপে যুক্ত । অপভ্রংশ প্রাকৃতে ষষ্ঠীর বহুবচনে হং হুং হিং বিভক্তি হয়। সংস্কৃত নরাণাং কৃতকঃ শব্দ অপভ্রংশ প্রাকৃতে নরহং কেরও এবং হিন্দিতে নরোকো হয়। সংস্কৃত ষষ্ঠী বহুবচনের আনাং হিন্দিতে বিচিত্র সানুনাসিকে পরিণত হইয়াছে। বাংলায় এ নিয়মের ব্যত্যয় হইবার কারণ পাওয়া যায় না। আমাদের মতে সম্পূর্ণ ব্যত্যয় হয় নাই। নিম্নে তাহার আলোচনায় প্রবৃত্ত হওয়া গেল। হিন্দিতে কর্তৃকারকে একবচন বহুবচনের ভেদচিহ্ন লুপ্ত হইয়া গিয়াছে। বিশেষরূপে বহুবচন বুঝাইতে হইলে লোগগণ প্রভৃতি শব্দ অনুযোজন করা হয়। প্রাচীন বাংলারও এই দশা ছিল, পুরাতন কাব্যে তাহার প্রমাণ আছে ; দেখা গিয়াছে, সব সকল প্রভৃতি শব্দের অনুযোজনাদ্বারা বহুবচন নিম্পন্ন হইত। কিন্তু হিন্দিতে দ্বিতীয়া তৃতীয়া প্রভৃতি বিভক্তির চিহ্ন যোগের সময় শব্দের একবচন ও বহুবচন রূপ লক্ষিত হয় ; যথা, ঘোড়েকে- একটি ঘোড়াকে, ঘোড়োকে- অনেক ঘোড়াকে । ঘোড়ে একবচনরাপ এবং ঘোড়ো বহুবচনরাপ । । পূর্বে এক স্থলে উল্লেখ করিয়াছি যে, প্রাকৃত একবচন ষষ্ঠীবিভক্তিচিহ্ন হে হি স্থলে বাংলায় একার দেখা যায় ; যথা অপভ্ৰংশ প্রাকৃত- ঘরহে, বাংলায় ঘরে । 鸣 হিন্দিতেও এইরূপ ঘটে । ঘোড়ে শব্দ তাহার দৃষ্টান্ত । প্রাকৃতের প্রথা অনুসারে প্রথমে গৌড়ীয় ভাষায় বিভক্তির মধ্যে ষষ্ঠীবিভক্তিচিহ্নই একমাত্র অবশিষ্ট ছিল ; অবশেষে ভাবাপরিস্ফুটনের জন্য সেই ষষ্ঠীবিভক্তির সহিত সংলগ্ন করিয়া ভিন্ন ভিন্ন কারক জ্ঞাপক শব্দযোজনা প্রবর্তিত হইল । । বাংলায় এই নিয়মের লক্ষণ একেবারে নাই তাহা নহে। হাতর না বলিয়া বাংলায় হাতের বলে, ভুল বুলিয়া ভাইয়ের বলে মুখতে না বলিয়া মুখেতে এবং বিকল্প পাতে এবং পাছতে জ্ঞা থাকে । প্রথমে, হাতে ভাইয়ে মুখে পায়ে রূপ করিয়া তাহাতের তে প্রভৃতি বিশেষ বিভক্তি যোগ হইয়াছে।