পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

VNR NR রবীন্দ্র-রচনাবলী বাণী । প্রাচীন পাঞ্জাবিতে ছিল ডা। আমাদের দিগের শব্দের দ-কে এই পাঞ্জাবি দ-এর সহিত এক করিয়া দেখা যাইতে পারে । ঘোড়াদা-কের- ঘোড়াদিগের । বীমস সাহেবের মতে পাঞ্জাবি এই দা শব্দ সংস্কৃত তন শব্দের অপভ্রংশ। তন শব্দের যোগে সংস্কৃত পুরাতন সনাতন প্রভৃতি শব্দের সৃষ্টি । প্রাকৃতেও ষষ্ঠীবিভক্তির পরে কের এবং তণ উভয়ের ব্যবহার আছে ; হেমচন্দ্ৰে আছে, সম্বন্ধিনঃ কেরতণীে । মেৱারি তাণো তণু এবং বহুবচনে তাঁর্ণা ব্যবহার হইয়া থাকে । তণা-র উত্তর কের শব্দ যোগ করিলে “তণাকের’ রূপে দিগের শব্দের মিল পাওয়া যায়। প্ৰাচীনকাব্যে অধিকাংশ স্থলে সব শব্দ যোগ করিয়া বহুবচন নিম্পন্ন হইত । এখনো বাংলায় সব শব্দের যোগ চলিত আছে। কাব্যে তাহার দৃষ্টান্ত : পাখিসব করে রব রাতি পোহাইল । কিন্তু কথিত ভাষায় উক্তপ্রকার কাব্যপ্রয়োগের সহিত নিয়মের প্রভেদ দেখা যায় । কাব্যে আমাসব, তোমাসব, পাখিসব প্রভৃতি কথায় দেখা যাইতেছে সব শব্দই বহুবচনের একমাত্র চিহ্ন, কিন্তু কথিত ভাষায় অন্য বহুবচনবিভক্তির পরে উহা বাহুল্যরূপে ব্যবহৃত হয়— আমরা সব, তোমরা সব, পাখিরা সব ; যেন, আমরা তোমরা পাখিরা “সব’ শব্দের বিশেষণ । ইহা হইতে আমাদের পূর্বের কথা প্রমাণ হয়, রা বিভক্তি বহুবচনবাচক বটে কিন্তু উহা মূলে সম্বন্ধবাচক । “পাখিরা সব’ অর্থ পাখিসম্বন্ধীয় সমষ্টি । ইহা হইতে আর-একটা দেখা যায়, বিভক্তির বাহুল্যপ্রয়োগ আমাদের ভাষার প্রকৃতিবিরুদ্ধ নহে। লোকেদের শব্দকে বিশ্লেষণ করিলে দেখিতে পাই, প্রথমত লোকে শব্দের এ প্রাচীন ষষ্ঠীবাচক, তাহার পর দা শব্দ অপেক্ষাকৃত আধুনিক ষষ্ঠীবিভক্তি, তাহার পর কের শব্দ সম্বন্ধবাচক বাহুল্যপ্রয়োগ । মৈথিলীভাষায় সব শব্দ যোগে বহুবচন নিম্পন্ন হয় । কিন্তু তাহার প্রয়োগ আমাদের প্রাচীন কাব্যের ন্যায় । নেনাসভা অর্থে বালকেরা সব, নেনিসভ- বালিকারা সব ; কিন্তু এ সম্বন্ধে মৈথিলীর সহিত বাংলার তুলনা হয় না। কারণ, মৈথিলীতে অন্য কোনোপ্রকার বহুবচনবাচক বিভক্তি নাই । বাংলায় রা বিভক্তিযোগে বহুবচন সমস্ত গৌড়ীয় ভাষা হইতে স্বতন্ত্র, কেবল নেপালি হেরু বিভক্তির সহিত তাহার সাদৃশ্য আছে। কিন্তু রা বিভক্তিযোগে বহুবচন কেবল সচেতন পদার্থ সম্বন্ধেই খাটে । আমরা বাংলায় ফলেরা পাতারা বলি না । এই কারণেই ফলেরা সব, পাতারা সব, এমন প্রয়োগ সম্ভবপর নহে । মৈথিলী ভাষায় ফলসভ, কথাসভ, এরূপ ব্যবহারের বাধা নাই । বাংলায় আমরা এরূপ স্থলে ফলগুলা সব, পাতাগুলা সব, বলিয়া থাকি । সচেতন পদাৰ্থ বুঝাইতে লোকগুলা সব, বানরগুলা সব বলিতেও দোষ নাই । অতএব দেখা যাইতেছে গুলা যোগে বাংলায় সচেতন অচেতন সর্বপ্রকার বহুবচনই সিদ্ধ হয় । এক্ষণে এই গুলা শব্দের উৎপত্তি অনুসন্ধান করা আবশ্যক । , নেপালি বহুবচনবিভক্তি হেরু শব্দের উৎপত্তি প্ৰাকৃতভাষায় কেরউ হইতে । অন্মাহং কেরউ—— আমাদিগের । কেরউ— কেরু- হেরু । বাংলা বা যেমন সম্বন্ধবাচক হইতে বহুবচনবাচক পরিণত হইয়াছে, নেপালি হেরু শব্দেরও স্টে নেপালিতে কেরু শব্দের কে হে হইয়াছে, বাংলায় তাহা গে হইয়াছে, দিগের শব্দে তাহার প্রমাণ আছে । る কেরু হইতে গেরু, গেরু হইতে গেলু, গোলু হইতে গুলু, গুলু হইতে গুলো ও গুলা হওয়া অসম্ভব নহে। এরূপ স্বরবর্ণবিপর্যােয়র উদাহরণ অনেক আছে ; বিন্দু হইতে বুদ তাহার একটি, মুদ্রিকা হইতে মাদুলি অন্যপ্রকারের (এই বুদ শব্দ হইতে বিন্দু-আকার মিষ্টান্ন বোদে শব্দের উদ্ভব) { ঘোড়কেরু নেপালিতে হইল ঘোড়াহেরু, বাংলায় হইল ঘোড়াগুলো । গুলি ও গুলিন শব্দ গুলা-র স্ত্রীলিঙ্গ। ক্ষুদ্র জিনিস বুঝাইতে এক সময়ে বঙ্গভাষায় স্ত্রীলিঙ্গ ব্যবহার