পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

NA KOO রবীন্দ্র রচনাবলী সুড়ৎ সো-র্সো সঁ্যাৎস্যাৎ । সঁ্যাৎসেঁতে । হাউহাউ হা-হা ইহাসফাস হিহি হিড়হিড় হু-হু হুটহাট হুড়াহুড় হুড়মুড় হুড়ৎ হুপহাপ হুস হুসন্থস হুসংহাস হাে হাে হােহো হ্যাহঁ্যা (কুকুর) হ্যাটহ্যাট হ্যাৎহ্যাৎ হাঙ্গসু-হুপূস হাপুড়-হুপুড় হুড়োমুড়ি । ধ্বনির অনুকরণে ধ্বনির বর্ণনা ইংরেজি ভাষাতেও আছে ; যথা bang|thudding-dong his ইত্যাদি । কিন্তু বাংলাভাষার সহিত তুলনায় তাহা যৎসামান্য। পূর্বেদ্ধত তালিকা দেখিলে তাহা প্ৰমাণ হইবে । কিন্তু বাংলাভাষার একটি অদ্ভুত বিশেষত্ব আছে, তৎপ্রতি পাঠকের মনােযোগ আকর্ষণ করিতে ইচ্ছা! করি । যে-সকল অনুভূতি শ্রুতিগ্রাহ্য নহে, আমরা তাহাকেও ধ্বনিরূপে বর্ণনা করিয়া থাকি । এরূপ ভিন্নজাতীয় অনুভূতি সম্বন্ধে ভাষাবিপর্যয়ের উদাহরণ কেবল বাংলায় নহে, সর্বত্রই পাওয়া যায় । ‘মিষ্ট বিশেষণ শব্দ গোড়ায় স্বাদ সম্বন্ধে ব্যবহৃত হইয়া ক্ৰমে মিষ্ট মুখ, মিষ্ট কথা, মিষ্ট গন্ধ প্রভৃতি নানা স্বতন্ত্র-জাতীয় ইন্দ্ৰিয়বোধ সম্বন্ধে প্ৰযুক্ত হইয়াছে। ইংরেজিতে loud শব্দ ধ্বনির বিশেষণ হইলেও বর্ণের বিশেষণরূপে প্রয়োগ হইয়া থাকে, যথা৷loud colour। কিন্তু এরূপ উদাহরণ বিশ্লেষণ করিলে অধিকাংশ স্থলেই দেখা যাইবে, এই শব্দগুলির আদিম ব্যবহার যতই সংকীর্ণ থাক, ক্রমেই তাহার অর্থের ব্যাপ্তি হইয়াছে। মিষ্ট শব্দ মুখ্যত স্বাদকে বুঝাইলেও এক্ষণে তাহার গৌণ অর্থ মনোহর দাড়াইয়াছে। কিন্তু আমাদের তালিকাধুত শব্দগুলি সে শ্রেণীর নহে। তাহাদিগকে অর্থবদ্ধ শব্দ বলা অপেক্ষা ধ্বনি বলাই উচিত । সৈন্যদলের পশ্চাতে যেমন একদল আনুযাত্রিক থাকে, তাহারা রীতিমত সৈন্য নহে অথচ সৈন্যদের নানাবিধ প্রয়োজন সরবরাহ করে, ইহারাও বাংলাভাষার পশ্চাতে সেইরূপ ঝাকে ঝাকে ফিরিয়া সহস্ৰ কৰ্ম করিয়া থাকে, অথচ রীতিমত শব্দশ্রেণীতে ভরতি হইয়া অভিধানকারের নিকট সম্মান প্ৰাপ্ত হয় নাই । ইহারা অত্যন্ত কাজের অথচ অখ্যাত অবজ্ঞাত । ইহারা না থাকিলে বাংলাভাষায় বর্ণনার পাঠ একেবারে উঠাইয়া দিতে হয়। পূর্বেই আভাস দিয়াছি, বাংলাভাষায় সকলপ্রকার ইন্দ্ৰিয়বোধই অধিকাংশস্থলে শ্রুতিগম্য ধ্বনির আকারে ব্যক্তি হইয়া থাকে । , গতির দ্রুততা প্ৰধানত চক্ষুরিন্দ্ৰিয়ের বিষয় ; কিন্তু আমরা বলি ধা করিয়া, সঁা করিয়া, বো করিয়া অথবা ভো করিয়া চলিয়া গেল ! তীর প্রভৃতি দ্রুতগামী পদাৰ্থ বাতাসে উক্তরূপ ধ্বনি করে, সেই ধ্বনি আশ্রয় করিয়া বাংলাভাষা চকিতের মধ্যে তীরের উপমা মনে আনয়ন করে । তীরবেগে চলিয়া গেল, বলিলে প্ৰথমে অর্থবোধ ও পরে কল্পনা উদ্রেক হইতে সময় লাগে ; সঁা শব্দের অর্থের বালাই নাই, সেইজন্য কল্পনাকে সে অব্যবহিত ভাবে ঠেলা দিয়া চেতাইয়া তোলে । ইহার আর-এক সুবিধা এই যে, ধ্বনিবৈচিত্র্য এত সহজে এত বৰ্ণনাবৈচিত্র্যের অবতারণা করিতে পারে যে, তাহা অর্থবদ্ধ শব্দদ্বারা প্ৰকাশ করা দুঃসাধ্য। সঁা করিয়া গেল, এবং গটগট করিয়া গেল, উভয়েই দ্রুতগতি প্রকাশ করিতেছে ; অথচ উভয়ের মধ্যে যে-পার্থক্য আছে, তাহা অন্য উপায়ে প্ৰকাশ করিতে গেলে হতাশ হইতে হয় । এক কাটা সম্বন্ধে কত বিচিত্ৰ বৰ্ণনা আছে। কচ করিয়া, কচাৎ করিয়া, কচকচ করিয়া কাঁটা ; কচাকচ কাটিয়া যাওয়া ; কুচ করিয়া, কট করিয়া, কটাৎ করিয়া, কটাস করিয়া, কঁ্যাচ করিয়া, থ্যাচ ধ্যাচ করিয়া, ঝড়াৎ করিয়া, এই সকল ভিন্ন ভিন্ন প্রয়োগে কাটা সম্বন্ধে যতপ্রকার বিচিত্ৰ ভাবের উদ্রেক করে, তাহার সূক্ষ্ম প্ৰভেদ ভাষান্তরে বি নিকট ব্যক্ত করা অসম্ভব । ইংরেজিতে গমনক্রিয়া ভিন্ন ভিন্ন ছবির জন্য বিচিত্র * OTCR- creep crawl sweep totter waddle ইত্যাদি। বাংলায় আভিধানিক শব্দে চলার বিচিত্র ছবি পাওয়া যায় না ; ছবি খুজিতে হইলে আমাদের অভিধান তিরস্কৃত শব্দগুলি ঘাটিয়া দেখিতে হয় । খটখট করিয়া, ঘটঘট করিয়া, খটখুটি