পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরিশিষ্ট । সমাজ r やbr> স্ত্রীপুরুষের অবস্থাপার্থক্য সম্বন্ধে আমার এই মত ; কিন্তু এর সঙ্গে স্ত্রীশিক্ষা ও স্ত্রীস্বাধীনতার কোনো বিরোধ নেই। মনুষ্যত্ব লাভ করবার জন্যে স্ত্রীলোকের বুদ্ধির উন্নতি ও পুরুষের হৃদয়ের উন্নতি, পুরুষের যথেচ্ছাচার ও স্ত্রীলোকের জড়সংকোচভাব পরিহার একান্ত আবশ্যক। অবশ্য, শিক্ষা সত্ত্বেও পুরুষ সম্পূর্ণ স্ত্রী এবং স্ত্রী সম্পূর্ণ পুরুষ হতে পারবে না এবং না হলেই বঁচা যায়। রমাবাই যখন বললেন, মেয়েরা সুবিধে পেলে পুরুষের কাজ করতে পারে, তখন পুরুষ উঠে বলতে পারত, পুরুষরা। অভ্যোস করলে মেয়েদের কাজ করতে পারত ; কিন্তু তা হলে এখন পুরুষদের যে-সব কাজ করতে হচ্ছে সেগুলো ছেড়ে দিতে হত । তেমনই মেয়েকে যদি ছেলে মানুষ না করতে হত তা হলে সে পুরুষের অনেক কাজ করতে পারত। কিন্তু এ ‘যদি’কে ভূমিসাৎ করা রমাবাই কিংবা আর কোনো বিদ্রোহী রমণীর কর্ম নয়। অতএব এ কথার উল্লেখ করা প্ৰগলভতা । রমাবাইয়ের বক্তৃতার চেয়ে আমার বক্তৃতা দীর্ঘ হয়ে পড়ল। রমাবাইয়ের বক্তৃতাও খুব দীর্ঘ হতে পারত, কিন্তু এখানকার বগির উৎপাতে তা আর হয়ে উঠল না । রামাবাই বলতে আরম্ভ করতেই তারা ভারি গোল করতে লাগল। শেষকালে বক্তৃতা অসম্পূর্ণ রেখে রমাবাইকে বসে পড়তে হল । । স্ত্রীলোকের পরাক্রম সম্বন্ধে রমণীকে বক্তৃতা করতে শুনে বীর পুরুষেরা আর থাকতে পারলেন না, র্তারা পুরুষের পরাক্রম প্রকাশ করতে আরম্ভ করলেন ; তর্জনগর্জনে অবলার ক্ষীণ কণ্ঠস্বরকে অভিভূত করে জয়গর্বে বাড়ি ফিরে গেলেন। আমি মনে মনে আশা করতে লাগলুম, আমাদের বঙ্গভূমিতে যদিও সম্প্রতি অনেক বীরপুরুষের অভ্যুদয় হয়েছে কিন্তু ভদ্ররমণীর প্রতি রূঢ় ব্যবহার করে এতটা প্রতাপ এখনো কারও জন্মায় নি । তবে বলা যায় না, নীচলোক সর্বত্রই আছে ; এবং নীচ শ্রেণীয়হীন শিক্ষা ভীরুদের এই একটা মহৎ অধিকার আছে যে, পঙ্কের মধ্যে বাস করে তারা অসংকোচে স্নাত দেহে পঙ্ক নিক্ষেপ করতে পারে ; মনে জানে, এরূপ স্থলে সহিষ্ণুতাই ভদ্রতার একমাত্র কৌলিক ধর্ম। মহারাষ্ট্রীয় শ্রোতৃবালকবর্গের প্রতি এতটা কথা বলা অসংগত হয়ে পড়ে— আমি কেবল প্রসঙ্গক্রমে এই কথাটা বলে রাখলুম। আক্ষেপের বিষয় এই, যাদের প্রতি এ কথা খাটে তারা এ ভাষা বােঝে না এবং তাদের যে-ভাষা তা ভদ্রসম্প্রদায়ের শ্রবণের ও ব্যবহারের অযোগ্য । পুনা জ্যৈষ্ঠ ১২৯৬ মুসলমান মহিলা সারসংগ্ৰহ কোনো তুরস্কবাসিনী ইংরেজরমণী মুসলমান নারীদিগের একান্ত দুরবস্থার যে বর্ণনা করিয়াছেন তাহা বিশেষ প্রমাণ না পাইলে সম্পূর্ণ বিশ্বাস করা উচিত জ্ঞান করি না। কিন্তু অসূৰ্যাম্পশ্যা জেনানার সুখদুঃখ । সত্যমিথ্যা কে প্রমাণ করিবে । তবে, আমাদের নিজের অন্তঃপুরের সহিত তুলনা করিয়া কতকটা বুঝা शशी | লেখিকা গল্প করিতেছেন, তিনি দুইটি মুসলমান অন্তঃপুরচারিণীর সহিত গল্প করিতেছেন এমন সময় হঠাৎ দেখিলেন, তাহাদের মধ্যে একজন তক্তার নীচে আর-একজন সিন্দুকের তলায় তাড়াতাড়ি হইয়াছিল। আমাদের দেশে ভ্রাতৃবধুর দৃষ্টিপথে ভাসুরের অভ্যুদয় হইলে কতকটা এইমতই বিপর্যয় ব্যাপার উপস্থিত হয়। নব্য মুসলমানেরা এইরূপ সতর্ক অবরোধ সম্বন্ধে বলিয়া থাকেন, “বহুমূল্য জহরৎ কি কেহ রাস্তার ধারে ফেলিয়া রাখে । তাহাকে এমন সাবধানে ঢাকিয়া রাখা আবশ্যক যে, সূৰ্যালোকেও তাহার জ্যোতিকে স্নান না করিতে পারে।” আমাদের দেশেও র্যাহারা বাক্যবিন্যাসবিশারদ তাহারা এইরূপ বড়ো বড়ো কথা বলিয়া থাকেন। র্তাহারা শাস্ত্রের শ্লোক ও কবিত্বের ছটার দ্বারা প্ৰমা