পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরিশিষ্ট । সমাজ ۹ ساوا দমনই সর্বোৎকৃষ্ট । অর্থাৎ মনোজ শক্তিকে নানা শক্তিতে রূপান্তরিত ও বিভক্ত করিয়া চালনা করার দ্বারাই কর্মসাধন এবং আত্মকর্তৃত্ব উভয়েরই চর্চা হয়— খোরাক বন্ধ করিয়া প্ৰবৃত্তির শ্বাসরোধ করা আধ্যাত্মিক আলস্যের একটা কীেশালমাত্র । তবে এমন কথা উঠিতে পারে যে, প্রাকৃতিক নিয়মানুসারে জীবমাত্রেরই আহারের প্রতি একটা আকর্ষণ আছে ; যদি মধ্যে মধ্যে এক-একদিন আহার রহিত করিয়া অথবা প্ৰত্যহ আহার হ্রাস করিয়া সেই আকর্ষণের বিরুদ্ধে সংগ্ৰাম করা যায়। তবে তদদ্বারা আত্মশক্তির চালনা হইয়া আধ্যাত্মিক বললাভ হয়। এ সম্বন্ধে কথা এই যে, মাঝিগিরিই যাহার নিয়ত ব্যবসায়, শখের দাঁড় টানিয়া শরীরচালনা তাহার পক্ষে নিতান্তই বাহুল্য । সংসারের নিত্যনৈমিত্তিক কাজে প্ৰতিদিনই এত সংযমচর্চার আবশ্যক এবং অবসর আছে যে শখের সংযম বাহুল্যমাত্র । এমন অনেক লোক দেখা যায়। র্যাহারা জপ তপ উপবাস ব্ৰতচারণে নানাপ্রকার সংযম পালন করেন, কিন্তু সাংসারিক বৈষয়িক বিষয়ে তাহাদের কিছুমাত্র সংযম নাই। শখের সংযমের প্রধান আশঙ্কাই তাই। লোকে মনে করে যখন সংযমচৰ্চার স্বতন্ত্র ক্ষেত্র কঠিনরূপে নির্দিষ্ট হইয়াছে তখন কর্মক্ষেত্রে ঢ়িলা দিলেও চলে । অনেক সময় ইহার ফল হয়, খেলায় সংযম এবং কাজে স্বেচ্ছাচারিতা, মুখে জপ এবং অন্তরে কুচক্রান্ত, ব্ৰাহ্মণকে দান এবং ব্যবসায়ে প্রতারণা, গঙ্গাস্নানের নিষ্ঠা এবং চরিত্রের অপবিত্ৰতা । যাহা হউক, কর্মানুষ্ঠানকেই যদি মনুষ্যের পক্ষে শ্রেষ্ঠ পথ বল, এবং কেবল ঘর-সংসার করাকেই একমাত্র কর্ম না বল, যদি ঘরের বাহিরেও সুবৃহৎ সংসার থাকে এবং সংসারের বৃহৎ কাৰ্যও যদি আমাদের মহৎ কর্তব্য হয় তবে শরীরকে নিকৃষ্ট ও অপবিত্ৰ বলিয়া ঘূণা করিলে চলিবে না ; তবে শারীরিক বল ও শারীরিক উদ্যমকে আধ্যাত্মিকতার অঙ্গ বলিয়া স্বীকার করিতে হইবে । তাহা হইলে বিচাৰ্য এই যে, শরীরের বলসাধনের পক্ষে সামিষ এবং নিরামিষ আহারের কাহার কিরূপ ফল সে বিষয়ে আমার কিছু বলা শোভা পায় না এবং ডাক্তারের মধ্যেও নানা মত। কিন্তু চন্দ্ৰনাথবাবু নিজ মত প্ৰকাশ করিয়াছেন । তিনি বলেন : নিরামিষ আহারে দেহ মন উভয়েরই হােপাপ পুষ্টি হয়, আমিষযুক্ত আহারে সেরূপ হয় না। আমরা এক শতাব্দীর উধ্বকাল একটি প্রবল আমিষাশী জাতির দেহমনের সাতিশয় পুষ্টি অস্থিমজ্জায় অনুভব করিয়া আসিতেছি, মতপ্রচারের উৎসাহে চন্দ্রনাথবাবু সহসা তাহাদিগকে কী করিয়া ভুলিয়া গেলেন বুঝিতে পারি না। তাহারাই কি আমাদিগকে ভোলে, না। আমরাই তাহাদিগকে ভুলিতে পারি ? তাহাদের দেহের পুষ্টি মুষ্টির অগ্রভাগে আমাদের নাসার সম্মুখে সর্বদাই উদ্যত হইয়া আছে, এবং তাঁহাদের মনের পুষ্টি যদি অস্বীকার করি তবে তাহাতে আমাদেরই বোধশক্তির অক্ষমতা প্ৰকাশ পায় । প্রমাণস্থলে লেখকমহাশয় হবিষ্যাশী অধ্যাপক পণ্ডিতের সহিত আমিষাশী নব্য বাঙালির তুলনা করিয়াছেন । এইরূপ তুলনা নানা কারণে অসংগত । প্রথমত, মুখের এক কথাতেই তুলনা হয় না। অনির্দিষ্ট আনুমানিক তুলনার উপর নির্ভর করিয়া সর্বসাধারণের প্রতি অকাট্য মত জারি করা যাইতে পারে না । দ্বিতীয়ত, যদি-বা স্বীকার করা যায় যে, অধ্যাপকপণ্ডিতেরা মাংসাশী যুবকের অপেক্ষা বলিষ্ঠ ও দীর্ঘজীবী ছিলেন, তথাপি আহারের পার্থক্যই যে সেই প্ৰভেদের কারণ তাহার কোনো প্ৰমাণ নাই । সকলেই জানেন অধ্যাপকপণ্ডিতের জীবন নিতান্তই নিরুদ্বেগ এবং আধুনিক যুবকদিগের পক্ষে གྱི་རྒྱུ་གལ་ বিষম উৎকণ্ঠার কারণ হইয়া পড়িয়াছে, এবং উদ্বেগ যেরূপ আয়ুক্ষয়কর এরূপ আর নহে । عـ " নিরামিষাশী শ্ৰীযুক্ত ঈশানচন্দ্র মুখোপাধ্যায় মহাশয় যতই বলিষ্ঠ ও নম্রপ্রকৃতি হউন-না কেন, র্তাহাকে “সাত্ত্বিক আহারের উৎকৃষ্টতার” প্রমাণস্বরূপে উল্লেখ করা লেখকমহাশয়ের পক্ষে যুক্তিসংগত হয় নাই। আমিও এমন কোনাে লোককে জানি যিনি দুইবেলা মাংস ভোজন করেন। অথচ তাহার মতো