পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরিশিষ্ট । সমাজ Ved Gł দাড়াইয়াছে এই কথা লইয়া যাহারা গৌরব করেন, তাহারা প্রকৃত মনুষ্যত্বের প্রতি অশ্রদ্ধা প্রকাশ করেন । স্বাধীনতা সম্বন্ধে যেমন, সত্য সম্বন্ধেও তেমনই । অল্প বয়সে অমিশ্র সত্যের প্রতি যেরূপ উজ্জ্বল শ্রদ্ধা থাকে কিঞ্চিৎ বয়স হইলে অনেকের তাহা মান হইয়া যায়। র্যাহারা বলেন, সত্য সকলের উপযোগী নয় এবং অনেক সময় অসুবিধাজনক এবং তাঁহা অধিকারীভেদে নানাধিক মিথ্যার সহিত মিশাইয়া বঁাটােয়ারা করিয়া দেওয়া আবশ্যক, র্তাহারা খুব পাকা কথা বলেন সন্দেহ নাই, কিন্তু এত পাকা কথা কোনো মানুষের মুখে শোভা পায় না । যে খাটি লোক, যাহার মন সাদা, যাহার পৌরুষ আছে, সে বলে, ফলাফল-বিচার আমার হাতে নাই, আমি যাহা সত্য তাহা বলিব, লোকে বুকুক আর না-ই বুকুক, বিশ্বাস করুক আর না-ই করুক । এখন কথা এই, আমরা নব্য বাঙালিরা আপনাদিগকে পুরাতন জাতি না নূতন জাতি, কী হিসাবে দেখিব । যেমন চলিয়া আসিতেছে তাই চলিতে দিব, না জীবনলীলা আর-একবার পালটাইয়া আরম্ভ করিব । যদি এমন বিশ্বাস হয় যে, পূর্বে আমরা কখনো একজাতি ছিলাম না, নূতন শিক্ষার সঙ্গে এই জাতীয় ভাবের নূতন আস্বাদ পাইতেছি ; ধীরে ধীরে মনের মধ্যে এক নূতন সংকল্পের অভ্যুদয় হইতেছে যে, আমাদের স্বদেশের এই সমস্ত সমবেতহাদয়কে অসীম কালক্ষেত্রের মাঝখানে পরিপূর্ণ আকারে উদভিন্ন করিয়া তুলিতে হইবে ; সমস্তের মধ্যে এক জীবনপ্রবাহ সঞ্চারিত করিয়া দিয়া এক অপূর্ব বলশালী বিরাট পুরুষকে জাগ্ৰত করিতে হইবে ; আমাদের দেশ একটি বিশেষ স্বতন্ত্র দেহ ধারণ করিয়া বিপুল নরসিমাজে আপনার স্বাধীন অধিকার লাভ করিবে ; এই বিশ্বব্যাপী চলাচলের হাটে অসংকোচে অসীম জনতার মধ্যে নিরলস নিভীক হইয়া আদান-প্ৰদান করিতে থাকিবে ; তাহার জ্ঞানের খনি, তাহার কর্মের ক্ষেত্র, তাহার প্রেমের পথ সর্বত্র উদঘাটিত হইয়া যাইবে- তবে মনের মধ্যে বিশ্বাস দৃঢ় করিতে হইবে ; তবে জাতির প্রথম সম্বল যে-স্বাধীনতা ও সত্যপ্রিয়তা, যাহাকে এক কথায় বীরত্ব বলে, বুড়ামানুষের মতো তর্ক করিয়া অভ্যাস আবশ্যক ও আশঙ্কার কথা তুলিয়া তাহাকে নির্বাসিত করিলে চলিবে না । যেখানে যুক্তির স্বাভাবিক অধিকার সেখানে শাস্ত্রকে রাজা করিয়া, যেখানে স্বভাবের পৈতৃক সিংহাসন সেখানে কৃত্রিমতাকে অভিষিক্ত করিয়া আমরা এতদিন সহস্ৰবাহু অধীনতা-রাক্ষসকে সমাজের দেবাসনে প্রতিষ্ঠিত করিয়া রাখিয়াছি ; স্বাধীন মনুষ্যত্বকে ধর্মে সমাজে দৈনিক ক্রিয়াকলাপে সূচ্যগ্ৰ ভূমিমাত্র না ছাড়িয়া দেওয়াতেই আমরা উচ্চ মনুষ্যত্ব জ্ঞান করিয়া আসিতেছি। যতদিন বিচ্ছিন্নভাবে আমরা নিজ নিজ গৃহপ্ৰাচীরের মধ্যে বদ্ধ হইয়া বাস করিতাম ততদিন এমন করিয়া চলিত । কিন্তু যদি একটা জাতি বাধিতে চাই, তবে যে-সকল প্ৰাচীন আরাধ্য প্রস্তর আমাদের মনুষ্যত্বের উপর চাপিয়া বসিয়া তাহার সমস্ত বল ও স্বাধীন পুরুষকার নিষ্পেষিত করিয়া দিতেছে, তাহাদিগকে যথাযোগ্য ভক্তি ও বিচ্ছেদবেদন -সহকারে বিসর্জন দেওয়া আবশ্যক । S ૨છે છે কর্তব্যনীতি অধ্যাপক হক্সলির মত ১ : জগতে দেখা যায়, সুখ দুঃখ প্ৰাণীদের মধ্যে ঠিক ন্যায়বিচার-মতে বণ্টন হয় না। প্রথমত, নিম্নশ্রেণীয় প্রাণীদের এতটুকু বিবেকবুদ্ধি নাই যাহাতে তাহারা দণ্ডপুরস্কারের স্বরূপ সুখদুঃখের অধিকারী হইতে পারে। তাহার পরে মানুষের মধ্যেও দেখিতে পাই পাপাচরণ করিয়াও কত লোকে উন্নতিলাভ করিতেছে এবং পূণ্যবাম দ্বারে দ্বারে অন্নভিক্ষা করিয়া ফিরিতেছে ; পিতার দােষে পুত্ৰ S Thomas H. Huxley, F.R.S., Evolution and Ethics.