পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ዓ SS রবীন্দ্র-রচনাবলী করিয়া গভীর ও স্থায়ী -রূপে দেশের অন্তরের মধ্যে ব্যাপ্ত হইতে পারে, এই ইচ্ছা র্যাহারা প্ৰকাশ করিয়াছেন তাহাদিগকে উদাহরণের দ্বারা বলা বাহুল্য যে, পূর্বে বাসুকির গাত্ৰকণ্ডু অপনােদনেচ্ছা! ভূমিকম্পের হেতু এইরূপ বিশ্বাস ছিল, এক্ষণে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূমিকম্পের অন্য কারণ প্রচার করিতেছে। আমাদের অভিপ্রায় এই যে, ভূমিকম্পের কাল্পনিক হেতুনির্ণয়ের মূলাচ্ছেদন করিতে হইলে ইংরেজিশিক্ষাকে সহজ স্বাভাবিক ও সাধারণের আয়ত্তগম্য করিতে হইবে, যাহাতে শিশুকাল হইতে তাহার সারা গ্ৰহণ করিতে পারি, যাহাতে বহুব্যয়ে ও সাংঘাতিক চেষ্টায় তাহাকে ক্রয় করিতে না হয়, যাহাতে অন্তঃপুরেও তাহার প্রবেশ সুলভ হয়। নতুবা শিক্ষিত লোকদের মধ্যেও বাসুকির গাত্ৰকণ্ডু ভূমিকম্পের কারণরূপে ফিরিয়া দেখা দেয় এমন উদাহরণের অভাব নাই। ইংরাজিশিক্ষায় কৃতবিদ্য শ্ৰীযুক্ত লোকেন্দ্রনাথ পালিত ইংরেজিশিক্ষার ফলাফল সম্বন্ধে যে কথা।” বলিয়াছেন “শিক্ষাসঙ্কট প্রবন্ধে তাহার উচিত অর্থ গ্রহণ হয় নাই, আমার এই বিশ্বাস। শিক্ষাটা কতদূর হয় বা না-হয়, ইহাই তাহার আলোচ্য বিষয় ছিল । তাহার সমস্ত প্ৰবন্ধে কোথাও তিনি বলেন নাই যে, পূর্বাপেক্ষা এক্ষণে লোক ঘুষ অধিক লইতেছে অথবা জাল করিতে অধিকতর পারদর্শিতা লাভ করিয়াছে। তিনি কেবল এই বলিয়াছেন যে, বর্তমান প্ৰণালীতে ছাত্রেরা কেবল যে ভালো শেখে না। তাহা নহে। পরন্তু ভুল শেখে। কিন্তু প্ৰতিবাদক সমস্ত প্রবন্ধের সহিত ভােব না মিলাইয়া একটিমাত্র । বিচ্ছিন্ন পদ অবলম্বন করিয়া সবিস্তারে দেখাইতে চেষ্টা করিয়াছেন যে, পুরাকালে লোকে ঘুষ লাইত, মািতকে আশ্রয় দিত, এবং বাসুক্তির গাৱকত্ব অপনােদনেচ্ছ ভূমিকম্পেরর। হেতু বলিয়া বিশ্বাস লেখক আমার সম্বন্ধে বলিয়াছেন : র্যাহার মত এক্ষণে আলোচিত হইল তিনি তো ইংরেজিশিক্ষা নিৰ্ম্মফল এইমাত্র বলিয়াই ক্ষান্ত । -যদি সত্যই আমি এইমাত্র বলিতাম। তবে কোথায় গিয়া ক্ষান্ত হইতাম বলা শক্ত ; তবে এখনকার ছেলেরা আমাকে ঢ়িল ষ্টুড়িয়া মারিত, এবং বঙ্কিমবাবু, গুরুদাসবাবু ও আনন্দমোহন বসু মহাশয় কখনোই আমার লেখার তিলমাত্র অনুমোদন করিতেন না। লেখক সর্বশেষে বলিয়াছেন : আলোচ্য প্রবন্ধগুলি পড়িয়া আর-একটি ভােব মনে উদয় হয়-সন্দেহ উঠে যে, লেখকগণ হয়তো অনেক সময় ভুলিয়া যান যে, এ দেশে ধান জন্মে আর বিলাতে জন্মায় ওক— এটা ভারতবর্ষ, ইংলন্ড নয়। আমরা ঠিক সেই কথাটাই ভুলি না ; আমরাই বারংবার বলিতেছি, এ দেশে ধান জন্মে আর বিলাতে জন্মায় ওক । এখানকার দেশী ভাষা বাংলা,ইংরেজি নহে। যদি কর্ষণ করিয়া সম্যক ফললাভ করিবার ইচ্ছা হয় তবে বাংলায় করিতে হইবে, নতুবা ঠিক কালচার’ হইবে না। আমরা এ কথা স্বপ্নেও ভুলি না যে, এ দেশে ধান জন্মে আর বিলাতে জন্মায় ওক । এইজন্যই আমরা বাংলায় যাহা পাই তাঁহাকেই বহুমান্য করি ; ইংরেজির সহিত তুলনা করিয়া তাহাকে হতাদর করিবার চেষ্টা করি না । এইজন্যই আমরা বাঙালির শিক্ষাসাধনের ভার কতক পরিমাণে বাংলার প্রতিও অৰ্পণ করিতে ইচ্ছা করি । এইজন্যই আমরা মনে করি, ইংরেজিশিক্ষা বাংলাভাষার মধ্যে যো-পরিমাণে অঙ্কুরিত হইয়া উঠে সেই পরিমাণেই তাহার ফলবান হইবার সম্ভাবনা। বাংলার শস্য, বাংলার ভাষা, বাংলার সাহিত্যের প্রতি আমাদের কৃপাদৃষ্টি নাই, তাহার প্রতি আমাদের অন্তরের প্রীতি এবং একান্ত বিশ্বাস আছে, এ কথায় র্যাহাদের সন্দেহ হয় তাহারা পুনর্বার ধীরভাবে আলোচ্য প্রবন্ধগুলির যথার্থ মর্ম গ্রহণ করিয়া পড়িয়া দেখিবেন। এবং যদি কোথাও দৈবক্রমে কোনো একটি বা দুটি কথায় কোনো ক্ৰটি বা কোনো অলংকারদোষ ঘটিয়া থাকে। তবে তাহা অনুগ্রহপূর্বক মার্জনা করিবেন ; কারণ, আমরা তর্কের ইন্ধন সংগ্ৰহ করিবার জন্য প্রবন্ধগুলি লিখি নাই, যথার্থই আবশ্যক এবং বেদনা অনুভব করিয়া লিখিয়াছি। SOoo ১ শিক্ষাপ্রণালী। সাধনা, মাঘ ১২৯৯ -