পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরিশিষ্ট । শিক্ষা Գ Տ @ হইয়া যায়। কিন্তু আমরা বারংবার দেখিয়াছি আমাদের দেশের ইংরেজিশিক্ষিত বিজ্ঞানঘেঁষা ছাত্রেরাও কালক্রমে তাহাদের সমস্ত বৈজ্ঞানিক কায়দা টিলা দিয়া অযৌক্তিক সংস্কারের হস্তে আত্মসমর্পণপূর্বক বিশ্রামলাভ করেন। যেমন পাথুরে জমির উপর আধহাতখানেক পুষ্করিণীর পাক তুলিয়া দিয়া তাহাতে বৃক্ষ রোপণ করিলে গাছটা প্রথম প্রথম খুব ঝাড়িয়া মাথা তুলিয়া ডালেপালায় গজাইয়া উঠে, অবশেষে শিকড় যেমনি নীচের কঠিন স্তরে গিয়া ঠেকে আমনি অকস্মাৎ মুষড়িয়া মরিয়া যায়— আমাদের দেশের বিজ্ঞানশিক্ষরও সেই অবস্থা । ঘরে-বাইরে চারি দিকে বিজ্ঞানের আলোককে সাধারণভাবে পরিব্যাপ্ত করিয়া দিলে। তবেই বিশেষভাবে বিজ্ঞানের চর্চা এ দেশে স্থায়ীরূপে বর্ধিত হইতে পরিবে । নতুবা আপাতত দুইদিনের উন্নতি দেখিয়া অত্যন্ত উৎফুল্ল হইবার কারণ নাই- কেননা, চারি দিকের দিগন্তপ্রসারিত মূঢ়তা দিনে নিশীথে অলক্ষ্যভাবে আকর্ষণ করিয়া সংকীৰ্ণমূল উচ্চতাকে আপনার সহিত সমভূমি করিয়া আনিবে। ভারতবর্ষীয় প্ৰাচীন জ্ঞানবিজ্ঞানের অধোগতির প্রধান কারণ এই ভিত্তির সংকীর্ণতা, ব্যাপ্তির অভাব, একাংশের সহিত অপরাংশের গুরুতর অসাম্য । অথচ বাংলাভাষায় ইংরেজি-অনভিজ্ঞদের কাছে বিজ্ঞানপ্রচারের কোনো উপায় এ দেশে নাই । ইহা ব্যয়সাধ্য, চেষ্টসাধ্য, ইহাতে আশু ফললাভের আশাও নাই- কোনো ব্যক্তিবিশেষের একান্ত উৎসাহ রক্ষার উপযোগী কোনো উত্তেজনা ইহাতে দেখা যায় না । ইহাতে অর্থনাশ ছাড়া অর্থাগমেরও সম্ভাবনা অল্প । বাংলাভাষায় বৈজ্ঞানিক পরিভাষা রচনা করাও অনেক চিন্তা ও চেষ্টার কাজ- বিজ্ঞানের যাথাতথ্য রক্ষাপূর্বক তাহাকে জনসাধারণের বুদ্ধিগম্য করিয়া সরলভাষায় প্রকাশ করাও শক্ত । অতএব যেমন করিয়াই দেখি সায়ান্স অ্যাসোসিয়েশনের ন্যায় সামর্থ্যশালী বিশেষ সভার দ্বারাই এই কার্য সম্ভবপর বোধ হয় । ইংরেজিতে বিজ্ঞান শিখাইবার জন্য অনেক ইস্কুল কলেজ আছে, তাহার গ্রন্থ ও আচার্যের অভাব নাই। এমন-কি, র্যাহারা ইংরেজিতে বিজ্ঞানশিক্ষা সমাধা করিতে চান তাহারা বিলাতে গিয়াও কৃতিত্ব লাভ করিতে পারেন। ডাক্তার জগদীশচন্দ্ৰ বসু এবং প্রফুল্লচন্দ্র রায় তাহার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত । কিন্তু নানা কারণে ইংরেজিশিক্ষায় বঞ্চিত আমাদের অধিকাংশ, আমাদের সর্বসাধারণ, আমাদের প্রকৃত দেশ সায়ান্স অ্যাসোসিয়েশনের দ্বারাও উপেক্ষিত ; অথচ এমনই দৈব বিড়ম্বনা, সায়ান্স অ্যাসোসিয়েশন সেই দেশের নামে অবহেলার অভিযোগ আনিয়াছেন । , বঙ্গীয় সাহিত্যপরিষৎ বাংলার বৈজ্ঞানিক পরিভাষাসংকলনে প্ৰবৃত্ত হইয়াছেন । কিন্তু তাহাদের উদ্দেশ্য নানা শাখায় বিভক্ত হওয়ায় কাৰ্য যথোচিতরূপে অগ্রসর হইতেছে না । এই কার্যে সাহিত্যপরিষদের সহিত সায়ান্স অ্যাসোসিয়েশনের যোগ দেওয়া কর্তব্য । বাংলায় বৈজ্ঞানিক গ্ৰন্থ প্রচার, সাময়িক পত্র প্রকাশ, স্থানে স্থানে যথানিয়মে বক্তৃতা দিবার ব্যবস্থা করা আবশ্যক। নিজের উপযোগিতা উপকারিতা সর্বতোভাবে প্রমাণ করা আবশ্যক । তবেই দেশের সহিত সভার দান-প্ৰতিদানের সম্বন্ধ স্থাপিত হইবে, কেবলমাত্র বিলাপের দ্বারা তাহা হইতে পারে না । এমন-কি, রাজপ্রতিনিধির মধ্যস্থতা দ্বারাও বেশি কিছু হইবে না। রাজা সায়ান্স অ্যাসোসিয়েশনের অর্থাগমের সুযোগ করিয়া দিতে পারেন, কিন্তু তাহাকে সফল করিতে পারেন না। যাহাই হােক, সায়ান্স অ্যাসোসিয়েশন যদি যথার্থ পথে কাজ করিতে অগ্রসর হন তবে তাহার ভৎসনা সহিতে আমরা প্রস্তুত আছি ; কিন্তু কাজও করবেন না, চোেখও রাঙাইবেন, দেশকে দূরে রাখিবেন। অথচ সাহেবকে ডাকিয়া দেশের নামে নালিশ করবেন, ইহার অপরূপ সৌন্দৰ্যটুকু আমরা দেখিতে পাই না | * ጶ S \ОOG ১ তুলনীয় “বিজ্ঞান সভা”; পরিশিষ্ট, রবীন্দ্র-রচনাবলী, বর্তমান ર૭ ( প্রচলিত দ্বাদশ খণ্ড)