পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরিশিষ্ট । শব্দতত্ত্ব Գ ՀՀ, সচরাচর কথােপকথনে এরূপ অর্থে হুজুক ব্যবহার করেন না। ধ্রুবুলিখেেছন, নাকামি-অভিমানবশত কিছুতে অনিচ্ছ প্রকাশ অথবা ইচ্ছাসত্বে অভিমানীর ees ” Վ. স্থলবিশেষে অভিমানচ্ছলে কোনো ব্যক্তি ন্যাকামি করিতেও পারে, কিন্তু তাই বলিয়া অভিমানবশত অনিচ্ছা প্ৰকাশ করাকেই যে ন্যাকামি বলে তাহা নহে। আহলাদে শব্দের ব্যাখ্যা করিতে গিয়া ইনি বলেন, “দশজনের আহলাদ পাইয়া অহংকৃত ।” প্রশ্রয়প্রাপ্ত, অহংকৃত এবং “আহিলাদে-র মধ্যে যে অনেক প্রভেদ বলাই বাহুল্য। হুজুগ শব্দের নিম্নলিখিত প্ৰাপ্ত সংজ্ঞাগুলি পরে পরে প্রকাশ করিলাম । হুজুগ ১ । বিস্ময়জনক সংবাদ যাহা সত্য কি মিথ্যা নিৰ্ণয় করা কঠিন । ২। অকারণ বিষয়ে উদ্যোগ ও উৎসাহ (অকারণ শব্দের দুই অর্থ- ১। অনির্দিষ্ট ; ২ তুচ্ছ, সামান্য) । ৩ । অল্পেতে নেচে ওঠার নাম । ৪ । অতিরঞ্জিত জনরব । 女 ৬ । ফল অনিশ্চিত। এরপ বিষয়ে মাতা । ৭ । কোনো এক ঘটনা ; লোকে যাহার হাপায় পড়ে স্রোতে ভাসে। ‘বাজারাদরে নেচে বেড়ানো।” “ঝড়ের আগে ধুলা উড়া ।” ৮ । ফাঁস কথায় নেচে ওঠা । ৯ । দেশব্যাপী কোনো নূতন (সত্য এবং মিথ্যা) আন্দোলন । ১০ । বাহ্যিাড়ম্বরে মত্ততা । প্রথম সংজ্ঞাটি যে ঠিক হয় নাই তাহা ব্যক্ত করিয়া বলাই বাহুল্য। দ্বিতীয় সংজ্ঞা সম্বন্ধে বক্তব্য এই যে লেখক নিজেই অকারণ শব্দের যে-অর্থ নির্দেশ করিয়াছেন তাহা পরিষ্কার নহে। অনির্দিষ্ট অর্থাৎ যাহার লক্ষ্য স্থির হয় নাই এমন কোনো তুচ্ছ সামান্য বিষয়কেই বোধ করি তিনি অকারণ বিষয় বলিতেছেন- তাহার মতে এইরূপ বিষয়ে উদ্যোগ ও উৎসাহকেই হুজুগ বলে। কেহ যদি বিশেষ উদ্যোগের সহিত একটা বালুকার স্তৃপ নির্মাণ করিয়া সমস্ত দিন ধরিয়া পরমোৎসাহে তাহা আবার ভাঙিতে থাকে। তবে তাহাকে হুজুগে বলিবে না পাগল বলিবে ? তৃতীয় সংজ্ঞা । রাম যদি ঘুড়ি উড়াইবার প্রস্তাব শুনিবামাত্র উৎসাহে নাচিয়া উঠে তবে রামকে কি হুজুগে বলিবে । চতুর্থ সংজ্ঞা। অতিরঞ্জিত জনরবকে যে হুজুগ বলে না। তাহা আর কাহাকেও বুঝাইয়া বলিতে হইবে না । শ্যাম তাহার কন্যার বিবাহােপলক্ষে পাঁচশো টাকা খরচ করিয়াছে ; লোকে যদি রটায় যে সে পাচ হাজার টাকা খরচ করিয়াছে, তবে সেই জনরবকেই কি হুজুগ বলিবে । পঞ্চম সংজ্ঞা । মাঝে মাঝে সংবাদপত্রে অসম্ভব সংবাদ রাষ্ট্র হইয়া থাকে, তাহাকে কেহ হুজুগ বলে N ষষ্ঠ সংজ্ঞা । লাভ অনিশ্চিত এমনতরো ব্যবসায়ে অনেকে অর্থলোভে প্রবৃত্ত হইয়া থাকেন, সেরূপ ব্যবসায়কে কেহ হুজুগ বলে না । সপ্তম। এ সংজ্ঞাটি পরিষ্কার নহে। যে-ঘটনার স্রোতে লোকে ভাসিতে থাকে তাহাকে হুজুগ বলা যায় না ; তবে লেখক হ্যাপা শব্দের যোগ করিয়া ইহার মধ্যে আর-একটি নূতন ভাব প্রবেশ করাইয়াছেন। কিন্তু হ্যাপা শব্দের ঠিক অর্থটি কী সে সম্বন্ধে তর্ক উঠতে পারে, অতএব হুজুগ শব্দের ন্যায় হ্যাপা শব্দও সংজ্ঞানির্দেশযোগ্য। সুতরাং হ্যাপা শব্দের সাহায্যে হুজুগ শব্দ বোঝাইবার চেষ্টা

  • মূলে মুদ্রাকর প্রমাদ