পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Գ\9o রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী ংগত হয় না। “বাজারাদরে নেচে বেড়ানাে”, “ঝড়ের আগে ধুলাউড়া- দুটি ব্যাখ্যাও সুস্পষ্ট নহে। ] অষ্টম। হরি যদি মাধবকে বলে, তুই ট্যাকশালের দাওয়ান হইবি- অমনি যদি মাধব নাচিয়া উঠে- তবে মাধবের সেই উৎসাহ-উল্লাসকে হুজুগ বলা যায় না । নবম। আন্দোলন নূতন হইলেই তাহাকে হুজুগ বলা যাইতে পারে না। দশম । বাহ্যিাড়ম্বরে মত্ততা মাত্রই হুজুগ বলিতে পারি না । কোনো রায়বাহাদুর যদি তাহার খেতাব ও গাড়িজুড়ি লইয়া মাতিয়া থাকে, তাহার সেই মত্ততাকে কি হুজুগ বলা যায়। আমরা যে-লেখককে পুরস্কার দিয়াছি তিনি হুজুগ শব্দের নিম্নলিখিত মত ব্যাখ্যা করেন : মাথা নাই মাথা ব্যথা গোছের কতকগুলো নাচুনে জিনিস লইয়া যে নাচন আরম্ভ হয়। সেই নাচনের অবস্থাকেই হুজুগ বলে। বিশেষ কিছুই হয় নাই অথবা অতি সামান্য একটা-কিছু হইয়াছে আর সেইটাকে লইয়া সকলে নাচিয়া উঠিয়াছে, এই অবস্থার নাম হুজুগ ।।’ আমরা দেখিতেছি হুজুগে প্রথমত এমন একটা বিষয় থাকা চাই যাহার প্রতিষ্ঠভূমি নাই— যাহার ডালপালা খুব বিস্তৃত, কিন্তু শিকড়ের দিকের অভাব। মনে করো আমি ‘সার্বজনীনতা’ বা ‘বিশ্বপ্রেম’ প্রচারের জন্য এক সম্প্রদায় সৃষ্টি করিয়া বসিয়াছি ; তাহার কত মন্ত্রতন্ত্ৰ কত অনুষ্ঠান তাহার ঠিক নাই, কিন্তু আমার ক্ষুদ্র সম্প্রদায়ের বহির্ভূত লোকদের প্রতি আমাদের জাত-বিদ্বেষ প্রকাশ পাইতেছে— মূলেই প্রেমের অভাব অথচ প্রেমের অনুষ্ঠানের ত্রুটি নাই। দ্বিতীয়ত, ইহার সঙ্গে একটা নাচনের যোগ থাকা চাই, অর্থাৎ কাজের প্রতি ততটা নহে। যতটা মত্ততার প্রতি লক্ষ । অৰ্থাৎ হাে-হাে করিয়া বেশ সময় কাটিয়া যাইতেছে, খুব একটা হাঙ্গামা হইতেছে এবং তাঁহাতেই একটা আনন্দ পাইতেছি। যদি | স্থির হইয়া স্তব্ধভাবে কাজ করিতে বল তবে তাহাতে মন লাগে না, কারণ নাচানো এবং নাচা, এ-দুটােই মুখ্য আবশ্যক । তৃতীয়ত, কেবল একজনকে লইয়া হুজুগ হয় না- সাধারণকে আবশ্যকসাধারণকে লইয়া একটা হট্টগোল বাধাইবার চেষ্টা । চতুর্থত, হুজুগ কেবল একটা খবরমাত্র রটানো লুকানাে অনুষ্ঠানে প্রবৃত্ত হইবার জন্য সমারোহের সহিত উদ্যােগ করা, তার পরে সেটা হউক বা •-९८द ! আমাদের পুরস্কৃত সংজ্ঞালেখকের সংজ্ঞা যে সর্বাঙ্গসম্পূর্ণ ও যথেষ্ট সংক্ষিপ্ত হইয়াছে তাহা বলিতে পুর, তিনি গুহার সংজ্ঞার দুইটি পদকে সংক্ষেপ করিয়া অনায়াসেই একপদে পরিণত করতে সংজ্ঞা রচনা করা যে দুরূহ তাহার প্রধান একটা কারণ এই দেখিতেছি যে, একটি কথার সহিত অনেকগুলি জটিল ভােব জড়িত হইয়া থাকে, লেখকেরা সংক্ষিপ্ত সংজ্ঞার মধ্যে তাহার সকলগুলি গুছাইয়া লইতে পারেন না- অনবধানতাদোষে একটা-না-একটা বাদ পড়িয়া যায়। উদ্ধৃত সংজ্ঞাগুলির মধ্যে পাঠকেরা তাহার দৃষ্টান্ত পাইয়াছেন ৷ ‘ · ন্যাকামি ১ । জানিয়া না-জানার ভান । ২ । জানিয়া না-জানার ভাব প্ৰকাশ করা । ৩ । জেনেও জানি না, এই ভাব প্ৰকাশ করা । ৪ । জানিয়াও না-জানার ভান । ৫ । অবগত থাকিয়া অজ্ঞতা দেখানে । ৬ । বিলক্ষণ জানিয়াও অজ্ঞানতার লক্ষণ প্ৰকাশ করা । ৭ । বুঝেও নিজেকে অবুঝের ন্যায় প্রতিপন্ন করা । ৮ । সেয়ানা হয়ে বোকা সাজা । ৯ । জেনেশুনে ছেলেমি । ১০ । বুঝে অবুঝ হওয়া । জেনেশুনে হাবা হওয়া । ১১ । ইচ্ছাকৃত অজ্ঞতা এবং মিথ্যা সরলতা ।