পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরিশিষ্ট । শব্দতত্ত্ব १७s প্ৰথম হইতে সপ্তম সংজ্ঞা পর্যন্ত সকলগুলির ভাব প্ৰায় একই রকম । অর্থাৎ সকলগুলিতেই জানিয়াও না-জানার ভান, এই অর্থই প্ৰকাশ পাইতেছে ; কিন্তু এরাপ ভাবকে অসরলতা মিথ্যাচরণ বা কপটতা বলা যায়। কিন্তু কপটতা ও ন্যাকামি ঠিক একরূপ জিনিস নহে। অষ্টম সংজ্ঞায় লেখক শ্ৰীযুক্ত মহেন্দ্রনাথ রায় যে বলিয়াছেন, সেয়ানা হইয়া বোকা সাজা, ইহাই আমার ঠিক বোধ হয় । জানিয়া না-জানার ভাব প্ৰকাশ করিলেই হইবে না, সেইসঙ্গে প্ৰকাশ করিতে হইবে আমি যেন নির্বোধি, আমার যেন বুঝিবার শক্তিই নাই। ষষ্ঠ এবং সপ্তম সংজ্ঞাতেও কতকটা এই ভােব প্রকাশ পাইয়াছে, কিন্তু তেমন স্পষ্ট হয় নাই। নবম ও দশম সংজ্ঞা ঠিক হইয়াছে। কিন্তু অষ্টম হইতে দশম সংজ্ঞাতে বোকা, ছেলেমি, হাবা শব্দ ব্যবহৃত হইয়াছে ; এই শব্দগুলি সংজ্ঞানিৰ্দেশযোগ্য । অর্থাৎ হাবামি, বোকামি ও ছেলেমির বিশেষ লক্ষণ কী তাহা মনোযোগ-সহকারে আলোচনা করিয়া দেখিবার বিষয় । এইজন্য একাদশ সংজ্ঞার লেখক যে ইচ্ছাকৃত অজ্ঞতার ভানের সঙ্গে "মিথ্যা সরলতা' শব্দ যোগ করিয়া দিয়াছেন, তাহাতে ন্যাকামি শব্দের অর্থ পরিষ্কার হইয়াছে । অজ্ঞতা এবং সরলতা উভয়ের ভান থাকিলে তবে ন্যাকামি হইতে পারে । আমাদের পুরস্কৃত সংজ্ঞালেখক লিখিয়াছেন, “ন্যাকামি বলিতে সাধারণত জানিয়া শুনিয়া বােকা সাজার ভাব বুঝায়” পরে দ্বিতীয় পদে তাহার ব্যাখ্যা করিয়া বলিয়াছেন, “যেন কিছু জানে না, যেন কিছু বুঝে না। এই ভাবের নাম ন্যাকামি ।” যেন কিছু জানে না, যেন কিছু বুঝে না বলিতে লোকটা যেন নেহাত হাবা, নিতান্ত খোকা এইরূপ বুঝায়, লোকটা যেন কিছু বুঝেই না, এবং তাঁহাকে বুঝাইবার উপায়ও নাই । আহিলাদে ১ । স্বার্থের জন্য বিবেচনারহিত । ২ । যাহারা পরিমাণাধিক আহলাদে সর্বদাই মত্ত । ৩ । যে সকল-ত’তেই অন্যায়রপে আমোদ চায়, অথবা যে হক না হক দাঁত বের করে । ৪ । অযথা আনন্দ বা অভিমান-প্ৰকাশক । ৫ । অন্যকে অসন্তুষ্ট করিয়া যে নিজে হাসে । ৬ । যে সর্বদা আহলাদ করিয়া বেড়ায় । ৭ । কী সময়ে কী অসময়ে যে আহলাদ প্ৰকাশ করে । ৮ । যে অভিমানী অল্পে অধৈৰ্য হয় । ৯ । যে অনুপযুক্ত সময়েও আবদারী। ১০ । সাধের গোপাল নীলমণি । আমার বোধ হয়, যে-ব্যক্তি নিজেকে জগতের আদুরে ছেলে মনে করে তাহাকে আহলাদে বলে ; প্রশ্রয়দাত্রী মায়ের কাছে আদুরে ছেলেরা যেরূপ ব্যবহার করে যে-ব্যক্তি সকল জায়গাতেই কতকটা সেইরূপ ব্যবহার করিতে যায় । অর্থাৎ যে-ব্যক্তি সময়-অসমীয় পাত্ৰাপাত্র বিচার না করিয়া সর্বত্র আবদার করিতে যায়, সর্বত্রই দাত বাহির কয়ে, মনে করে সকলেই তাহার সকল বাড়াবাড়ি মাপ করিবে, সে-ই আহিলাদে ।। তাহাকে কে চায় না-চায়, তাহাকে কে কী ভাবে দেখে, সে-বিষয় বিবেচনা না করিয়া সে দুলিতে দুলিতে গায়ে পড়িয়া সকলের গা ঘেষিয়া বসে, সকলের আদর কাড়িতে চেষ্টা করে। সংজ্ঞালেখকগণ অনেকেই আহিলাদে ব্যক্তির এক-একটি লক্ষণমাত্র নির্দেশ করিয়াছেন, কিন্তু যাহা বলিলে তাহার সকল লক্ষণ ব্যক্ত হয় এমন কোনো কথা বলেন নাই । দশম সংজ্ঞাকে ঠিক সংজ্ঞা बढ़ाई यांश नां । র্যাহাকে পুরস্কার দেওয়া গিয়াছে তাহার আহলাদে শব্দের সংজ্ঞা ঠিক হয় নাই। তিনি বলেন : ভাতের ফেনের মতো টগবগে । যাহাদিগের প্রায় সকল কার্যেই “একের মরণ অন্যের আমোদ” কথার সত্যতা প্রমাণ হয়, অর্থাৎ তুমি বঁাচ আর মর আমার আমোদ হইলেই হইল, ইহাই যাহাদিগের মত ও কাৰ্য, তাহাদিগকে আহলাদে বলা যায়। | |