পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরিশিষ্ট । শব্দতত্ত্ব AVS কিন্তু বিবাদ করা অসংগত। ইংরেজি মিটিয়ারলজির বাংলা প্রতিশব্দ এখনো প্রচলিত হয় নাই, সুতরাং জগদানন্দবাবু যদি আপ্তের সংস্কৃত অভিধানের দৃষ্টান্তে ‘বায়ুনভোবিদ্যা ব্যবহার করিয়া কাজ চালাইয়া থাকেন, তাহাকে দোষ দিতে পারি না । যোগেশবাবু ‘আবহ শব্দ কোনো প্রাচীন গ্ৰন্থ হইতে উদ্ধার করিয়াছেন, তাহার অর্থ ভূবায়ু। কিন্তু এই ভুবায়ু বলিতে প্রাচীনেরা কী বুঝিতেন এবং তােহা আধুনিক অ্যাটমসফিয়ার শব্দের প্রতিশব্দ কি না, তাহা বিশেষরূপ প্রমাণের অপেক্ষা রাখে- এক কথায় ইহায় মীমাংসা হয় না। অগ্ৰে সেই প্রমাণ উপস্থিত না করিয়া জোর করিয়া কিছু বলা যায় না । শকুন্তলার সপ্তম অঙ্কে দুষ্যন্ত যখন স্বৰ্গলোক হইতে মর্তে অবতরণ করিতেছেন, তখন মাতলিকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “এখন আমরা কোন বায়ুর অধিকারে আসিয়াছি।” মাতলি উত্তর করিলেন, “গগনবর্তিনী মন্দাকিনী যেখানে বহমান, চক্রবিভক্তরশ্মি জ্যোতিষ্কলেক যেখানে বর্তমান, বামনবেশধারী হরির দ্বিতীয় চরণপাতে পবিত্র এই স্থান ধূলিশূন্য প্রবাহবায়ুর মাৰ্গ !” দেখা যাইতেছে, প্রাচীনকালে ‘প্রবাহ প্রভৃতি বায়ুর নাম তৎকালীন একটি কাল্পনিক বিশ্বতত্ত্বের মধ্যে প্রচলিত ছিল— সেগুলি একটি বিশেষ শাস্ত্রের পারিভাষিক প্রয়োগ । দেবীপুরাণে দেখা যায় : প্রাবাহাে নিবহিশ্চৈব উদবাহঃ সংবহস্তথা । বিবাহঃ প্ৰবাহশ্চৈব পরিবাহস্তথৈবচ | অন্তরীক্ষে চাবাহে তে পৃথঙমাৰ্গবিচারিণঃ। এই সকল বায়ুর নাম কি আধুনিক মিটিয়ারলজির পরিভাষার মধ্যে স্থান পাইতে পারে। বিশেষ শাস্ত্রের বিশেষ মত ও সংজ্ঞার দ্বারা তাহার পরিভাষাগুলির অর্থ সীমাবদ্ধ, তাহাদিগকে নির্বিচারে অন্যত্র প্রয়োগ করা যায় না । অপর পক্ষে নভঃ শব্দ পারিভাষিক নহে, তাহার অর্থ আকাশ, এবং সে-আকাশ বিশেষরূপে মেঘের সহিত সম্বন্ধযুক্ত ; সেইজন্য নভঃ ও নভস্য শব্দে শ্রাবণ ও ভাদ্রমাস বুঝায়। কিন্তু নভঃ শব্দের সহিত পুনশ্চ বায়ুশব্দ যোগ করিবার প্রয়োজন নাই, এ কথা স্বীকার করি। আপ্তেও তাহার অভিধানে তাহা করেন নাই ; তাহার আভিধানিক সংকেত অনুসারে নভোবায়ু-বিদ্যা বলিতে নভোবিদ্যা বা বায়ুবিদ্যা বুঝাইতেছে। ‘নভোবিদ্যা মিটিয়ারলজির প্রতিশব্দরূপে ব্যবহৃত হইলে সাধারণের সহজে বোধগম্য হইতে পারে । বানান লইয়া কয়েকটি কথা বলিতে ইচ্ছা করি। রাঙা ভাঙা ডাঙা আঙুল প্রভৃতি শব্দ ঙ্গ-অক্ষরযোগে লেখা নিতান্তই ধ্বনিসংগতিবিরুদ্ধ। গঙ্গা শব্দের সহিত রাঙা, তুঙ্গ শব্দের সহিত ঢাঙা তুলনা করিলে এ কথা স্পষ্ট হইবে । মূল শব্দটিকে স্মরণ করাইবার জন্য ধ্বনির সহিত বানানের বিরোধ ঘটানো কর্তব্য নহে। সে-নিয়ম মানিতে হইলে চাদ-কে চান্দ, পাক-কে পঙ্ক, কুমার-কে কুম্ভার লিখিতে হয়। অনেকে মূলশব্দের সাদৃশ্যরক্ষার জন্য সোনা-কে সোণা, কান-কে কাণ বানান করেন, অথচ শ্রবণশব্দজ শোনা-কে শোণিা লেখেন না। যে-সকল সংস্কৃত শব্দ অপভ্রংশের নিয়মে পুরা বাংলা হইয়া গেছে সেগুলির ধ্বনি-অনুযায়িক বানান হওয়া উচিত। প্রাকৃতভাষার বানান "ইহার উদাহরণস্থল। স্থলে করি নাই। পত্রিকাসম্পাদক মহাশয় বাংলা বানানের নিয়ম সম্বন্ধে আলোচনা উত্থাপন করিলে আমরা কৃতজ্ঞ হইব । ঢেঁকসটবুক কমিটি ক্ষকারকে বাংলা বর্ণমালা হইতে নির্বািসন দিয়াছেন। শ্ৰীযুক্ত সতীশচন্দ্র বিদ্যাভূষণ অনেক পুরাতন নজির দেখাইয়া ক্ষকারের পক্ষে ওকালতি করিয়াছেন। অসংযুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণের দলে ক্ষ কেমন করিয়া প্ৰথমে প্রবেশ করিয়াছিল জানি না, কিন্তু সে-সময়ে দ্বাররক্ষক যে সতর্ক ছিল, তাহা বলিতে পারি না । আধুনিক ভারতবষীয় আর্যভাষায় মূর্ধন্য ষ-এর উচ্চারণ খ হইয়া গিয়াছিল, সুতরাং ক্ষকারে মূর্ধন্য ষ-এর বিশুদ্ধ উচ্চারণ ছিল না। না থাকিলেও উহা যুক্ত অক্ষর এবং উহার উচ্চারণ কখ। শব্দের আরম্ভে অনেক যুক্ত অক্ষরের যুক্ত উচ্চারণ থাকে না, যেমন জ্ঞান শব্দের