পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

AVoS রবীন্দ্র-রচনাবলী জ্ঞ ; কিন্তু অজ্ঞ শব্দে উহার যুক্ত উচ্চারণ সম্বন্ধে সন্দেহ থাকে না। ক্ষকারও সেই রূপ- ক্ষয় এবং অক্ষয় শব্দের উচ্চারণে তাহা প্ৰমাণ হইবে । অতএব অসংযুক্ত বর্ণমালায় ক্ষকার দলভ্ৰষ্ট একঘরে, তাহাতে সন্দেহ নাই। সেই ব্যঞ্জনপঙক্তির মধ্যে উহার অনুরূপ সংকরবর্ণ আর-একটিও নাই। দীর্ঘকালের দখল প্রমাণ হইলেও তাঁহাকে আরো দীর্ঘকাল অন্যায় অধিকার রক্ষা করিতে দেওয়া कि ! 站 শ্ৰীযুক্ত বীরেশ্বর পীড়ে “জাতীয় সাহিত্য প্রবন্ধে আধুনিক ভারতবষীয় ভাষাগুলিকে সংস্কৃত ব্যাকরণের নিয়মমত চলিতে উত্তেজনা করিয়াছেন । তিনি বলেন, নচেৎ আদর্শের ঐক্য থাকে না । তিনি বলেন, “কোন চট্টগ্রামবাসী নবদ্বীপবাসীর ব্যবহৃত অসংস্কৃত শব্দ ব্যবহার করিতে বাধ্য হইবে।” আমরা বলি, কেহ তো জবরদস্তি করিয়া বাধ্য করিতেছে না, স্বভাবের নিয়মে চট্টগ্রামবাসী আপনি বাধ্য হইতেছে । নবীনচন্দ্ৰ সেন মহাশয় তাহার কাব্যে চট্টগ্রামের প্রাদেশিক প্রয়োগ ব্যবহার না করিয়া নবদ্বীপের প্রাদেশিক প্রয়োগ ব্যবহার করিয়াছেন । তাহার বিপরীত করিবার স্বাধীনতা তাহার ছিল ; কিন্তু নিশ্চয় কাব্যের ক্ষতি আশঙ্কা করিয়া সেই স্বাধীনতাসুখ ভোগ করিতে ইচ্ছা করেন নাই। সকল দেশেই প্ৰাদেশিক প্রয়োগের বৈচিত্ৰ্য আছে, তথাপি এক-একটি বিশেষ প্রদেশ ভাষাসম্বন্ধে অন্যান্য প্রদেশের উপর কর্তৃত্ব করিয়া থাকে। ইংরেজি ভাষা লাটিননিয়মে আপনার বিশুদ্ধি রক্ষা করে না । যদি করিত, তবে এ ভাষা এত প্ৰবল, এত বিচিত্র, এত মহৎ হইত না । ভাষা সোনারুপার মতো জড়পদার্থ নহে যে, তাহাকে ছাচে ঢালিব । তাহা সজীব— তাহা নিজের অনির্বচনীয় জীবনীশক্তির নিয়মে গ্রহণ ও বর্জন করিতে থাকে । সমাজে শাস্ত্র অপেক্ষা লোকচারকে প্রাধান্য দেয় । লোকচারের অসুবিধা অনেক, তাহাতে এক দেশের আচারকে অন্য দেশের আচার হইতে তফাত করিয়া দেয় ; তা হউক, তবু লোকাচারকে ঠেকাইবে কে । লোককে না মারিয়া ফেলিলে লোকচারের নিত্য পরিবর্তন ও বৈচিত্র্য কেহ দূর করিতে পারে না। কৃত্রিম গাছের সব শাখাই এক মাপের করা যায়, সজীব গাছের করা যায় না । ভাষারও লোকচার শাস্ত্রের অপেক্ষা বড়ো । সেইজন্যই আমরা ‘ক্ষান্ত’ দেওয়া বলিতে লজা পাই না । সেইজন্যই ব্যাকরণ যেখানে “আবশ্যকতা’ ব্যবহার করিতে বলে, আমরা সেখানে “আবশ্যক” ব্যবহার করি। ইহাতে সংস্কৃত ব্যাকরণ যদি চােখ রাঙাইয়া আসে, লোকাচারের হুকুম দেখাইয়া আমরা তাহাকে উপেক্ষা করিতে পারি। একটা ছোটাে কথা বলিয়া লই । ‘অনুবাদিত কথাটা বাংলায় চলিয়া গেছে- আজকাল পণ্ডিতেরা অনুদিত লিখিতে শুরু করিয়াছেন । ভয় হয় পাছে তাহারা সৃজন কথার জায়গায় “সর্জন চালাইয়া বসেন । সাহিত্য-পরিষৎ-পত্রিকায় বঙ্গদর্শন-সম্পাদক ‘শব্দদ্বৈত” নামক এক প্ৰবন্ধ লিখিয়াছিলেন।” ফাল্গুনমাসের প্রদীপে তাহার একটি সমালোচনা বাহির হইয়াছিল। শ্ৰীযুক্ত বিহারীলাল গোস্বামী সেই সমালোচনা অবলম্বন করিয়া উক্ত বিষয়ের আলোচনা করিয়াছেন। মূল প্রবন্ধলেখকের নিকট এই আলোচনা, অত্যন্ত হৃদ্য । এ সম্বন্ধে আমাদের বক্তব্য পরিস্ফুট করিয়া বলিতে গেলে সংক্ষিপ্ত সমালোচনার সীমা লঙঘন করিবে । কেবল একটা উদাহরণ লইয়া আমাদের বক্তব্যের আভাসমাত্র দিব - আমরা বলিয়াছিলাম, চার চার’ ‘তিন তিন প্রকর্ষবাচক । অর্থাৎ যখন বলি “চার চার পেয়াদা আসিয়া হাজির তখন একেবারে চার পেয়াদা আসায় বাহুল্যজনিত বিস্ময় প্রকাশ করি । প্রদীপের • সমালোচক মহাশয় বলেন, এই স্থলের দ্বিত্ব বিভূক্ত-বহুলতাজ্ঞাপক। অর্থাৎ যখন বলা হয়, তাহাদিগকে ধরিবার জন্য চার চার জন পেয়াদা আসিয়া হাজির তখন, সমালোচক মহাশয়ের মতে, ১ দ্রষ্টব্য “বাংলা শব্দ দ্বৈত”, রবীন্দ্র-রচনাবলী, প্ৰচল দ্বাদশ খণ্ড, পৃ. ৩৭১ : বর্তমান সলভ, পৃ:৬২৬