পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গ্রন্থপরিচয় । ԳԵ ֆ এই কবিতা (৪) যে-সময়কার লেখা তখনো যুদ্ধ শুরু হতে দু'মাস বাকি আছে। তারপর শঙ্খ । বেজে উঠেছে ; ঔদ্ধত্যে হােক, ভয়ে হােক, নিৰ্ভয়ে হােক তাকে বাজানো হয়েছে। যে যুদ্ধ হয়ে গেল তা নুতন যুগে পৌছবার সিংহদ্বারস্বরূপ। এই লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে একটি সার্বজাতিক যজ্ঞে নিমন্ত্রণ রক্ষা করবার হুকুম এসেছে । তা শেষ হয়ে স্বৰ্গারোহণ পর্ব এখনো আরম্ভ হয় নি । আরো ভাঙবে, সংকীর্ণ বেড়া ভেঙে যাবে, ঘরছাড়ার দলকে এখনো পথে পথে ঘুরতে হবে । পাশ্চাত্য দেশে দেখে এসেছি, সেই ঘরছাড়ার দল আজ বেরিয়ে পড়েছে। তারা এক ভাবী কালকে মানসলোকে দেখতে পাচ্ছে যে-কাল সর্বজাতির লোকের । চাকভাঙা মৌমাছির দল বেরিয়ে পড়েছে, আবার নূতন করে চাক বাধতে । শঙ্খের আহবান তাদের কানে পৌচেছে । অপমানিত হয়েছে, জেল খেটেছে ; সার্বজাতিক কল্যাণের কথা বলতে গিয়ে তিরস্কৃত হয়েছে। এই দলের কত অখ্যাত লোক অজ্ঞাত পথে ঘুরে বেড়াচ্ছে, বলছে, প্ৰভাত হতে আর বিলম্ব নেই। পাখির দল যেমন অরুণোদয়ের আভাস পায়, এরা তেমনি নূতন যুগকে অন্তর্দৃষ্টিতে দেখেছে । বলাকা-রচনাকালে যে-ভাব আমাকে উৎকণ্ঠিত করেছিল এখনো সেই ভাব আমার মনে জেগে আছে। আমি আজ পর্যন্ত তাকে ফিরে ফিরে বলবার চেষ্টা করছি। বুকের মাঝে যে-আলোড়ন হলো তার কী সার্বজাতিক অভিপ্ৰায় আছে তা আমি ধরতে চেষ্টা করেছি। পশ্চিম মহাদেশে ভ্ৰমণের সময়ে সে-চিন্তা আমার মনে বর্তমান ছিল । আমি মনে মনে একটা পক্ষ নিয়েছি ; একটা আহবানকে স্বীকার করেছি ; সে-ডাককে কেউ মেনেছে। কেউ মানে নি । বলাকায় আমার সেই ভাবের সূত্রপাত হয়েছিল । আমি কিছুদিন থেকে অগোচরে এই ভাবের প্রেরণায় অস্পষ্ট আহবানের পথে অগ্রসর হয়েছিলাম । এই কবিতাগুলি আমার সেই যাত্রাপথের ধ্বজাস্বরূপ হয়েছিল । তখন ভাবের দিক দিয়ে যা অনুভব করেছিলুম, কবিতায় যা অস্পষ্ট ছিল, আজ তাকে সুস্পষ্ট আকারে বুঝতে পেরে আমি এক জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছি। ! বলাকা বইটার নামকরণের মধ্যে এই কবিতার (৩৬) মৰ্মগত ভাবটা নিহিত আছে । সেদিন যে একদল বুনো হঁহাসের পাখা সঞ্চালিত হয়ে সন্ধ্যার অন্ধকারের স্তব্ধতাকে ভেঙে দিয়েছিল, কেবল এই ব্যাপারই আমার কাছে একমাত্র উপলব্ধির বিষয় ছিল না, কিন্তু বলাকার পাখা যে নিখিলের বাণীকে জাগিয়ে দিয়েছিল সেইটাই এর আসল বলবার কথা এবং বলাকা বইটার কবিতাগুলির মধ্যে এই বাণীটিই নানা আকারে ব্যক্ত হয়েছে। “বলাক’ নামের মধ্যে এই ভাবটা আছে যে, বুনো ইহাসের দল নীড় বেঁধেছে, ডিম পেড়েছে, তাদের ছানা হয়েছে, সংসার পাতা হয়েছে- এমন সময়ে তারা কিসের আবেগে অভিভূত হয়ে পরিচিত বাসা ছেড়ে পথহীন সমুদ্রের উপর দিয়ে কোন সিন্ধুতীরে আর-এক বাসার দিকে উড়ে চলেছে। । সেদিন সন্ধ্যায় আকাশপথে যাত্রী হংস-বিলাক আমার মনে এই ভােব জাগিয়ে দিল- এই ৷ নদী, বন, পৃথিবী, বসুন্ধরার মানুষ সকলে এক জায়গায় চলেছে ; তাদের কোথা থেকে শুরু কোথায় শেষ তা জানি নে । আকাশে তারার প্রবাহের মতো, সীের-জগতের গ্ৰহ-উপগ্রহের ছুটে চলার মতো এই বিশ্ব কোন নক্ষত্ৰকে কেন্দ্র করে প্রতি মুহুর্তে কত মাইল বেগে ছুটে চলেছে। কেন তাদের এই ছুটিাছুটি তা জানি নে, কিন্তু ধাবমান নক্ষত্রের মতো তাদের একমাত্র এই বাণী এখানে নয়, এখানে নয় । বলাকার রবীন্দ্ৰ-শতবর্ষ-পূর্তি-সংস্করণে (यांना s७७१) উল্লিখিত রবীন্দ্ৰ ব্যাখ্যা ও আলোচনা সামগ্রিকভাবে বলাকার অঙ্গীভূত হইয়াছে। বলাকার পুনর্মুদ্রণে বা সংস্করণে তদবধি