পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৮১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গ্ৰন্থপরিচয় ԳS & [অন্নদা] বহুবিবাহ কাকে বলে এবার সেটা নতুন করে বুঝেছি। আশু । কী রকম শুনি । অন্নদা । একের সঙ্গেই আমাদের বহুবার করে মিলন হচ্ছে। একটি পুরাতনকেই আমরা বারে বারে নূতন করে পাচ্ছি। মাও। আমি তাে এই তত্ত্ব তােমাকে এর আগে বােঝাতে চেয়েছিলুম, তখন তুমি কান দেও অন্নদা । এখন ভালো গুরু পেয়েছি বলেই সব বোঝা এত সহজ হয়ে গেছে । তোমাকেও কতবার আমি বোঝাতে চেয়েছি, মন্ত্র জিনিসটা খুবই সত্য সন্দেহ নেই, কিন্তু সে তো পুঁথির মন্ত্র নয়- মন্ত্র আছে চোখে মুখে হাসিতে ইশারায় । আমার কথা বিশ্বাস কর নি- এখন মন্ত্রদাতা যেমনি পেয়েছ অমনি সব সন্দেহ ঘুচে গেছে। আশু । চললেম । এক ঘণ্টার মধ্যেই যাবার কথা আছে । আর কুড়ি মিনিট বাকি । অন্নদা । একটা কথা বলে নিই। তোমার তো অনেক কবিবন্ধু আছে- আমাদের এই বহুবিবাহের উৎসবে একটি নাটক ফরমাশ দিতে চাই । আশু । বিষয়টা কী হবে বলো দেখি । অন্নদা । হারাধনকে ফিরে পাওয়া । আশু । যেমন মৃত্যুর ভিতর দিয়ে আমরা পুরোনো জীবনকে আবার নতুন করে পাই । অন্নদা । আশু, তোমার ও-সব তত্ত্বকথা রাখো । এখন আমার কবিত্বে ভারি দরকার । এমনি হয়েছে যদি শিগগির একটা কাব্য জুটিয়ে না দিতে পার তা হলে আমিই লিখতে বসে যাবসম্পাদক, পাঠক, মাস্টারমশায়, পুলিসম্যান, কাউকে মানব না । সেই বিপদ থেকে গৌড়জনকে कों कां । আশু ২৭ আচ্ছা বেশ, বিষয়টা তা হলে এই রইল- শীতের ভিতর দিয়ে একই বসন্তের বার বার নতুন হয়ে ফিরে ফিরে আসা । যখন মনে হচ্ছে সবই ঝরে পড়ল তার পরেই দেখি সবই গজিয়ে উঠছে, বনলক্ষ্মীর আঁচল যেই শূন্য হয় আমনিই তা দেখতে দেখতে ভরে ওঠে । এমনি করে একই ধনকে বার বার করে পাওয়া । অন্নদা। বাহবা আশু ! একেই তো বলে কবিত্ব ! কিন্তু বহুবিবাহ করলুম। আমি, আর তোমার মাথায় তার কবিত্ব গজিয়ে উঠল কী করে । আশু । বলব ? বাইশ নম্বরে আমি র্যার কাছে আজ মন্ত্র নিয়ে এসেছি, মনে হল এ-মন্ত্র তারই চোখ মুখ হাসি থেকে যেন আমি বারে বারে নিয়েছি- নতুন নতুন নম্বরের গলিতে, নতুন নতুন ভাষায় । তোমার মহীমোহিনী যেমন তোমার একবারই মোহিনী নয়, আমার মনোরমাও তেমনি অন্নদা। হয়েছে, হয়েছে হে, আর বলতে হবে না । জীবনের লুকোচুরি খেলার রসটি আমরা দুই বন্ধুই ঠিক এই মুহুর্তে ধরতে পেরেছি। আশু । (মহীমোহিনীর দিকে ফিরিয়া) দেবী, তোমাদের কল্যাণে আমরা অমৃতকে চক্ষে দেখেছি- আমরা চিরজীবনকে পাকড়াও করেছি। আমরা এখন থেকে পৃথিবীর সেই বুড়োটাকে আর বিশ্বাস করব না- তার মুখোশ খসে গেছে, সে চিরযৌবন, সে চিরপ্রাণ। তাকে যেমনি ধরতে যাই অমনি দেখি, সে নেই- তার জায়গায় তোমরা— হে চিরসুন্দর, হে অন্নদা । আরে আরো আশু, কর কী, কর কী । তুমি আমার মুখের সব কথাই যে কেড়ে নিলে, কিছু আর বাকি রাখলে না ! ভুলে যােচ্ছ, তোমার কুড়ি মিনিটের আর বারো মিনিট মাত্র বাকি । আশু । ঠিক বটে, চললুম। অন্নদা। কােজ সারা হলে তোমার কবিকে একবার ঠেলে তুলো— ভুলো না। ফাল্গুন মাসে ।