পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৮১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী ماه ۹ ত্ৰিশটা বই দিন নেই । আশু । পীজির ফাঙ্গুনের সঙ্গে আমাদের ফাঙ্গুনের মিলবে না। আমাদের ফাঙ্গুনের দিন বেড়ে 2 -শনিবারের চিঠি, মাঘ ১৩৪৮ ১৯২৫ খৃস্টাব্দের বর্ষাকালে ঢাকায় একবার ফান্ধুনীর অভিনয় হয় । রবীন্দ্রনাথ সেই উপশেচক্ষেত্র বন্দোপাধ্যায়কে নিম্নমূত্রিত কথােপকথনকৈ নাটকের সূচনার শেষে যােজনার छ०J কবি, তুমি যে এই ভরা বাদলের মাঝখানে ফায়ুনের তলব করে বসলে, এ তোমার কী রকম খ্যাপামি । । - এ খ্যাপামি শিখেছি সেই খ্যাপার কাছ থেকে যিনি জ্যৈষ্ঠের হােমহুতাশনের ভরা দাহনের মধ্যে সজলজলন্দসিন্ধকান্ত আষাঢ়ের অভিষেক-উৎসবের নিমন্ত্রণপত্র জারি করে বসেন কদম্বের নবকিশলয়ে । যিনি পাতাঝরা উত্তরে হাওয়ার সুর এক মুহুর্তে ফিরিয়ে দিয়ে বনসভায় দক্ষিণ হাওয়ার আসর। জমিয়ে তোলেন । বর্ষার শিঙাখানা কেড়ে নিয়ে তাতেই যদি বসন্তের বঁাশি * বাজিয়ে তুলতে না পারি। তবে আমি কবি কিসের । পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে । পর্যানে বসন্ত এল কার মন্তরে । মনোরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয়কে একটি পত্রে (শিলাইদহ, ২০ মাঘ ১৩২২) রবীন্দ্ৰনাথ লিখিয়াছিলেন : ফাল্গুনীর ভিতরকার কথাটি এতই সহজ যে, ঘটা করে তার অর্থ বোঝাতে সংকোচ বোধ হয় । জগৎটার দিকে চেয়ে দেখলে দেখা যায় যে, যদিচ তার উপর দিয়ে যুগ যুগ চলে যাচ্ছে তবু সে জীৰ্ণ নয়- আকাশের আলো উজ্জ্বল, তার নীলিমা নির্মল । ধরণীর মধ্যে রিক্ততা নেই, তার শ্যামলতা অস্নান- অথচ খণ্ড খণ্ড করে দেখতে গেলে দেখি ফুল ঝরছে, পাতা শুকচ্ছে, ডাল মরছে । জরামৃত্যুর আক্রমণ চারিদিকেই দিনরাত চলেছে, তবুও বিশ্বের চিরনবীনতা নিঃশেষ হল। না। Facts-এর দিকে দেখি জরা মৃত্যু, Truth-এর দিকে দেখি অক্ষয় জীবন যৌবন । শীতের মধ্যে এসে যে-মুহুর্তে বনের সমস্ত ঐশ্বৰ্য দেউলে হল বলে মনে হল সেই মুহুর্তেই বসন্তের অসীম সমারোহ বনে বনে ব্যাপ্ত হয়ে পড়ল । জরাকে, মৃত্যুকে ধরে রাখতে গেলেই দেখি, সে আপন ছদ্মবেশ ঘুচিয়ে প্রাণের জয়পতাকা উড়িয়ে দাড়ায় । পিছন দিক থেকে যেটাকে জরা বলে মনে হয়। সামনের দিক থেকে সেইটোকেই দেখি যৌবন । তা যদি না হত তা হলে অনাদি কালের এই জগৎটা আজ শতজীৰ্ণ হয়ে পড়ত- এর উপরে যেখানে পা দিতুম সেইখানেই ধসে যেত । বিশ্বপ্রকৃতির মধ্যে প্রতি ফায়ুনে চিরপুরাতন এই যে চিরনূতন হয়ে জন্মাচ্ছে, মানুষপ্রকৃতির মধ্যেও পুরাতনের সেই লীলা চলছে। প্ৰাণশক্তিই মৃত্যুর ভিতর দিয়ে আপনাকে বারে বারে নূতন করে উপলব্ধি করছে। যা চিরকালই আছে তাকে কালে কালে হারিয়ে হারিয়ে না। যদি পাওয়া যায়। তবে তার উপলব্ধিই থাকে না । - ফাল্গুনীর যুবকের দল প্ৰাণের উদ্দাম বেগে প্ৰাণকে নিঃশেষ করেই প্ৰাণকে অধিক করে পাচ্ছে । সর্দার বলছে, ভয় নেই, বুড়োকে আমি বিশ্বাসই করি নে— আচ্ছা দেখ, যদি তাকে ধরতে পারিস তো ধর। প্রাণের প্রতি গভীর বিশ্বাসের জোরে চন্দ্ৰহাস মৃত্যুর গুহার মধ্যে প্রবেশ করে সেই প্রাণকেই নূতন করে- চিরন্তন করে দেখতে পেলে। যুবকের দল বুঝতে পারলে