পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৮১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Adbr 粤 রবীন্দ্র-রচনাবলী তার ঠিক নেই। তখন তোমাকে হঠাৎ বুড়ো বলে মনে হল । তার পর গুহার মধ্যে থেকে বেরিয়ে এলে- এখন মনে হচ্ছে তুমি বালক- যেন তোমাকে এই প্ৰথম দেখলুম। এ তো বড়ো আশ্চৰ্য, তুমি বারে বারেই প্ৰথম, তুমি ফিরে ফিরেই প্রথম। -সবুজ পত্র, আশ্বিন-কার্তিক ১৩২৪ দুই বোন দুই বোন ১৩৩৯ সালে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় । বিচিত্রা মাসিক পত্রে (অগ্রহায়ণ-ফাল্লুন ১৩৩৯) উপন্যাসটি ধারাবাহিক প্রকাশিত হইয়াছিল । দুই বোন সম্বন্ধে রবীন্দ্রনাথের একটি পত্র বিচিত্রায় (শ্রাবণ ১৩৪০) মুদ্রিত হইয়াছিল, নিমে তাহা সংকলিত হইল : তুমি লিখেছ তোমার বান্ধবী আমার কল্পিত ‘দুই বোন এর ভাগ্যবিভ্রাটের যত দোষ চাপিয়েছেন শশাঙ্কের ঘাড়ে । তিনি লক্ষ্য করেন নি যে দোষটা প্রকৃতি মায়াবিনীর । মানুষের চলবার বাধা রাস্তায় সেই নিষ্ঠুর চােরা-ফাদ পেতে রাখে, অসন্দিগ্ধমনে চলতে চলতে হঠাৎ পথিক এমন জায়গায় পা ফেলে যেখানটাতে ঢাকা গর্ত । শশাঙ্কের সংসারযাত্রার রাস্তাটা দেখতে ছিল মজবুত, কিন্তু শশাঙ্কের চলনের পক্ষে ছিল পিছল। হতভাগা ঘাড়মোড় ভেঙে পড়বার পূর্বে সে কথাটা তার আপনার কাছেও যথেষ্ট গোচর হয় নি । দিনগুলো চলছিল ভালোই, কিন্তু যে সাকো বেয়ে চলছিল তার বাধনে ছিল ফাঁক । কেননা শশাঙ্কে শামিলায় ভিতরে ভিতরে জোড় মেলে নি, অথচ ফাটলটা উপর থেকে ধরা পড়ে নি চােখে । হঠাৎ বাইরে থেকে মড়মড় করে চাড় লাগবার আগে সে কথা কি ওরা কেউ জানতে পেরেছিল । যখন জানা গেছে তখন তো কপাল ভেঙেছে। পরামর্শদাতা বলবে ফাটা কপালে ব্যান্ডেজ বেঁধে ভালোমানুষের মতো সেই সাবেক রাস্তায় উছোট খেতে খেতে লাঠি ধরে খুঁড়িয়ে চলা কর্তব্য | শশাঙ্ক সেইভাবেই চলত। কিন্তু শৰ্মিলা বলে বসল। তেমন চলায় কোনো পক্ষেই সুখ নেই। স্পর্ধাপূর্বক আপনি বিশেষ প্ল্যান অনুসারে ভাগ্যকে সংশোধন করবার প্রস্তাব জানালে । কিন্তু ভাগ্যলিপির উপরে কলম চালানো এত সহজ নয়। সে কথাটা বুঝেছিল উৰ্মিমালা। ভূমিকম্পনিক কেন্দ্রের উপরে কাচা মাল-মসলায় তৈরি নড়ানড়ে বাসায় আশ্রয় নিতে সে নারাজ । তাই সে দিলে “দৌড় । তার পরে কী ঘটল তা কে বলবে ? কালক্রমে উপরকার কাটার দাগটা হয়তো মিলিয়ে গেল, কিন্তু মাঝে মাঝে নাড়া খেয়ে ভিতরকার ছেড়া স্নায়ুর ব্যথাটা কি আজও টনাটনিয়ে ওঠে না । ব্যথা যারা পায় তাদেরই উপরে আমরা জজিয়তি করি, কিন্তু ব্যথা ঘটাবার দায়িক কি সব সময়ে তারাই নিজে ? বঁজাঘাতে মল মানুষটা, তুমি বললে কিনা পূর্বজন্মের পাপের ফল । ওটাতে কেবল দোষ দেবার অন্ধ। ইচ্ছারই প্ৰমাণ হয়, দোষের প্রমাণ হয় না । তুমি লিখেছ তোমার বান্ধবী আমার গল্পটার সব কটি পাত্রের পরেই বিমুখ । সংখ্যা অতি অল্প, তিনটিমাত্র প্রাণী, তবু তারা একজনও তার মনের মতো নয়। তা নিয়ে দুঃখিত হবার কারণ নেই। কেননা, অভিব্যক্তিতত্ত্বের প্রাকৃতিক নির্বাচনপ্রণালী সাহিত্যে এবং সমাজে একই নয় । সমাজে যাদের আমরা বন্ধুর কোঠায় গণ্য করি নে সাহিত্যে তারা সমাদর পেয়েছে, এ দৃষ্টান্ত ভুরি ভুরি আছে । আদর্শ মানবচরিত্রের মাপে সাহিত্যের শ্রেষ্ঠতা-বিচার বাংলাদেশের সমালোচক-শ্রেণী ছাড়া পৃথিবীর আর কোথাও দেখা যায় না । মনে আছে এমন তর্ক একদা প্রায়ই শোনা যেত যে, আদর্শ সতী নারী হিসাবে ভ্রমর এবং সূর্যমুখীর চরিত্রে আধরতি পরিমাণে শ্ৰেষ্ঠতার তারতম্য কোন কথা কোন ভঙ্গিটুকু নিয়ে। অল্প বয়স সত্ত্বেও মনে আক্ষেপ হত যে অরসিকেষু রসস্য নিবেদনং ইত্যাদি । সাহিত্য যে শ্ৰেয়স্তত্ত্বের নিখুঁত ছাচে ঢালাই করা পুতুল