পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৮৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

brS 8 রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী পন্থা অনুসন্ধান করিব, এইটিই স্বাভাবিক। আর আমরাও যে এতদিন আবেদন আন্দােলন প্রভৃতিতে খুব বিনীত বিনম্র ভাবের পরিচয় দিয়া আসিতেছি, তাহা বলিতে পারা যায় না। গবর্মেন্ট এ-সকল কথা বেশ বোঝেন । এমন অবস্থায় তাহাদের উপর শিক্ষার ভার অপণ করিয়া আমরা কেমন করিয়া নিশ্চিন্ত থাকিতে পারি । বাস্তবিক বর্তমান প্ৰণালীর বিদ্যাশিক্ষা আমাদের পক্ষে কোনােমতেই কল্যাণকর হইতে পারে না। বিদেশী অধ্যাপক অশ্রদ্ধার সঙ্গে শিক্ষা দেন। শিক্ষালাভের সঙ্গে সঙ্গে তাঁহাদের নিকট হইতে আমরা এমন-একটা জিনিস পাই, যাহা আমাদের মনুষ্যত্ব বিকাশের পক্ষে অনুকুল নহে। আমাদের উপনিষদে আছে, “শ্রদ্ধয়া দেয়াম, অশ্রদ্ধয়া আদেয়ম।” অশ্রদ্ধার সহিত দান করিলে দানের প্রকৃত ফল লাভ হয় না । এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা আমাদের অন্তঃকরণকে অস্থিমজ্জাকে একেবারে দাসত্বে অভিভূত করিয়া ফেলিয়াছে। তাই আমাদের নিজেদের শিক্ষার ভার নিজেদের হাতে রাখিতেই হইবে । পূর্বে যখন দেশ ঘোরতর অন্ধকারে আচ্ছন্ন ছিল, তখনও আমাদের সমােজ আপনাকে আপনি শিক্ষা দিয়াছে, আপনার ভিতরে আর প্রতিকূলতা জন্মায় নাই । আজ আমাদের অন্তঃকরণের সম্মুখে যে বৃহৎ প্রয়োজন জাগিয়া উঠিয়াছে তাহাকে সার্থক করিতে হইলে যাহাতে আমরা নিজেদের শিক্ষাকে স্বাধীন করিতে পারি অধ্যবসায়ের সহিত, শান্তির সহিত, সাধনার সহিত, আমাদিগকে তাহারই ব্যবস্থা করিতে হইবে । গবমেন্ট নিজের বিশ্ববিদ্যালয়কে যে অপমান করিয়াছেন, তাহা নিজেকেই অপমান করা । প্রতিষ্ঠিত করিব । আমরা ভারি দুর্বল, ভারি অসহায়, এই ভাবিয়াই আমরা এতদিন আমাদিগকে এরূপ অশক্ত করিয়া রাখিয়াছিলাম । আজ আর আমরা ভয় পাই না । গবমেন্ট নিজের জিনিস চূৰ্ণ করুন, আমরা এই অপমানের মূলোচ্ছেদ করিবার জন্য ভারতের সরস্বতীকে আবার ভারতের নিজের মন্দিরে আনিয়া প্ৰতিষ্ঠিত করি । জানি না। আমাদের নেতারা বিষয়টিকে ঠিক কিরূপ ভাবে দেখিবেন । যদি দেশের হৃদয় এইদিকে যথার্থই উন্মুখ হইয়া থাকে, তবে স্থায়ীভাবে এ অপমানের প্রতিকারের জন্য র্তাহারা নিঃসন্দেহ চেষ্টিত হইবেন । ইহার চেয়েও গুরুতর আশার কথা এই যে, এ পর্যন্ত যে-সকল ঘটনা ঘটিয়াছে তাহা নেতৃগণের বা আপনাদের কাহারও রচিত নয়, তাহা বিধাতারই অমোঘ বিধানে শক্তি দিবেন । আপনারা নিজের আদর্শের কাছে, স্বদেশের কাছে, ঈশ্বরের কাছে সত্য থাকিবেন ; তাহা হইলে আর কাহারও মুখাপেক্ষা করিয়া থাকিতে হইবে না । ১৬ই কার্তিক বৃহস্পতিবার [:১৩১২] “ফিলড এন্ড একাডেমী' ভবনে মেম্বর এবং ছাত্ৰগণের এক সান্ধ্যসম্মিলন হয় ।-- শ্ৰীযুক্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর [শিক্ষা এবং স্বদেশী আন্দোলন সম্বন্ধে] আলোচনা উত্থাপন করিয়া বলেন যে, বর্তমান বঙ্গব্যবচ্ছেদঘটিত ব্যাপারটা সার্বজনীন । ছাত্ররা যে ইহাতে যোগদান করিয়াছেন, তাহা অত্যন্ত স্বাভাবিক, ইহার জন্য র্তাহাদিগকে কোনো দোষ-দেওয়া যায় না। নেতৃগণ আশানুরাপ ত্যাগাস্বীকার করিতেছেন না বলিয়া যে একটা কথা উঠিয়াছে, সে সম্বন্ধে তিনি বলেন যে, যদি নেতৃগণ এ বিষয়ে বাস্তবিকই অপরাধী হন, তবে সে-অপরাধ একা তাহাদের নয়, আমাদের পাচজনেরই ; কেননা আমাদের পাচজনের শক্তি সংহত হওয়াতেই নেতার শক্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। এই-যে আমাদের মধ্যে পরস্পরের প্রতি অনাস্থার ভাব এটি খুব অমঙ্গলকর, ইহাতে আমাদের বলক্ষয় হইবার সম্ভাবনা। জাতীয় ধনভাণ্ডার সম্বন্ধে তিনি বলেন যে, উহার ইংরেজি নাম দেওয়াটাই মন্ত ভুল হইয়াছে। ইংরেজি নাম শুনিলে মনে একটা বিরাট ভাবের উদয় হয় । যদি এই ভাণ্ডারের নাম National Fund না রাখিয়া আমরা “বঙ্গভাণ্ডার