পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৮৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

trS ዩጋ রবীন্দ্র-রচনাবলী । চলিতেছে। অনেক ধনীসন্তান এজন্য অর্থসাহায্য করিতেও প্রতিশ্রুত হইয়াছেন । এ বিষয়ে অন্যের কথা তিনি দৃঢ়ভাবে বলিতে পারেন না । নেতৃগণের মধ্যে এখনো কাহারও কাহারও সন্দেহ আছে যে, নূতন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হইলে ছাত্রগণ তাহাতে প্ৰবেশ করিবেন কি না । ছাত্রেরা সভা করিয়া নেতাদিগের নিকট ডেপুটেশন পাঠাইয়া বা সতীশবাবুর [ডন সোসাইটির সতীশচন্দ্ৰ মুখোপাধ্যায়] প্ৰতিজ্ঞাপত্রে স্বাক্ষর করিয়া এ সন্দেহ ভঞ্জন করিতে পারেন । প্রথম অবস্থাতেই আমাদের দেশের লোকের নিকট বেশি আশা করা দুরাশা। এতদিন আমরা কেবল বিদেশীর রুদ্ধ দ্বারেই আঘাত করিয়াছি, এখন কিছুদিন স্বদেশীর দ্বারে আঘাত করিতে হইবে । প্ৰত্যাখ্যাত হইলেও তাহাতে আমাদের কোনো অপমান নাই, কেননা তাহারা আমাদেরই নিজের লোক । অভিভাবকেরা ছাত্রগণকে কেন সম্মতি দিবেন না, তাহা বুঝিতে পারা যায় না। আজ যে উত্তেজনার তরঙ্গ উঠিয়াছে, তাহা কি অভিভাবকদিগের হৃদয়ও স্পর্শ করে নাই। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি ইঞ্জিনিয়ারিং প্রভৃতি শিক্ষার বন্দোবস্ত প্ৰথমেই না হয়, তবে অবশ্যই তাহা ইংরেজের বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়া গ্রহণ করিতে হইবে। প্রয়োজন হইলে বিদেশেও যাইতে হইবে । বিশেষ বিশেষ শিক্ষাকে কোনো গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ করিয়া রাখিলে চলিবে না । ছাত্রেরা সাময়িক আন্দোলনে যোগ দিবে কি না। এ সম্বন্ধে তিনি তাহার পূর্বপ্রকাশিত মতের পুনরুক্তি করিয়া বলেন যে, ছাত্রজীবনে যদি কাহারও স্বদেশের সুখদুঃখ আশা-আকাঙ্ক্ষার সহিত পরিচয় না হয়, তবে পঁচিশ বৎসর বয়সের পরে যে তাহা হইবে, ইহা কখনোই স্বাভাবিক নহে, দেশের পক্ষে তাহা কল্যাণকরও হইতে পারে না। আজ যে-সকল ছাত্র গবর্মেন্টের কৃত অপমানে বিশ্ববিদ্যালয় সম্মুখে যে কুসুমাস্তৃত পথ রহিয়াছে, তাহা বলা যায় না। তঁহাদিগকে নিজের জীবন উৎসর্গ করিয়া ভবিষ্যদ-বংশীয়দিগের জন্য পথ প্ৰস্তুত করিতে হইবে । ছাত্রেরা কি তাহাতে প্ৰস্তুত আছেন । আজ জোয়ারের সময় তাহারা যে-আত্মদানের সংকল্প গ্ৰহণ করিবেন, ভাটার সময় যেন তাহা হইতে ভ্ৰষ্ট না হন । [সভার] উপসংহারে শ্ৰীযুক্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেন যে, ছাত্রমণ্ডলী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আত্মবিসর্জন করিবার যে সংকল্প করিয়াছেন, তাহার জন্য র্তাহারা দেশের শুভাকাঙক্ষীমাত্রেরই ধন্যবাদাহঁ। যদি তাহারা এই সংকল্প রক্ষা করিতে পারেন, তবে এই দিন বাংলার ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হইয়া থাকিবে । এই আন্দােলনের ফলে যে “জাতীয় শিক্ষাসমাজ” বা ‘জাতীয় শিক্ষাপরিষৎ প্রতিষ্ঠিত হয় তাহার প্রাককালে আহুত বিভিন্ন মন্ত্রণাসভা, গঠনপ্রণালী-আলোচনাসমিতি হইতে আরম্ভ করিয়া জাতীয় শিক্ষাপরিষৎ প্ৰতিষ্ঠা পর্যন্ত, ও তাহার পর ঐ প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত নানা কর্মভারের সহিত রবীন্দ্রনাথ অনেকদিন, যুক্ত ছিলেন ।** শিক্ষা গ্রন্থের প্রচলিত স্বতন্ত্র সংস্করণে শিক্ষা-বিষয়ক আরো ১৭টি প্ৰবন্ধ সংকলিত আছে । S१ धंदा : ১ জাতীয় শিক্ষাপরিষৎ প্রতিষ্ঠা উৎসবে রবীন্দ্রনাথের বক্তৃতা : 'জাতীয় বিদ্যালয়- রবীন্দ্র-রচনাবলী, বর্তমান খণ্ড (প্রচলিত দ্বাদশ খণ্ড), পৃ. ৫৮৭ “শিক্ষাসমস্যা - রবীন্দ্র-রচনাবলী, বর্তমান খণ্ড (প্রচলিত দ্বাদশ খণ্ড), পৃ. ৫৭৬ ২ । “সৌন্দর্যবোধ’, ‘বিশ্বসাহিত্য’, ‘সৌন্দর্য ও সাহিত্য” ইত্যাদি ) জাতীয় শিক্ষাপরিষদে প্রদত্ত বক্তৃতাবলী- “সাহিত্য, রবীন্দ্র-রচনাবলী, অষ্টম খণ্ড (সুলভ সংস্করণ, চতুর্থ খণ্ড) । ৩ । জাতীয় শিক্ষাপরিষদের প্রশ্নপত্র- “আদর্শ প্রশ্ন পুস্তিকার পরিশিষ্ট, রবীন্দ্র-রচনাবলী, অচলিত সংগ্ৰহ, দ্বিতীয় খণ্ড ।