পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Yల8 রবীন্দ্র-রচনাবলী ফাল্গুন মাসের পুণ্যতিথিতে শুভলগ্ন । রাজহস্তীর পৃষ্ঠে রত্নাসনে মদ্ররাজসভায় এসেছে মহারাজ অরুণেশ্বরের অঙ্কবিহারিণী বীণা ৷ স্তন্ধসংগীতে সেই রাজপ্রতিনিধির সঙ্গে কন্যার বিবাহ । যথাকালে রাজবধু এল পতিগৃহে। নির্বাণদীপ অন্ধকার ঘরেই প্রতি রাত্রে স্বামীর কাছে বধূসমাগম । কমলিক বলে, ‘প্রভু, তোমাকে দেখবার জন্যে আমার দিন আমার রাত্রি উৎসুক। আমাকে দেখা দাও । রাজা বলে, “আমার গানেই তুমি আমাকে দেখো।' অন্ধকারে বীণা বাজে । অন্ধকারে গান্ধবীকলার নৃত্যে বধূকে বর প্রদক্ষিণ করে। সেই নৃত্যকলা নির্বাসনের সঙ্গিনী হয়ে এসেছে তার মর্তদেহে । নৃত্যের বেদন রানীর বক্ষে এসে দুলে দুলে ওঠে, নিশীথরাত্রে সমুদ্রে জোয়ার এলে তার ঢেউ যেমন লাগে তটভূমিতে— অশ্রীতে প্লাবিত করে দেয় । একদিন রাত্রির তৃতীয় প্রহরের শেষে যখন শুকতারা পূর্বগগনে, কমলিক তার স্বগন্ধি এলো চুলে রাজার দুই পা ঢেকে দিলে ; বললে, ‘আদেশ করে আজ উষার প্রথম আলোকে তোমাকে প্রথম দেখব ।” রাজা বললে, ‘প্রিয়ে, না-দেখার নিবিড় মিলনকে নষ্ট কোরো না এই মিনতি । মহিষী বললে, ‘প্রিয়প্রসাদ থেকে আমার দুই চক্ষু কি চিরদিন বঞ্চিত থাকবে অন্ধতার চেয়েও এ যে বড়ো অভিশাপ |’ অভিমানে মহিষী মুখ ফেরালে।