পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী একদিন ছিলেম ওরই চরের ঘাটে, নিভৃতে, সবার হতে বহুদূরে। ভোরের শুকতারাকে দেখে জেগেছি, ঘুমিয়েছি রাতে সপ্তর্ষির দৃষ্টির সম্মুখে নৌকার ছাদের উপর । আমার একলা দিন-রাতের নানা ভাবনার ধীরে ধীরে চলে গেছে ওর উদাসীন ধারা— পথিক যেমন চলে যায় গৃহস্থের সুখদুঃখের পাশ দিয়ে, অথচ দুর দিয়ে। তার পরে যৌবনের শেষে এসেছি তরুবিরল এই মাঠের প্রান্তে । ছায়াবৃত সাওতাল-পাড়ার পুঞ্জিত সবুজ দেখা যায় অদূরে । এখানে আমার প্রতিবেশিনী কোপাই নদী। প্রাচীন গোত্রের গরিমা নেই তার । অনার্য তার নামখানি কত কালের সাওতাল নারীর হাস্যমুখর কলভাষার সঙ্গে জড়িত । গ্রামের সঙ্গে তার গলাগলি, স্থলের সঙ্গে জলের নেই বিরোধ । তার এ পারের সঙ্গে ও পারের কথা চলে সহজে । শণের খেতে ফুল ধরেছে একেবারে তার গায়ে গায়ে, জেগে উঠেছে কচি কচি ধানের চারা । রাস্তা যেখানে থেমেছে তীরে এসে সেখানে ও পথিককে দেয় পথ ছেড়ে কলকল স্ফটিকস্বচ্ছ স্রোতের উপর দিয়ে । অদূরে তালগাছ উঠেছে মাঠের মধ্যে, তীরে আম জাম আমলকীর ঘেঁষাৰ্ঘেষি ।