পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

338 রবীন্দ্র-রচনাবলী স্ত্রশ। তাকে ক দিন ধরে বুঝিয়ে বুঝিয়ে আমার দলে টেনে নিয়েছি। কিন্তু, তিনি র্তার দেশলাইয়ের কাঠি ছাড়েন নি। তিনি বলেন, সন্ন্যাসীরা কৃষিতত্ত্ব বস্তুতত্ত্ব প্রভৃতি শিথে গ্রামে গ্রামে চাষীদের শিখিয়ে বেড়াবে, এক টাকা ক’রে শেয়ার নিয়ে একটা ব্যাঙ্ক খুলে বড়ো বড়ো পল্লীতে নূতন নিয়মে এক-একটা দোকান বসিয়ে আসবে— ভারতবর্ষের চারি দিকে বাণিজ্যের জাল বিস্তার করে দেবে। তিনি খুব মেতে উঠেছেন । পূর্ণ। বিপিনবাবুর কী মত । বিপিন। যদিচ আমি নিজেকে শ্ৰীশের নবীন সন্ন্যাসী-সম্প্রদায়ের আদর্শ পুরুষ বলে জ্ঞান করি নে, কিন্তু দল যদি গড়ে ওঠে তো আমিও সন্ন্যাসী সাজতে রাজি আছি । পূর্ণ। কিন্তু সাজতে খরচ আছে মশায় । কেবল কেীপীন নয় তো, অঙ্গদ কুগুল আভরণ কুন্তলীন দেলখোশ— ঐশ। পূর্ণবাৰু, ঠাট্টাই কর আর যাই কর চিরকুমার-সভা সন্ন্যাসীসভা হবেই। আমরা এক দিকে কঠোর আত্মত্যাগ করব, অন্য দিকে মনুষ্যত্বের কোনো উপকরণ থেকে নিজেদের বঞ্চিত করব না। আমরা কঠিন শৌর্য এবং ললিত সৌন্দর্য উভয়কেই সমান অাদরে বরণ করব, সেই দুরূহ সাধনায় ভারতবর্ষে নবযুগের আবির্ভাব হবে-— পূর্ণ। বুঝেছি শ্ৰীশবাবু— কিন্তু নারী কি মহন্তত্বের একটা সর্বপ্রধান উপকরণের মধ্যে গণ্য নয়। এবং তাকে উপেক্ষা করলে ললিত সৌন্দর্যের প্রতি কি সমাদর রক্ষা হবে । তার কী উপায় করলে। শ্ৰীশ । নারীর একটা দোষ, নরজাতিকে তিনি লতার মতো বেষ্টন করে ধরেন । যদি তার দ্বারা বিজড়িত হবার আশঙ্কা না থাকত, যদি তাকে রক্ষা করেও স্বাধীনতা রক্ষা করা যেত, তা হলে কোনো কথা ছিল না । কাজে যখন জীবন উৎসর্গ করতে হবে তখন কাজের সমস্ত বাধা দূর করতে চাই– পাণিগ্রহণ করে ফেললে নিজের পাণিকেও বদ্ধ করে ফেলতে হবে, সে হলে চলবে না পূর্ণবাবু। পূর্ণ। ব্যস্ত হোয়ে না ভাই, আমি আমার শুভবিবাহে তোমাদের নিমন্ত্রণ করতে আসি নি। কিন্তু ভেবে দেখো দেখি, মনুষ্যজন্ম আর পাব কি না সন্দেহ, অথচ হৃদয়কে চিরজীবন যে পিপাসার জল থেকে বঞ্চিত করতে যাচ্ছি তার পূরণস্বরূপ আর কোথাও আর কিছু জুটবে কি। মুসলমানের স্বর্গে হুরী আছে, হিন্দুর স্বর্গেও অঙ্গরার অভাব নেই, চিরকুমার-সভার স্বর্গে সভাপতি এবং সভ্যমহাশয়দের চেয়ে মনোরম জার-কিছু পাওয়া যাবে কি । শ্ৰীশ। পূর্ণবাবু বল কী। তুমি ষে—