পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী وهم جذ নীরবালা । তা, আমরা তো ভাই, ফেলে দেবার জিনিস নয় যে অমনি ছেড়ে দিলেই হল। আমাদের জন্যে যে এতটা হাঙ্গামা হচ্ছে সে তে গৌরবের কথা। কুমারসম্ভবে তো পড়েছিস গৌরীর বিয়ের জন্য একটি আস্ত দেবতা পুড়ে ছাই হয়ে গেল। যদি কোনো কবির কানে ওঠে তা হলে আমাদের বিবাহের একটা বর্ণনা বেরিয়ে যাবে। নৃপবালা । না ভাই, আমার ভারী লজ্জা করছে । নীরবালা। আর, আমার বুঝি লজ্জা করছে না? আমি বুঝি বেহায়া ? কিন্তু কী করবি বল। ইস্কুলে যেদিন প্রাইজ নিতে গিয়েছিলুম লজ্জা করেছিল, আবার তার পরবছরেও প্রাইজ নেবার জন্যে রাত জেগে পড়া মুখস্থ করেছিলেম। লজ্জাও করে, প্রাইজও ছাড়ি নে, আমার এই স্বভাব । নৃপবাল। আচ্ছা নীরু, এবারে যে প্রাইজটার কথা চলছে সেটার জন্যে তুই কি খুব ব্যস্ত হয়েছিস । নীরবালা । কোনট বল দেখি। চিরকুমার সভার দুটো সভ্য। নৃপবালা। যেই হোক-না কেন, তুই তো বুঝতে পারছিস । নীরবাল । তা ভাই, সত্যি কথা বলব ? ( নৃপর গলা জড়াইয়া কানে কানে ) শুনেছি কুমারসভার দুটি সভ্যের মধ্যে খুব ভাব, আমরা যদি দুজনে দুই বন্ধুর হাতে পড়ি তা হলে বিয়ে হয়েও আমাদের ছাড়াছাড়ি হবে না— নইলে আমরা কে কোথায় চলে যাব তার ঠিক নেই। তাই তো সেই যুগল দেবতার জন্যে এত পুজোর আয়োজন করছি ভাই। জোড়হস্তে মনে মনে বলছি, হে কুমারসভার অশ্বিনীকুমারযুগল, আমাদের দুটি বোনকে এক বোটার দুই ফুলের মতো তোমরা একসঙ্গে গ্রহণ করে । বিরহসস্তাবনার উল্লেখমাত্রে দুই ভগিনী পরস্পরকে জড়াইয়া ধরিল - এবং নৃপ কোনোমতে চোখের জল সামলাইতে পারিল ন৷ নৃপবালা । আচ্ছা নীরু, মেজদিদিকে কেমন করে ছেড়ে যাবি বল দেখি । আমরা দুজনে গেলে ওঁর আর কে থাকবে । নীরবালা। সে কথা অনেক ভেবেছি । থাকতে যদি দেন তা হলে কি ছেড়ে যাই । ভাই, ওঁর তো স্বামী নেই, আমাদেরও নাহয় স্বামী না রইল । মেজদিদির চেয়ে বেশি সুখে আমাদের দরকার কী । পুরুষবেশধারিণী শৈলবালার প্রবেশ - নীরবালা । (টেবিলের উপরিস্থিত থালা হইতে একটি ফুলের মালা তুলিয়া লইয়া