পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী واطنه বিপিন। অনেক সংকল্প ব্যাঙাচির লেজের মতে, পরিণতির সঙ্গে সঙ্গে আপনি অন্তর্ধান করে। কিন্তু যদি লেজটুকুই থেকে যেত, আর ব্যাঙটা যেত শুকিয়ে, সে কিরকম হত। এক সময়ে একটা সংকল্প করেছিলেম বলেই যে সেই সংকল্পের খাতিরে নিজেকে শুকিয়ে মারতে হবে আমি তো তার মানে বুঝি নে । শ্ৰীশ । আমি বুঝি। অনেক সংকল্প আছে যার কাছে নিজেকে শুকিয়ে মারাও শ্রেয়। অফলা গাছের মতো আমাদের ডালে পালায় প্রতিদিন যেন অতিরিক্ত-পরিমাণ রসসঞ্চার হচ্ছে এবং সফলতার আশা প্রতিদিন যেন দূর হয়ে যাচ্ছে। আমি ভুল করেছিলুম ভাই বিপিন— সব বড়ো কাজেই তপস্যা চাই, নিজেকে নানা ভোগ থেকে বঞ্চিত না করলে, নানা দিক থেকে প্রত্যাহার করে না আনতে পারলে, চিত্তকে কোনো মহৎ কাজে সম্পূর্ণভাবে নিযুক্ত করা যায় না। এবার থেকে রসচর্চা একেবারে পরিত্যাগ করে কঠিন কাজে হাত দেব, এইরকম প্রতিজ্ঞ করেছি। বিপিন। তোমার কথা মানি । কিন্তু, সব তৃণেই তো ধান ফলে না— শুকোতে গেলে কেবল নাহক শুকিয়ে মরাই হবে, ফল ফলবে না । কিছুদিন থেকে আমার মনে হচ্ছে আমরা যে সংকল্প গ্রহণ করেছি সে সংকল্প আমাদের দ্বারা সফল হবে না— অতএব আমাদের স্বভাবসাধ্য অন্য কোনোরকম পথ অবলম্বন করাই শ্রেয়। ঐশ। এ কোনো কাজের কথা নয়। বিপিন তোমার তন্থরা ফেলো— বিপিন। আচ্ছ, ফেললুম, তাতে পৃথিবীর কোনো ক্ষতি হবে না। শ্ৰীশ। চন্দ্রবাবুর বাসায় আমাদের সভা তুলে নিয়ে যাওয়া যাক— বিপিন । উত্তম কথা । ঐশ। আমরা দুজনে মিলে রসিকবাবুকে একটু সংযত করে রাখব। বিপিন। তিনি একলা আমাদের দুজনকে অসংযত করে না তোলেন। গুরুদাস। সংযমচর্চা যদি আরম্ভ করেন তা হলে আমাকে আর দরকার নেই । বিপিন। দরকার আরও বেশি। রৌদ্র যত প্রখর হবে, জলের প্রয়োজন ততই বাড়বে। এই দুঃসময়ে তুমি আমাকে ত্যাগ কোরো না— সকাল-সন্ধ্যায় যেন দর্শন পাই । সেই গানটা যদি এর মধ্যে তৈরি হয়ে যায় তো আজ সন্ধেবেলায়— কী বল ? গুরুদাস । আচ্ছা, তাই হবে। [ প্রস্থান ভূত্যের প্রবেশ ভৃত্য। একটি বুড়ো বাৰু এসেছেন। বিপিন। বুড়ো বাৰু? জালালে দেখছি। বনমালী আবার এসেছে।