পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চিরকুমার-সভা २१७ চন্দ্রবাবু। দেব, আপনি যে আদর্শ আমাদের সম্মুথে ধরিয়াছেন তাহ অত্যুচ্চ, যে উদ্দেশ্য আমাদের মস্তকে স্থাপন করিয়াছেন তাহা গুরুভার— সে আদেশ এবং সেই উদ্দেশ্যের প্রতি এক মুহূর্তের জন্য ভক্তির অভাব হয় নাই, কিন্তু মাঝে মাঝে শক্তির দৈন্য অনুভব করিয়া থাকি তাহ চরণসমীপে সবিনয়ে স্বীকার করিতেছি । নির্মলা । আমার বোধ হয়, সকল বড়ো কাজেই মানুষ মাঝে মাঝে আপনার অক্ষমতা অনুভব করে হতাশ হয়ে পড়ে, শ্রান্ত মন এক-একবার বিক্ষিপ্ত হয়ে যায়, কিন্তু সে কি বরাবর থাকে । চন্দ্রবাবু। সভা হইতে গৃহে ফিরিয়া আসিয়া যখন কার্যে হাত দিতে যাই তখন সহসা নিজেকে একক মনে হয়, উৎসাহ যেন আশ্রয়হীন লতার মতো লুষ্ঠিত হইয় পড়িতে চাহে।’ –নির্মল, আমরা তো ঠিক এই কথাই বলছিলেম । নির্মলা। পূর্ণবাবু যা লিখেছেন সেটা সত্য— মানুষের সঙ্গ না হলে কেবলমাত্র সংকল্প নিয়ে উৎসাহ জাগিয়ে রাখা শক্ত । চন্দ্রবাবু। আমার ধৃষ্টত মার্জন করিবেন, কিন্তু অনেক চিন্তা করিয়া এ কথা স্থির বুঝিয়াছি, কুমারব্রত সাধারণ লোকের জন্য নহে– তাহাতে বল দান করে না, বল হরণ করে। স্ত্রী পুরুষ পরস্পরের দক্ষিণ হস্ত— তাহারা মিলিত থাকিলে তবেই সম্পূর্ণরূপে সংসারের সকল কাজের উপযোগী হইতে পারে।’ তোমার কী মনে হয় নির্মল । ( নিৰ্মলা নিরুত্তর ) অক্ষয়বাবুও এই কথা নিয়ে সেদিন আমার সঙ্গে তর্ক করছিলেন--- তার অনেক কথার উত্তর দিতে পারি নি। নির্মলা । তা, হতে পারে। বোধ হয় কথাটার মধ্যে অনেকটা সত্য আছে। চন্দ্রবাবু। গৃহস্থসন্তানকে সন্ন্যাসধর্মে দীক্ষিত না করিয়া গৃহাশ্রমকে উন্নত আদর্শে গঠিত করাই আমার মতে শ্রেষ্ঠ কর্তব্য।’ নির্মলা। এ কথাটা কিন্তু পূৰ্ণবাবু বেশ বলেছেন। চন্দ্রবাবু । আমিও কিছুদিন থেকে মনে করছিলেম কুমারব্রত গ্রহণের নিয়ম উঠিয়ে দেব | নির্মলা। আমারও বোধ হয় উঠিয়ে দিলে মন্দ হয় না। কী বল মামা। অন্য কেউ কি আপত্তি করবেন। অবলাকাস্তবাবু, শ্ৰীশবাবু— চন্দ্রবাৰু। আপত্তির কোনো কারণ নেই। নির্মলা। তবু একবার অবলাকাস্তবাবুদের মত নিয়ে দেখা উচিত। চন্দ্রবাবু। মত তো নিতেই হবে।