পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२१8 রবীন্দ্র-রচনাবলী ( পত্রপাঠ ) এ পর্যন্ত যাহা লিখিলাম সহজে লিখিয়াছি, এখন যাহা বলিতে চাহি তাহা লিখিতে কলম সরিতেছে না।’ নির্মলা। মামা, পূর্ণবাবু হয়তো কোনো গোপনীয় কথা লিখছেন, তুমি চেচিয়ে পড়ছ কেন । চন্দ্রবাৰু। ঠিক বলেছ ফেনি । ( আপন মনে পাঠ ) কী আশ্চর্য, আমি কি সকল বিষয়েই অন্ধ। এতদিন তো আমি কিছুই বুঝতে পারি নি। নির্মল, পূর্ণবাবুর কোনো ব্যবহার কি কখনো তোমার কাছে— নির্মলা। ই পূৰ্ণবাবুর ব্যবহার আমার কাছে মাঝে মাঝে অত্যন্ত নির্বোধের মতো ঠেকেছিল । চন্দ্রবাবু অথচ পূর্ণবাবু খুব বুদ্ধিমান। তা হলে তোমাকে খুলে বলি– পূর্ণবাৰু বিবাহের প্রস্তাব করে পাঠিয়েছেন— নির্মলা। তুমি তো তার অভিভাবক নও, তোমার কাছে প্রস্তাব— চন্দ্রবাবু। আমি যে তোমার অভিভাবক, এই পড়ে দেখো— নির্মলা। ( পত্র পড়িয়া রক্তিমমুখে ) এ হতেই পারে না। চন্দ্রবাবু। আমি তাকে কী বলব। নির্মলা । বোলো, কোনোমতে হতেই পারে না । চন্দ্রবাবু। কেন নিৰ্মল,তুমি তো বলছিলে কুমারব্রত-পালনের নিয়ম সভা হতে উঠিয়ে দিতে তোমার আপত্তি নেই । নির্মলা । তাই বলেই কি যে প্রস্তাব করবে তাকেই— চন্দ্রবাবু। পূর্ণবাবু তো যে-সে নয়, অমন ভালো ছেলে— নির্মলা। মামা, তুমি এ-সব বিষয়ে কিছুই বোঝ না, তোমাকে বোঝাতে পারবও না— আমার কাজ আছে । [ প্রস্থানোস্থ্যম মামা, তোমার পকেটে ওটা কী উচু হয়ে আছে। চন্দ্রবাবু। ( চমকিয়া উঠিয়া) ই ই, ভুলে গিয়েছিলেম, বেহার আজ সকালে তোমার নামে লেখা একটা কাগজ আমাকে দিয়ে গেছে— নির্মলা । ( তাড়াতাড়ি কাগজ লইয়া ) দেখো দেখি মামা, কী অন্যায়, অবলাকান্তবাবুর লেখাটা সকালেই এসেছে, আমাকে দাও নি! আমি ভাবছিলেম তিনি হয়তো ভূলেই গেছেন। ভারী অন্যায়। চন্দ্রবাবু। অন্যায় হয়েছে বটে। কিন্তু, এর চেয়ে ঢের বেশি অষ্ঠায় ভুল আমি প্রতি দিনই করে থাকি ফেনি– তুমিই তো আমাকে প্রত্যেক বার মাপ করে প্রশ্রয় দিয়েছ।